২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্ব অর্থনীতিতে দাপট দেখাবে যেসব দেশ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০২:৪১ পিএম, ২৪ জুন ২০২৪
ছবি সংগৃহীত

২০৫০ সালের মধ্যে শীর্ষ অর্থনীতির তালিকায় থাকা দেশগুলো আগামী দিনের বৈশ্বিক অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (ওইসিডি) এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী জনসংখ্যা ৯০০ কোটি ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ফলে জ্বালানি ও খাদ্য উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রাকৃতিক সম্পদের ওপরও চাপ বাড়তে পারে।

বিশ্বের বৃহত্তম ২৫টি খাদ্য কোম্পানির আয়ের দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে যে, সাম্প্রতিক সময়ে মন্দা থাকা সত্ত্বেও ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বে জিডিপি প্রায় চারগুণ হবে বলে পূর্বাভাস পাওয়া যাচ্ছে। তবে চীন এবং ভারতে জিডিপি বৃদ্ধির হার আগামী কয়েক দশক ধরে হ্রাস পাবে। অপরদিকে আফ্রিকা মহাদেশে ২০৩০ এবং ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী সর্বোচ্চ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার অর্জনের পূর্বাভাস পাওয়া গেছে।

বিশ্বব্যাপী জ্বালানির চাহিদাও ৮০ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। তবে বৈশ্বিক জ্বালানির মিশ্রণ অনেকাংশে অপরিবর্তিত থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে। জীবাশ্ম জ্বালানি এখনও প্রায় ৮৫ শতাংশ, নবায়নযোগ্য জ্বালানি মাত্র ১০ শতাংশ এবং অবশিষ্টাংশ পারমাণবিক শক্তি হিসেবে রয়েছে।

ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্যচাহিদা মেটাতে বিশ্বব্যাপী খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে হবে। এতে আগামী দশকে কৃষিজমির চাহিদা বেড়ে যাবে। চীন এবং ভারতে বয়স্ক জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। সে কারণে ২০৫০ সালের মধ্যে চীনের কর্মশক্তি হ্রাস পাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কিন্তু সব কিছুর পরেও চীনই হবে বিশ্বের শীর্ষ অর্থনীতির দেশ। বিশ্বের জনসংখ্যার প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষই ততদিনে শহরে বসবাস করবে।

গবেষণা সংস্থা পিডব্লিউস ‘র সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদন অনুসারে, ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হবে চীন, যা বিশ্বব্যাপী জিডিপির প্রায় ২০ শতাংশে অবদান রাখবে। ক্রয়ক্ষমতার সমতার (পিপিপি) ক্ষেত্রে চীন ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হয়েছে। ২০৩০ সালের আগেই দেশটি বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি হিসেবে আবির্ভূত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে ২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্বের জিডিপিতে ইইউর অবদান ১০ শতাংশের নিচে নেমে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, চীনের পর ভারত ২০৫০ সালের মধ্যে তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হবে। চীন এবং ভারত উভয়ই বর্তমান বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

চীনের অবিস্মরণীয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রকৃতপক্ষে মধ্যম আয়ের দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সফল উন্নয়নের একটি।

২০১৬ থেকে ২০৫০ সালের মধ্যে উদীয়মান সেভেন বা ই৭ অর্থনীতির দেশগুলোর তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ দ্রুত বৃদ্ধি পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এছাড়া ভিয়েতনাম, ভারত এবং বাংলাদেশ দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশগুলোর তালিকায় থাকবে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।

অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (ওইসিডি) একটি প্রতিবেদন পূর্বাভাস দিয়েছে যে, আফ্রিকা মহাদেশ ২০৩০ থেকে ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী সর্বোচ্চ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে যাচ্ছে। এছাড়া পোল্যান্ড ইউরোপীয় ইউনিয়নের দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

অপরদিকে ব্রাজিল, নাইজেরিয়া এবং তুরস্কের মতো দেশগুলোতে সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও তারা দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করতে ইচ্ছুক দেশগুলোর জন্য যথেষ্ট সুযোগ-সুবিধা উপস্থাপন করছে। ফলে এই দেশগুলোতে উল্লেখযোগ্য উন্নয়নের সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে।

এই প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য উদীয়মান বাজার তৈরিতে বিভিন্ন দেশের সরকারকে সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি, অর্থনীতির বৈচিত্র্যকরণ এবং রাজনৈতিক ও আইনি প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করতে কাঠামোগত সংস্কার বাস্তবায়ন করতে হবে।

২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বের শীর্ষ অর্থনীতির দেশ হতে যাওয়া চীনের জিডিপি ৪২ দশমিক ৯৬ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে এবং ২০৩০ সালের আগে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি হিসাবে আবির্ভূত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই সময়ের মধ্যে দেশটির জনসংখ্যা ১৩১ কোটিতে পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এ তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে থাকবে ভারত। দেশটির জিডিপি ৩৮ দশমিক ৬৮ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে।

এছাড়া তৃতীয় অবস্থানে থাকবে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির জিডিপি হবে ২৬ দশমিক ৫৮ ট্রিলিয়ন ডলার।

এই তালিকার চতুর্থ অবস্থানে থাকবে ইন্দোনেশিয়া, ৫ম অবস্থানে রাশিয়া, ষষ্ঠ অবস্থানে জাপান, সপ্তম জার্মানি, অষ্টম তুরস্ক, ৯ম যুক্তরাজ্য এবং ১০ম স্থানে থাকবে ব্রাজিল। এরপরই বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হিসেবে জায়গা করে নেবে মিশর, ইথিওপিয়া, ইতালি, অস্ট্রেলিয়া, স্পেন, সৌদি আরব, পাকিস্তান, পোল্যান্ড এবং মিয়ানমার।

সূত্র: ইনসাইডার মানকি

টিটিএন/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।