দুই জিম্মির ভিডিও প্রকাশ করেছে হামাস

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১:১৩ পিএম, ২৮ এপ্রিল ২০২৪
ছবি: এএফপি

সম্প্রতি একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে হামাস। এতে গাজায় আটকে রাখা দুই জিম্মিকে দেখা গেছে। তারা যে বেঁচে আছেন তার প্রমাণ পাওয়া গেছে। তবে ওই ভিডিও কত তারিখের সে বিষয়টি নিশ্চিত নয়। ভিডিওতে ওমরি মিরান নামের এক বন্দি বলছেন, তিনি ২০২ দিন ধরে আটকা আছেন আর কেইথ সিয়েজেল এই সপ্তাহের ছুটির দিনের কথা উল্লেখ করেছেন। ফলে ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ে ধারণ করা হয়েছে বলেই মনে হচ্ছে। খবর বিবিসির।

তাদের দুজনকেই গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ভূখণ্ডে হামাসের হামলার দিন জিম্মি করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। ভিডিওর প্রতিক্রিয়ায় তাদের পরিবারের সদস্যরা বলছেন, ওই দুজনের নিরাপদে ফিরে আসা নিশ্চিত করতে তারা লড়াই অব্যাহত রাখবেন।

একই সঙ্গে তারা জিম্মি মুক্তির জন্য নতুন চুক্তি করতে ইসরায়েল সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। নতুন ভিডিওটি এমন সময় প্রকাশ করা হলো যখন হামাস বলছে, তারা যুদ্ধবিরতির জন্য ইসরায়েলের নতুন প্রস্তাব পর্যালোচনা করে দেখছে। বন্ধ হয়ে যাওয়া আলোচনায় গতি আনতে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে মিশর ইসরায়েলে একটি দল পাঠিয়েছে।

এখনো আটক থাকা জিম্মিদের মুক্তির বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করে একটি চুক্তি হলে তা গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফাতে ইসরায়েলের পরিকল্পিত স্থল অভিযান বন্ধ করতে পারে বলে শনিবার আভাস দিয়েছেন ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

সিয়েজেল যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। তার স্ত্রী আভিভাসহ তাকে জিম্মি করা হয়েছিল। পরে নভেম্বরের যুদ্ধবিরতির সময় তার স্ত্রীকে মুক্তি দেয় হামাস। এক ভিডিওতে আভিভা বলেন, কেইথ, আমি তোমাকে ভালোবাসি, তোমার না ফেরা পর্যন্ত আমরা লড়াই চালিয়ে যাব।

এর আগে চলতি মাসের শুরুতে তিনি বিবিসিকে বলেন জিম্মিকারীরা একটি টানেলে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় নেওয়ার সময় কীভাবে এই দম্পতিকে এক পর্যায়ে ফেলে গিয়েছিল। ওই সাক্ষাতকারের সময় তিনি জানতেন না যে কেইথ তখনো জীবিত আছেন।

তার কন্যা ইলান বলেন, আজ বাবাকে দেখার পর এটাই আমাদের ওপর জোর দিচ্ছে যে কত তাড়াতাড়ি আমরা একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে পারবো এবং প্রত্যেককে বাড়িতে ফেরাতে পারবো। আমার দাবি দেশের নেতারা ভিডিওটি দেখুন এবং দেখুক তাদের বাবারা সহযোগিতার জন্য কাঁদছে।

তার আরেক কন্যা শির বলেন, আপনি যদি ভিডিওটি দেখে থাকেন, আপনি দেখেছেন যে আমার বাবা জানেন আমরা প্রতি সপ্তাহে সমাবেশ করছি এবং তিনি ও অন্য জিম্মিদের জন্য লড়াই করছি।

