মোদীর নতুন মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়লো যেসব পরিচিত মুখ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৬:০০ পিএম, ১০ জুন ২০২৪
রোববার (৯ জুন) রাতে ভারতের নতুন মন্ত্রিসভার ৩০ জন পূর্ণমন্ত্রী ও ৪১ জন প্রতিমন্ত্রী শপথ নেন/ ছবি: এএফপি

তৃতীয় বার দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। শপথ নিয়েছেন নতুন মন্ত্রিসভার ৩০ জন পূর্ণমন্ত্রী ও ৪১ জন প্রতিমন্ত্রীও (পাঁচজন স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্তসহ)। তবে এবারের মন্ত্রিসভায় বাদ পড়লেন কিছু চেনা মুখ।

রোববার (৯ ‍জুন) শপথগ্রহণ করার আগে সকালে ৭, লোককল্যাণ মার্গের বাড়িতে এনডিএ’র বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্যকে চায়ের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন মোদী। সেখানেও দেখা যায়নি নতুন মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়াদের। অথচ আগের মন্ত্রিসভায় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পেয়েছিলেন তারা।

জেনে নেওয়া যাক মোদীর তৃতীয় মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়া কয়েকটি পরিচিত নাম...

স্মৃতি ইরানি

বাদ পড়াদের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে স্মৃতি ইরানিকে। ২০১৪ সালে মোদী যখন প্রথম সরকার গঠন করেন, তখন হিন্দি ধারাবাহিকের জনপ্রিয় অভিনেত্রী স্মৃতি ইরানি হয়ে উঠেছেন পুরোদস্তুর রাজনীতিক। ২০১৪ সালে স্মৃতি ছিলেন মানব সম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী।

স্মৃতি ইরানি

২০১৯ সালে দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন মোদী। সে বছর আমেঠি থেকে বিজেপি প্রার্থী হয়ে দাঁড়িয়ে কংগ্রেসের রাহুল গান্ধীকে বিপুল ভোটে হারিয়েছিলেন স্মৃতি। সেবারও তিনি মোদীর মন্ত্রিসভায় জায়গা করে নেন এবং নারী ও শিশু উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ভারপ্রাপ্ত হন। পরে সংখ্যালঘুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয় স্মৃতির কাঁধে।

২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের লড়াইয়ে আবারও আমেঠি আসন থেকে বিজেপি প্রার্থী হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন স্মৃতি। এবার তার বিরুদ্ধে রাহুল গান্ধী নন, কংগ্রেসের প্রার্থী হয়ে লড়েছিলেন কিশোরীলাল শর্মা। আর তাতেই ভরাডুবি ঘটে স্মৃতির। আমেঠি থেকে এক লাখেরও বেশি ভোটের ব্যবধানে স্মৃতিকে হারিয়ে দেন কিশোরীলাল। নির্বাচনে হারের পর মন্ত্রসভা থেকেও হারিয়ে গেলেন বিজেপির এই নেত্রী।

অনুরাগ ঠাকুর

এদিকে, হিমাচল প্রদেশের হামিরপুর কেন্দ্র থেকে লোকসভা নির্বাচনে পরপর পাঁচবার জিতেছেন অনুরাগ ঠাকুর। এবারও কংগ্রেস প্রার্থী সতপল রায়জাদাকে প্রায় দু’লক্ষের কাছাকাছি হারিয়েছেন তিনি। কিন্তু মন্ত্রীসভায় রাখা হয়নি তাকে। ২০১৯ সালের মন্ত্রিসভায় ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব সামলানোর পাশাপাশি তথ্য এবং সম্প্রচার মন্ত্রী হিসাবেও দায়িত্ব সামলেছিলেন তিনি। কিন্তু ২০২৪ সালের মন্ত্রিসভায় দেখা গেল না তাঁকে।

অনুরাগ ঠাকুর/ ছবি: বিজনেস স্টান্ডার্ড

রাজীব চন্দ্রশেখর

রাজীব চন্দ্রশেখর

২০১৯ সালে প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন রাজীব চন্দ্রশেখর। তার দায়িত্বে ছিল ইলেকট্রনিক্স ও তথ্য-প্রযুক্তি, জলশক্তি মন্ত্রণালয়। এবার লোকসভা নির্বাচনে তিরুঅনন্তপুরম আসন থেকে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। কংগ্রেস প্রার্থী শশী থারুরের কাছে ১৬ হাজার ভোটে হেরেছেন তিনি। মোদীর তৃতীয় মন্ত্রিসভায় রাখা হয়নি তাকে।

