জেলে থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কি লড়া যায়?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৮:১০ পিএম, ০২ জুন ২০২৪
ডোনাল্ড ট্রাম্প/ ফাইল ছবি/ এএফপি

যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে নজিরবিহীন এক ঘটনা ঘটেছে। দেশটির সাবেক ও বর্তমান প্রেসিডেন্টদের মধ্যে প্রথমবারের মতো ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।

বেশিরভাগ বিশ্লেষকের মতে বৃহস্পতিবার (৩০ মে) ম্যানহাটনের আদালত ট্রাম্পকে যে ৩৪টি ফৌজদারি অভিযোগে অভিযুক্ত করেছেন, তার বিরুদ্ধ আপিল করবেন তিনি। সেই প্রক্রিয়া হয়তো নভেম্বরের নির্বাচনের পর পর্যন্তও চলবে। এমনকি, এসব রায় নিশ্চিত হলেও হয়তো তার সম্ভাব্য সাজা হতে পারে জরিমানা কিংবা পর্যবেক্ষণে থাকা।

তবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষেত্রে সবচেয়ে খারাপ যেটি হতে পারে, তা হলো কারাদণ্ড। আর এই মুহূর্তে সবার মনে যে প্রশ্নটি সবচেয়ে বেশি উঠছে, তা হলো কারাগারে গেলে ট্রাম্প কি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন?

আরও পড়ুন: 

ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের মার্কিন ইতিহাসের অধ্যাপক ইওয়ান মর্গানের মতে কারাগারে থাকলেও নির্বাচনে অংশ নিতে কোনো বাধার মুখে পড়বেন না ট্রাম্প।

কীভাবে দণ্ডপ্রাপ্ত অপরাধী হোয়াইট হাউজের জন্য লড়তে পারেন?

প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীদের জন্য যেসব মার্কিন আইনি নিয়মকানুন রয়েছে, তা ১৭৮৯ সালের পর আর পরিবর্তন হয়নি। ওই বছর জর্জ ওয়াশিংটন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।

অধ্যাপক ইওয়ান মর্গান বিবিসিকে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের আইনে শুধু একটি যোগ্যতার কথাই বলা আছে। তা হলো, প্রার্থীকে যুক্তরাষ্ট্রে বা এর আওতাধীন ভূখণ্ডে জন্মগ্রহণ করতে হবে। সেজন্য হইচই হয়েছিল যে সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা সত্যিকার অর্থে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক কি না।

যুক্তরাষ্ট্রের আইনে আরও বলা আছে, প্রার্থীদের বয়স কমপক্ষে ৩৫ হতে হবে ও তাদেরকে অবশ্যই যুক্তরাষ্ট্রে কমপক্ষে ১৪ বছর বসবাস করতে হবে। গৃহযুদ্ধের পর আরেকটি বিধিনিষেধ যোগ করা হয়। সেটি হলো যারা যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে জড়াবে তারা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না।

আরও পড়ুন: 

কিন্তু সাজাপ্রাপ্ত অপরাধীরা যে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করতে পারবেন না, সে বিষয়ে কোনো নিয়ম-কানুন নেই। অধ্যাপক মর্গান মনে করেন, এর কারণ হলো যুক্তরাষ্ট্র এর আগে এমন পরিস্থিতিতে পড়েনি।

অধ্যাপক মর্গান বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের জন্ম হয়েছে বিপ্লবের মধ্য দিয়ে ও সে কারণে এমন সম্ভাবনা ছিল যে রাজতন্ত্র বিরোধী তৎপরতায় জড়িয়ে কেউ হয়তো জেল খেটেছেন। কারণ তখনো যুক্তরাষ্ট্র ব্রিটিশ কলোনি। দেশটির প্রতিষ্ঠাতারা ১৭৮৭ সালে সংবিধান প্রণয়ন করেছেন, যারা মূলত ব্রিটিশদের কাছে বন্দি ছিলেন। বিপ্লব সফল না হলে তারা হয়তো রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের দায়ে দোষী ও অপরাধী সাব্যস্ত হতেন।

‘এ কারণেই সংবিধান প্রণেতারা প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রার্থীতার উপরে কোনো বিধিনিষেধ আরোপ করতে চাননি। আর এই নীতির সুযোগে এখন পর্যন্ত তিনজন কারাগারে থেকে প্রেসিডেন্ট পদের জন্য প্রচারণা চালিয়েছেন। তারা হলেন ইয়ুজিন ভি ডেবস ১৯১২ ও ১৯২০ সালে প্রেসিডেন্ট পদের জন্য লড়েছিলেন।

আরও পড়ুন: 

দ্বিতীয় জন হলেন লিন্ডন লারুশ। তিনি ষড়যন্ত্র তত্ত্ব দিয়ে একটি রাজনৈতিক আন্দোলনকে প্রভাবিত করেছিলেন। তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারণা চালিয়েছিলেন জেলে থেকে।

অধ্যাপক মর্গান জানান, লারুশ কখনো ডেমোক্র্যাট হিসেবে আবার কখনো তৃতীয় কোনো দলের প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। তার নাম ১৯৭৬ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত প্রতিটি নির্বাচনের ব্যালটে ছিল। এটা ছিল তার শখ।

আর তৃতীয় জন হলেন ভিন্ন বিশ্বাসের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী মরমনের প্রতিষ্ঠাতা জোসেফ স্মিথ। কারাগারে বন্দি অবস্থায় ১৮৪৪ সালের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন তিনি। যদিও প্রচারণার সময় আততায়ীর গুলিতে নিহত হন স্মিথ।

সূত্র: বিবিসি

এসএএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।