ফ্রান্সে পার্লামেন্ট নির্বাচন
প্রথম ধাপে কট্টর ডানপন্থিদের কাছে হারতে যাচ্ছে ম্যাক্রোঁর দল
ফ্রান্সে প্রথম ধাপের নির্বাচনের ভোট শেষ হয়েছে। এখন পর্যন্ত পাওয়া খবর অনুযায়ী, ডানপন্থীরাই ভালো অবস্থানে রয়েছে। ফলে ফরাসি রাজনীতিতে তাদের আধিপত্য অনেকটা নিশ্চিত এবং তারাই ক্ষমতার কেন্দ্রে পৌঁছে যাচ্ছে। কট্টর ডানপন্থি মেরিন লে পেনের অভিবাসন বিরোধী ন্যাশনাল র্যালির (আরএন) সমর্থকরা ইতোমধ্যেই জয়ের উল্লাস শুরু করে দিয়েছেন। মেরিন লে পেন এর আগে তার সমর্থকদের বলেছেন যে, প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁর দল নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।
বুথফেরত জরিপ বলছে, প্রথম ধাপের নির্বাচনে ৩৩ দশমিক ২ শতাংশ ভোট পেয়ে শীর্ষ স্থানে থাকবে মেরিন লে পেনের কট্টর ডানপন্থী দল ন্যাশনাল র্যালি (আরএন)। অপরদিকে ম্যাক্রোঁর জোট ২১ শতাংশ ভোট পেতে যাচ্ছে। এছাড়া বামপন্থি দলগুলোর জোট পাচ্ছে প্রায় ২৮ দশমিক ১ শতাংশ ভোট।
এদিকে জয় অনেকটা নিশ্চিত জেনেই আরএন পার্টির ২৮ বছর বয়সী নেতা জর্ডান বারডেলা তার সমর্থকদের উদ্দেশে বলেন, যদি ফ্রান্সের জনগণ আমাকে ভোট দেন তবে আমি আপনাদের প্রধানমন্ত্রী হতে চাই আমি।
এর আগে ফ্রান্সের পার্লামেন্ট নির্বাচনে কট্টর ডানপন্থিরা প্রথম ধাপের নির্বাচনে কখনোই জয়লাভ করতে পারেনি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর প্রথম কোনো ডানপন্থি দল হিসেবে হয়তো তারাই ফ্রান্সের ক্ষমতায় আসতে যাচ্ছে। দেশটির প্রবীণ ভাষ্যকার বলেছেন, এটা সম্ভবত কোনো ঐতিহাসিক ঘটনা হতে যাচ্ছে।
পার্লামেন্টের ৫৭৭ আসনের মধ্যে ২৮৯টিতে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা চান মেরিন লে পেন এবং জর্ডান বারডেলা। দ্বিতীয় দফার ভোট হলেই স্পষ্ট হবে যে, তারা আসলে কতটি আসনে জয়লাভ করবেন। আগামী রোববার দ্বিতীয় দফার ভোট অনুষ্ঠিত হবে। সে পর্যন্ত অপেক্ষা করতেই হচ্ছে।
তবে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলে বিপাকে পড়বে আরএন পার্টি। ফলে অভিবাসন, ট্যাক্স কমানো এবং আইনশৃঙ্খলার বিষয়ে তাদের যেসব পরিকল্পনা তা বাস্তবায়ন করাও কঠিন হয়ে পড়বে।
ফ্রান্সের স্থানীয় সময় রোববার সকাল ৬টা থেকে শুরু হয় ভোটগ্রহণ। ছোট শহরগুলোতে ভোট শেষ হয়েছে বিকেল ৪টায় এবং বড় শহরগুলোতে সন্ধ্যা ৬ টায়। এবারের নির্বাচনে প্রায় ৪ কোটি ৯০ লাখ ভোটার ভোট দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
আগাম এই নির্বাচন নিয়ে ম্যাক্রোঁর মিত্রদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। ২০২৭ সালের আগে পার্লামেন্ট নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল না। কিন্তু ইউরোপিয়ান পার্লামেন্ট নির্বাচনে ডানপন্থীদের অগ্রগতিতে শঙ্কিত হয়ে নিজেদের কর্ত্বত্ব টিকিয়ে রাখতেই আগাম নির্বাচনের ডাক দেন মাক্রোঁ।
দেশটিতে দীর্ঘদিনের ইতিহাস বলছে, ভোটাররা কট্টর ডানপন্থিদের আগে বেছে নেয়নি। কিন্তু এবার পুরো পরিস্থিতিই পাল্টে গেছে। দেশটিতে জ্বালানির দাম বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন ইস্যুতে ডানপন্থিদের প্রতিই সমর্থন দেখাচ্ছেন ভোটাররা।
- আরও পড়ুন:
- ফ্রান্সে আগাম নির্বাচনের ঘোষণা ম্যাক্রোঁর
- গুপ্তচরবৃত্তির দায়ে ফরাসি নাগরিককে গ্রেফতার করলো রাশিয়া
ভোটের আগে ডানপন্থিরা আশ্বাস দিয়েছেন যে, জ্বালানির ওপর ভ্যাট কমানো হবে এবং ৩০ বছরের কম বয়সীরা আয়কর থেকে মুক্ত হবেন। প্রথম দফার ভোটে ইতোমধ্যেই ন্যাশনাল র্যালির ৩৯ সংসদ সদস্য অর্ধেকেরও বেশি ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। আর বামপন্থী নিউ পপুলার ফ্রন্টের পক্ষে নির্বাচিত হয়েছেন ৩২ জন।
এদিকে শত শত বামপন্থী ভোটারকে প্যারিসের প্লেস দে লা রিপাবলিক এ জড়ো হতে দেখা গেছে। তারা আরএন পার্টির সাফল্যে ক্ষোভ এবং হতাশা প্রকাশ করেছেন।
টিটিএন