ভারত
নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেছেন ১০ হাজার মতুয়া: জাহাজ প্রতিমন্ত্রী
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) কার্যকর হওয়ার পর থেকেই ভারতের রাজনৈতিক মহলে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল কংগ্রেস প্রধান মমতা ব্যানার্জী তো দাবিই করে বসেছেন, সিএএতে আবেদন করলে নাগরিকত্ব চলে যাবে। এমন পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় জাহাজ প্রতিমন্ত্রী ও বিজেপির সংসদ সদস্য শান্তনু ঠাকুর দাবি করলেন, মতুয়া সম্প্রদায়ের ১০ হাজার মানুষ সিএএতে আবেদন করেছেন।
১৮তম লোকসভা নির্বাচনে এবার পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রে শান্তনু ঠাকুরকে প্রার্থী করেছে বিজেপি। সোমবার (৩০ এপ্রিল) ওই কেন্দ্রের অন্তর্গত গাইঘাটা এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণা শেষে গণমাধ্যমের প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী এই দাবি করেন।
তিনি বলেন, সিএএ মানুষের অধিকার। যারা বাংলাদেশ থেকে ভারতে এসেছেন, তারা ভারতের নয়, বাংলাদেশের নাগরিক। তাদের অবশ্যই ভারতীয় নাগরিকত্ব নিতে হবে, এটাই নিয়ম। পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল সরকার কী বলছে না বলছে, তাতে কিছু যায় আসে না।
আরও পড়ুন:
- নির্বাচনের আগে কেন সিএএ কার্যকর করলো মোদী সরকার?
- সিএএ মুসলিমদের জন্য ব্যাপক বঞ্চনা তৈরি করবে: যুক্তরাষ্ট্র
- সারা দুনিয়া চাপ দিলেও সিএএ থেকে সরবো না: মোদী
- অবশেষে ‘বিতর্কিত’ নাগরিকত্ব আইন কার্যকর করলো মোদী সরকার
‘আমরা মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষদের জন্য অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসংঘের পক্ষ থেকে পরিচয়পত্র করিয়ে দিচ্ছিলাম। কারণ এই মানুষগুলোর নাগরিকত্ব দরকার। যে কারণে আমি অনেক আগে থেকেই এই প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছিলাম। এই মুহূর্তে আমাদের ৫ লাখ সদস্য আছেন, যারা কার্ড হোল্ডার। তাদের আমরা সিএএতে আবেদন করাচ্ছি।’
শান্তনু ঠাকুর আরও বলেন, এরই মধ্যে অনলাইনে ১০ হাজার মতুয়া আবেদন করেছেন। যাদের আধার কার্ড বা রেশন কার্ড পেয়েছেন, তাদের কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু যারা পাননি, তাদের এই মতুয়া কার্ড দিয়ে আবেদন করানো হচ্ছে। যখন ফিজিক্যাল ভেরিফিকেশন হবে, তখন আমরা তাদের পরিচয় পর্ব করিয়ে দেবো। এরপর যারা নতুন করে আসবেন, তাদের জন্য আমরা শিবিরের আয়োজন করবো।
যদিও এই নাগরিকত্ব আইন নিয়ে তোপ দেগেছেন শান্তনু ঠাকুরের প্রধান প্রতিপক্ষ তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী বিশ্বজিৎ দাস। বিশ্বজিৎয়ের বক্তব্য, শান্তনু শুধু মিথ্যা কথা বলেন। এই পাঁচ বছরে এই একটা কাজই তিনি শিখেছেন। মতুয়া সম্প্রদায়ের একজন মানুষও সিএএতে আবেদন করেননি।
২০১৯ সালের মে মাসে দ্বিতীয়বারের মতো কেন্দ্রের ক্ষমতায় আসার পর, ওই বছরের ডিসেম্বর মাসেই সংসদে নতুন এই নাগরিকত্ব আইন পাস হয়। প্রায় চার বছর পর চলতি বছরের ১১ মার্চ বিজ্ঞপ্তি জারি করে গোটা দেশে সিএএ কার্যকর করে কেন্দ্রীয় সরকার।
আরও পড়ুন:
- গরমের মধ্যেও ছুটে বেড়াচ্ছেন মোদী, রোজ করছেন ৪ জনসভা
- আরব সাগরে ডুব দিলেন নরেন্দ্র মোদী
- মেঝেতে ঘুমাচ্ছেন মোদী, ডাবের পানি ছাড়া খাচ্ছেন না কিছুই
- নজরুলগীতি শেয়ার করে বাঙালির মন জেতার চেষ্টা মোদীর
এই আইনে বলা আছে, ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে যেসব অমুসলিম (হিন্দু, শিখ, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, জৈন, পার্শি) ধর্মীয় অত্যাচারের কারণে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন, তাদের ভারতীয় নাগরিকত্বের সনদ দেওয়া হবে।
এদিকে, এই প্রথম সিএএ’র প্রবল বিরোধিতা করা শুরু করেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের প্রধান ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী। তার দাবি, ধর্মের ভিত্তিতে করা এই আইন কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না।
এই আইন কার্যকর করার পরপরই মমতা দাবি করেছিলেন, নতুন আইনে আবেদন করলেই নাগরিকত্ব হারাতে হবে। সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হতে হবে। শুধু তাই নয়, আবেদনকারীদের ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। আর পাঁচ বছর পরে সেই সব মানুষকে নিজ দেশে প্রত্যার্পণ করা হবে।
যদিও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং থেকে শুরু করে বিজেপির শীর্ষ নেতারা বারবারই বলে আসছেন, এই আইন নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার নয় বরং নাগরিকত্ব দেওয়ার।
ডিডি/এসএএইচ