আর কে সিং

আর কে সিং

মোদীর দ্বিতীয় মন্ত্রিসভায় প্রতিমন্ত্রী (স্বাধীন) হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন আর কে সিংহ। কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব ছিল তার উপর। মোদী ৩.০-এ আর দেখা পাওয়া গেল না তাঁর।

এবার বিহারের আরা আসন থেকে ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন আর কে সিং। কিন্তু সিপিআই (এমএল) প্রার্থী সুদামা প্রসাদের কাছে ৬০ হাজার ভোটে হেরে যান তিনি।

পুরুষোত্তম রূপালা

মোদী ২.০ অর্থাৎ দ্বিতীয় মন্ত্রিসভায় মৎস্য, পশুপালন মন্ত্রণালয়ের ভার পেয়েছিলেন পুরুষোত্তম রূপালা। কিন্তু তৃতীয় মন্ত্রিসভায় জায়গা হয়নি তার। অথচ গুজরাটের রাজকোট কেন্দ্র থেকে কংগ্রেসের পরেশ ধনানিকে চার লাখেরও বেশি ভোটে হারিয়েছেন তিনি।

পুরুষোত্তম রূপালা

মূলত নির্বাচনী প্রচারের সময় ক্ষত্রীয়দের নিয়ে মন্তব্য করে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন পুরুষোত্তম। উত্তর গুজরাট ও সৌরাষ্ট্রের ক্ষত্রীয়দের রোষের মুখে পড়েন তিনি। পরে অবশ্য ক্ষমাও চেয়ে নিয়েছিলেন তিনি। শোনা যাচ্ছে, বিতর্কে জড়িয়ে পড়ার কারণেই নাকী তৃতীয় মন্ত্রিসভা থেকে পুরুষোত্তমকে বাদ দিয়েছেন মোদী।

নারায়ণ রানে

২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে মহারাষ্ট্রের রত্মগিরি-সিন্ধুদুর্গ কেন্দ্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন নারায়ণ রানে। শিবসেনার (ইউবিটি) বিনায়ক রউতকে ৪৭ হাজারের সামান্য বেশি ভোটে হারিয়েছেন তিনি।

নারায়ণ রানে

মোদীর দ্বিতীয় মন্ত্রিসভায় অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন নারায়ণ। কিন্তু তৃতীয় মন্ত্রিসভায় আর দেখা গেল না তাঁকে।

এবার এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি বিজেপি। তাই সরকার গড়তে এনডিএ’র শরিক দলগুলোর উপরে অনেকাংশে নির্ভর করতে হচ্ছে পদ্মশিবিরকে। তাই শরিক দলগুলো কোন কোন মন্ত্রিত্ব পাচ্ছে, সেদিকে নজর রয়েছে সবার।

বিজেপি সূত্রে খবর, স্বরাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা, অর্থ, শিক্ষা এবং সংস্কৃতির মতো ‘গুরুত্বপূর্ণ’ মন্ত্রণালয় নিজেদের হাতেই রাখতে পারে তারা। তবে অন্য একটি সূত্র বলছে, ‘বিগ ফোর’ মন্ত্রণালয়ের মধযে থেকে কয়েকটির দাবি জানাতে পারে জোট শরিকরা। তবে বিজেপি সূত্রে খবর, অন্য গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটি দেওয়া হতে পারে শরিক দল চন্দ্রবাবু নায়ডুর টিডিপি, নীতীশ কুমারের জেডিইউ, চিরাগ পাসোয়ানের এলজেপি (আর), একনাথ শিন্ডের শিবসেনা, এইচডি দেবগৌড়ার জেডিএস ও জয়ন্ত চৌধরির আরএলডিকে।

মোদীর মন্ত্রিসভার সদস্য হিসেবে রোববার শপথ নেওয়া ৩০ জন পূর্ণমন্ত্রীর মধ্যে বিজেপির ২৫ জন। তাদের মধ্যে গুজরাট থেকে নির্বাচিত রাজ্যসভা সদস্য এস জয়শঙ্কর, সাকিন তামিলনাড়ুর নির্মলা সীতারামন, হিমাচল প্রদেশের নেতা ও দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডা রয়েছেন। রয়েছেন রাজস্থানের অশ্বিনী বৈষ্ণব, যিনি উড়িষ্যা থেকে নির্বাচিত রাজ্যসভা সদস্য, পাঞ্জাবের হারদীপ সিং পুরী, যিনি উত্তরপ্রদেশ থেকে নির্বাচিত রাজ্যসভা সংসদ।

