হার্ভার্ড থেকে ইয়েল

ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভে উত্তাল যুক্তরাষ্ট্রের যেসব বিশ্ববিদ্যালয়

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৭:৪৩ পিএম, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাসে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ। ছবি: এএফপি

কয়েকদিন ধরেই ফিলিস্তিনের পক্ষে এবং ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে উত্তাল যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আন্দোলন থেকে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্কিত কোম্পানি এবং ব্যক্তিদের বয়কট করার আহ্বান জানানো হচ্ছে।

গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার জের ধরে গাজায় যে হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী, তাতে এখন পর্যন্ত ৩৪ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এমন প্রেক্ষাপটে মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উত্তেজনা ক্রমশ বাড়ছে।

এই বিক্ষোভ প্রথম শুরু হয়েছিল কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে। এরপর ধীরে ধীরে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।

আরও পড়ুন>>

লস অ্যাঞ্জেলস, ক্যালিফোর্নিয়া এবং আটলান্টায় বিভিন্ন ক্যাম্পাস থেকে বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের গ্রেফতার করা হয়েছে। টেক্সাসের অস্টিনে বিক্ষোভকারীদের আটক করতে নির্দেশ দিয়েছেন সেখানকার গভর্নর।

বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অন্তত ২৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনপন্থি ও ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভ চলছে।

কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটি
ফিলিস্তিনিদের পক্ষে সর্বপ্রথম বড় বিক্ষোভ হয় কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে। যেসব বিশ্ববিদ্যালকে ইহুদিবিদ্বেষের জন্য অভিযুক্ত করা হয়, তার মধ্যে কলম্বিয়া অন্যতম। গত সপ্তাহে কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির প্রেসিডেন্ট বিক্ষোভকারীদের ক্যাম্পাস থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য বললে ১০০’র বেশি বিক্ষোভকারীকে আটক করা হয়। এটি বিক্ষোভকে আরও উসকে দেয়। আটক শিক্ষার্থীদের মধ্যে ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতা ইলহান ওমরের কন্যাও রয়েছেন।

এমোরি ইউনিভার্সিটি
বৃহস্পতিবার সকালে আটলান্টায় কিছু বিক্ষোভকারী এমোরি ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে এসে তাঁবু খাটিয়ে বসে যান। তারা ইউনিভার্সিটির সঙ্গে সম্পর্কিত নন। তবে কর্তৃপক্ষ বলছে, পরবর্তীতে বহিরাগতদের সঙ্গে ইউনিভার্সিটি কমিউনিটির সদস্যরাও যোগ দেয়। বিক্ষোভকারীরা যখন সে স্থান ত্যাগ করতে অস্বীকৃতি জানায়, তখন কিছু বিক্ষোভকারীকে পুলিশ হেফাজতে নেয়।

আরও পড়ুন>>

ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া
সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ সেখানে কমেন্সমেন্ট অনুষ্ঠানে ইউনিভার্সিটিতে ভালো ফলাফল অর্জন করা একজন শিক্ষার্থীর ভাষণ বাতিল করে। পরবর্তীতে আগামী ১০ মে অনুষ্ঠিতব্য কমেন্সমেন্ট অনুষ্ঠানও বাতিল করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কমেন্সমেন্ট হলো এমন একটি অনুষ্ঠান যেটি আয়োজন করা হয় গ্র্যাজুয়েটদের সম্মান জানানোর জন্য। সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটি কমেন্সমেন্ট অনুষ্ঠান বাতিল করার পর ক্যাম্পাসে তীব্র ক্ষোভের সঞ্চার হয়। ওই অনুষ্ঠানে ৬৫ হাজার মানুষ অংশ নেওয়ার কথা ছিল।

