এমপি আনোয়ারুলের লাশের টুকরোর সন্ধানে জোর তল্লাশি
ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারের লাশের টুকরোর সন্ধানে শুক্রবার জোর অভিযান চালানো হয়েছে পশ্চিমবঙ্গে। এদিন ১২ দিনের হেফাজতে থাকা জিহাদ হাওলাদারকে নিয়ে ভাঙড়ের কৃষ্ণমাটি এলাকায় অভিযান চালায় সিআইডি।
শুক্রবার (২৪ মে) জিহাদকে উত্তর চব্বিশ পরগনার বারাসত জেলা ও দায়রা আদালতে তোলা হয়। এদিন প্রধান বিচার বিভাগীয় হাকিম শুভঙ্কর বিশ্বাস তাকে ১২ দিনের সিআইডি হেফাজতের নির্দেশ দেন।
আদালতের আদেশের পর জিহাদকে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে তার বক্তব্য যাচাইয়ের পাশাপাশি তাকে সঙ্গে নিয়ে খুন হয়ে যাওয়া সংসদ সদস্যের শরীরের অঙ্গগুলো উদ্ধার করা, এই খুনের ঘটনায় আর কারা জড়িত- এই সমস্ত বিষয়ে রহস্য উন্মোচন করাই এখন গোয়েন্দাদের প্রধান লক্ষ্য।
শুক্রবার বিকেলে আদালত থেকে অভিযুক্ত জিহাদকে নিয়ে যাওয়া হয় ভাঙড়ের কৃষ্ণমাটি জিরানগাছা খাল ও পার্শ্ববর্তী এলাকায়। সিআইডি কর্মকর্তাদের পাশাপাশি পোলেরহাট থানার পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে শুরু হয় তল্লাশি অভিযান। কৃষ্ণমাটি এলাকায় খালে দুর্যোগ মোকাবিলা দল নামানো হয়, পাশাপাশি লাশের অংশ খুঁজতে ড্রোনও ব্যবহার করা হচ্ছে।
এরই মধ্যে সন্ধ্যা নামার আগেই একটি থলে উদ্ধারকে কেন্দ্র করে চাঞ্চল্য ছড়ায়। দুর্যোগ মোকাবিলা বাহিনীর সদস্যরা ওই থলেটি একটি জঙ্গল থেকে উদ্ধার করার পর রটনা ছড়ায় ওই থলের মধ্যে এমপি আনারের লাশের টুকরো থাকতে পারে। যদিও তার ভেতর থেকে সন্দেহজনক কিছুই পাওয়া যায়নি।
আরও পড়ুন
- এমপি আনোয়ারুলের সঙ্গে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব ছিল শিমুলের
- এমপি আনার হত্যা: তিন আসামি ৮ দিনের রিমান্ডে
- যেভাবে এমপি আনারের খণ্ডিত লাশ নিয়ে বের হন আমানুল্লাহ-জিহাদ
ভাঙড়ের কৃষ্ণমাটি জিরানগাছা খালটি পরিষ্কার করা হয়েছে। সিআইডি সূত্র মারফত জানা গেছে, শনিবার (২৫ মে) জিহাদের দেখানো জায়গায় জাল দিয়ে খোঁজা হবে এমপি আনোয়ারুল আজীম আনারের টুকরো করা দেহাংশ।
অভিযুক্ত জিহাদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৬৪ (হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ), ৩০২ (অপরাধমূলক নরহত্যা), ২০১ (তথ্য-প্রমাণ লোপাট) এবং ১২০বি (অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র)- এই চার জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা দেওয়া হয়েছে। এই মামলায় সর্বোচ্চ রায় হিসেবে বিচারক আমৃত্যু যাবজ্জীবন বা মৃত্যুদণ্ড দিতে পারেন।
গত ১২ মে চিকিৎসার জন্য ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ থেকে চুয়াডাঙ্গার দর্শনার গেদে সীমান্ত দিয়ে ভারতে যান এমপি আনার। ওঠেন পশ্চিমবঙ্গে বরাহনগর থানার মণ্ডলপাড়া লেনে গোপাল বিশ্বাস নামে এক বন্ধুর বাড়িতে। পরদিন ডাক্তার দেখানোর কথা বলে বাড়ি থেকে বের হন। এরপর থেকেই রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ আনোয়ারুল আজীম।
বাড়ি থেকে বেরোনোর পাঁচদিন পরে গত ১৮ মে বরাহনগর থানায় আনোয়ারুল আজীম নিখোঁজের বিষয়ে একটি জিডি করেন বন্ধু গোপাল বিশ্বাস। এরপরও খোঁজ মেলে না তিনবারের এই সংসদ সদস্যের। বুধবার (২২ মে) হঠাৎ খবর ছড়ায়, কলকাতার পার্শ্ববর্তী নিউটাউন এলাকায় বহুতল সঞ্জীবা গার্ডেনস নামে একটি আবাসিক ভবনের বিইউ ৫৬ নম্বর রুমে আনোয়ারুল আজীম খুন হয়েছেন। ঘরের ভেতর পাওয়া গেছে রক্তের ছাপ। তবে ঘরে মেলেনি মরদেহ।
আরও পড়ুন
- আনোয়ারুল আজীমের লাশের সন্ধানে সিআইডির তল্লাশি
- জিহাদ হাওলাদারকে ১২ দিনের সিআইডি হেফাজতের নির্দেশ
- এমপি আনারের বন্ধু গোপালকে নিয়েও দানা বাঁধছে সন্দেহ
এ ঘটনায় বুধবার (২২ মে) ঢাকার শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন তার মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন। মামলার এজাহারে এমপির মেয়ে উল্লেখ করেন, ৯ মে রাত ৮টার দিকে আমার বাবা মানিক মিয়া অ্যাভিনিউর সংসদ সদস্য ভবনের বাসা থেকে গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহে যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হন। ১১ মে ৪টা ৪৫ মিনিটে বাবার সঙ্গে মোবাইলে ভিডিও কলে কথা বললে বাবার কথাবার্তায় কিছুটা অসংলগ্ন মনে হয়। এরপর বাবার মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন দিলে বন্ধ পাই।
১৩ মে আমার বাবার ভারতীয় নম্বর থেকে হোয়াটসঅ্যাপে একটি মেসেজ আসে। মেসেজে লেখা ছিল- ‘আমি হঠাৎ করে দিল্লি যাচ্ছি, আমার সঙ্গে ভিআইপি আছে। আমি অমিত শাহের কাছে যাচ্ছি। আমাকে ফোন দেওয়ার দরকার নেই। পরে ফোন দেবো।’ এছাড়া আরও কয়েকটি মেসেজ আসে। মেসেজগুলো বাবার মোবাইল ফোন ব্যবহার করে অপহরণকারীরা করে থাকতে পারে।’
এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, আমরা বিভিন্ন জায়গায় বাবার খোঁজখবর করতে থাকি। আমার বাবার কোনো সন্ধান না পেয়ে বাবার বন্ধু গোপাল বিশ্বাস কলকাতার বারানগর পুলিশ স্টেশনে সাধারণ ডায়েরি করেন। বাবাকে খোঁজাখুজি অব্যাহত রাখি। পরবর্তীসময়ে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানতে পারি অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিরা পূর্ব-পরিকল্পিতভাবে বাবাকে অপহরণ করেছে। বাবাকে সম্ভাব্য সব স্থানে খোঁজাখুঁজি করেও পাইনি।
ডিডি/বিএ