তেল আবিবে প্রতি সপ্তাহে যেই বিক্ষোভ হয় শনিবার সন্ধ্যায় জিম্মিদের মুক্তির দাবিতে সেই সমাবেশে ওমরি মিরানের বাবা দানি মিরান শ্লোগানে নেতৃত্ব দিয়েছেন। খুবই শক্তিশালী ভাষণ দিয়েছেন তিনি। এসময় তাকে আবেগপ্রবণ দেখাচ্ছিল। ভিডিওতে ছেলেকে দেখার উত্তেজনার বর্ণনা দিয়েছেন তিনি কারণ তিনি জেনেছেন যে, সম্ভবত সে জীবিত আছে।

কিন্তু তার ভাষণেও রাজনৈতিক উপাদান ছিল। তিনি সরাসরি সরকারের উদ্দেশ্যে কথা বলেছেন। বিশেষত ডানপন্থী জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন জিভির ও অর্থমন্ত্রী বেযালের সমটরিচ এর নাম উল্লেখ করে জিম্মি চুক্তির আহ্বান জানিয়েছেন।

তিনি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর প্রতি যে কোনো কার্যকর একটি চুক্তি অনুমোদনের আহবান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ইসরায়েলের মানুষ এবং বিশ্বের সবাই রক্তপাতের অবসান চায় এবং বিশেষ করে জনগণের দুর্ভোগের শেষ চায়।

আরও যে বিষয়টি উল্লেখযোগ্য তা হলো ওমরির বাবার ভাষণের আগে জিম্মিদের ভিডিও দেখানো হয় বড় পর্দায়। এটা খুবই অস্বাভাবিক একটি ঘটনা কারণ এ ধরনের ভিডিও সাধারণত টিভিতে দেখানো হয় না।

দ্যা হোস্টেজ ফ্যামিলিজ হেডকোয়ার্টার বলছে, সর্বশেষ ভিডিও হলো একটি পরিষ্কার প্রমাণ যে ইসরায়েল সরকারকে জিম্মিদের ফিরিয়ে আনার জন্য একটি চুক্তি করতে সব কিছুই করতে হবে।

এর আগে সপ্তাহের শুরুতে এ ধরনের আরেকটি ভিডিও দেখানো হয়েছিল যেখানে ইসরায়েলি-আমেরিকান জিম্মি হার্শ গোল্ডবার্গকে দেখানো হয়। ওই ক্লিপে তার বাম বাহুর একাংশ ছিল না। হামাসের হামলার সময় তার হাতের ওই অংশ উড়ে যায়। এর প্রতিক্রিয়ায় তার বাবা ও মা জিম্মি মুক্তিতে চুক্তির জন্য আরও দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান।

হামাসের প্রকাশ করা ভিডিওতে চাপের মুখে ৬৪ বছর বয়সী সিয়েজেল ও ৪৬ বছর বয়সী মিরান ইসরায়েল সরকারকে হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তি ও জিম্মিদের মুক্তির জন্য সম্মত হবার জন্য অনুরোধ করেন।

তিনি বলেন, আমি ২০২ দিন ধরে এখানে জিম্মি হয়ে আছি। এখানকার পরিস্থিতি অসন্তোষজনক, কঠিন এবং এখানে অনেক বোমা আছে। হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে সমঝোতায় পৌছাতে আলোচনা ব্যর্থ হওয়ার পর জিম্মিদের মুক্তির জন্য এখন পরোক্ষ আলোচনা চলছে।

আরও পড়ুন:

 

এখনো যারা জিম্মি হয়ে আছে তাদের মধ্যে থেকে ৪০ জনের মুক্তির বিনিময়ে ছয় সপ্তাহের যুদ্ধবিরতির যে প্রস্তাব ছিল তা হামাস প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা এর আগে বলছিল যে চুক্তি হলে তাতে যুদ্ধের স্থায়ী অবসান, গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার ও বাস্তুচ্যুতদের বিধিনিষেধ ছাড়া ঘরবাড়িতে ফেরার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত হতে হবে। আর ইসরায়েল বলছিল যে তারা গাজায় হামাসকে ধ্বংস করে জিম্মিদের মুক্ত করে আনবে।

টিটিএন

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।