ইউনিভার্সিটিতে ভালো ফলাফল অর্জনকারী এক শিক্ষার্থী সম্প্রতি ইসরায়েলবিরোধী একটি পোস্ট দিয়েছিলেন। এই শিক্ষার্থী একজন মুসলিম। তার ওই পোস্টকে ইহুদিবিদ্বেষী বলে অভিযুক্ত করা হচ্ছে। ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ বলছে, ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা নিয়ে হুমকি থাকার কারণে অনুষ্ঠানটি বাতিল করা হয়েছে। তবে কর্তৃপক্ষ সেই শিক্ষার্থীর পোস্টকে নিন্দা করেনি।
কিন্ত এই সিদ্ধান্ত ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলপন্থি উভয় শিক্ষার্থীদের ক্ষুব্ধ করেছে। এ অবস্থায় গত বুধবার লস এঞ্জেলেস পুলিশকে ডাকা হয়েছিল এবং তারা ৯৩ জনকে আটক করেছে।

ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস
পুলিশ বলছে, বুধবার রাতে অস্টিনে অবস্থিত ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাসে ৫৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। টেক্সাসের পাবলিক সেইফটি ডিপার্টমেন্টের সৈন্যদের দেখা গেছে, তারা সুসজ্জিত হয়ে তাদের বাইক দিয়ে বিক্ষোভকারীদের পেছনের দিকে ঠেলছে।

টেক্সাসের গভর্নর গ্রেগ অ্যাবট রিপাবলিকান দলের একজন সদস্য। তিনি পাবলিক সেইফটি ডিপার্টমেন্টের সৈন্যদের তলব করেছিলেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ‘এক্স’ প্লাটফর্মে তিনি লিখেছেন, বিক্ষোভকারীরা ইহুদিবিদ্বেষী এবং তাদের বহিষ্কার করা উচিত।

তবে টেক্সাসের ন্যাশনাল গার্ড এক বিবৃতিতে অস্বীকার করেছে, বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের গ্রেফতার করার জন্য তারা সৈন্য জড়ো করেছিল।

আরও পড়ুন>>

নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটি
গত সোমবার নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ম্যানহাটন ক্যাম্পাসে কিছু বিক্ষোভকারী তাৎক্ষণিকভাবে তাবু টানিয়ে বসে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে পুলিশ ১২০ জনকে গ্রেফতার করে। এদের মধ্যে চারজনকে বিরুদ্ধে অবৈধ অনুপ্রবেশের জন্য অভিযুক্ত করা হয়েছে।

হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি
বুধবার হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি চত্বরে একদল শিক্ষার্থী অস্থায়ী তাঁবু খাটিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ হার্ভার্ড আন্ডারগ্র্যাজুয়েটস প্যালেস্টাইন সলিডারিটি কমিটির কার্যক্রম স্থগিত করে। তবে পুলিশ ডেকে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন হার্ভার্ডের প্রেসিডেন্ট।

অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়
যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন জায়গায় আরও অন্তত ২৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ হয়েছে। এছাড়া কিছু হাইস্কুলেও বিক্ষোভ হয়েছে।

বৃহস্পতিবার সকালে বোস্টনের এমারসন ইউনিভার্সিটি থেকে ১০৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস বাতিল করতে হয়েছে।

কানেকটিকাটের ইয়েল ইউনিভার্সিটিতে বুধবার ৪৮ জনকে গ্রেফতার করা হলেও সেখানে এখনো বিক্ষোভ চলছে। যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদের মধ্যে চারজন ছাড়া বাকি সবাই ইয়েল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী।

মঙ্গলবার সিয়াটলে হাইস্কুলের শিক্ষার্থীরা যুদ্ধের প্রতিবাদে শ্রেণিকক্ষ থেকে বের হয়ে আসেন।

শুক্রবার নিউ জার্সির হাইস্কুলের শিক্ষার্থীরা একটি পদযাত্রার আয়োজন করেছে। তবে শিক্ষার্থীরা যাতে সেখানে যোগ না দেয় সেজন্য নিউ জার্সির স্কুল কর্তৃপক্ষ কঠোর সতর্কবার্তা দিয়েছে।

সূত্র: বিবিসি বাংলা
কেএএ/

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।