লোকসভা সদস্যদের মধ্যে উত্তরপ্রদেশের রাজনাথ সিং, গুজরাটের অমিত শাহ, মনসুখ মাণ্ডবীয়, সিআর পাটিল, মহারাষ্ট্রের নিতিন গডকড়ি, পীযুশ গয়াল, আসামের সর্বানন্দ সোনোয়াল, কর্ণাটকের প্রহ্লাদ জোশি, হরিয়ানার মনোহরলাল খট্টর, উড়িষ্যার ধর্মেন্দ্র প্রধান, জুয়েল ওরাও, মধ্যপ্রদেশের বীরেন্দ্র কুমার, জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া, শিবরাজ সিং চৌহান, রাজস্থানের ভূপেন্দ্র যাদব, গজেন্দ্র সিং শেখাওয়াত, বিহারের গিরিরাজ সিং, ঝাড়খণ্ডের অন্নপূর্ণা দেবী, তেলঙ্গানার জি কিসান রেড্ডি।

সহযোগী দলের পাঁচ পূর্ণমন্ত্রীর তালিকায় তেলুগু দেশম পার্টির (টিডিপি) কিঞ্জারাপু রামমোহন নায়ডু, জনতা দল ইউনাইটেডের (জেডিইউ) রাজীবরঞ্জন (লল্লন) সিং, জনতা দল সেকুলারের (জেডিএস) এইচডি কুমারস্বামী, লোক জনশক্তি পার্টি রামবিলাসের (এলজেপি) চিরাগ পাসোয়ান, হিন্দুস্থান আওয়াম মোর্চার (হাম) জিতনরাম মাঝি রয়েছেন।

সহযোগী দলের ছয়জন প্রতিমন্ত্রীর মধ্যে শিবসেনার প্রতাপরাও যাদব, রাষ্ট্রীয় লোকদলের (আরএলডি) জয়ন্ত চৌধরি, রিপাবলিকান পার্টি অব ইন্ডিয়া অঠওয়ালের (আরপিআই-এ) রামদাস অঠওয়ালে, জেডিইউ’র রামনাথ ঠাকুর, আপনা দলের (সোনেলাল) অনুপ্রিয়া প্যাটেল ও টিডিপির চন্দ্রশেখর পেম্মাসানি রয়েছেন।

এদিকে, বিজেপি থেকে প্রতিমন্ত্রী হয়েছেন ৩৫ জন। তাদের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের শান্তনু ঠাকুর, সুকান্ত মজুমদার ছাড়াও রয়েছেন জম্মু ও কাশ্মীরের জিতেন্দ্র সিং, রাজস্থানের অর্জুন রাম মেঘওয়াল, ভগীরথ চৌধরি, মহারাষ্ট্রের মুরলীধর মোহল, উত্তরপ্রদেশের জিতিন প্রসাদ, পঙ্কজ চৌধরি, এসপি সিং বঘেল, কীর্তিবর্ধন সিং, বিএল বর্মা, কমলেশ পাসোয়ান, গোয়ার শ্রীপদ নায়েক, দিল্লির হর্ষ মালহোত্রা, অন্ধ্রপ্রদেশের ভূপতিরাজু শ্রীনিবাস বর্মা, ছত্তিসগড়ের তোখন শাহু, হরিয়ানার কৃষ্ণপাল গুজ্জর।

বিজেপির প্রতিমন্ত্রীর মধ্যে আরও রয়েছেন রাও ইন্দ্রজিৎ সিং, আসামের পবিত্র মার্গেরিতা, বিহারের নিত্যানন্দ রাই, সতীশচন্দ্র দুবে, কর্নাটকের ভি সোমান্না, শোভা কারান্ডলাজে, কেরালার সুরেশ গোপী, তামিলনাড়ুর এল মুরুগান, উত্তরাখণ্ডের অজয় টামটা, মহারাষ্ট্রের রক্ষা খড়সে, তেলেঙ্গানার বান্দি সঞ্জয় কুমার, ঝাড়খণ্ডের সঞ্জয় শেঠ, মধ্যপ্রদেশের দুর্গাদাস উইকে ও সাবিত্রী ঠাকুর, গুজরাটের নিমুবেন বাহ্মনিয়া। অন্যদিকে, পাঞ্জাবের রভনীত সিং বিট্টু ও কেরালার জর্জ কুরিয়েন সংসদের কোনো কক্ষের সদস্য না হয়েও মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পেয়েছেন।

সূত্র: এনডিটিভি ও অন্যান্য

এসএএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।