তীব্র গরমে পুড়ছে পশ্চিমবঙ্গ
তীব্র ও অসহ্য গরমে কাহিল গোটা পশ্চিমবঙ্গ। উত্তর থেকে দক্ষিণ, পূর্ব থেকে পশ্চিম সব জায়গায় গরমের অস্বস্তি। সূরে্যর তেজ কমা তো দূরের কথা, প্রতিদিন লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েই চলেছে। বেলা যত বাড়ছে সূর্যের চোখরাঙানি তত বাড়ছে।
স্বাভাবিকের থেকে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা অন্তত পাঁচ ডিগ্রি বেশি হওয়ায় তাপপ্রবাহের কবলে পড়লো কলকাতা। শনিবার (২০ এপ্রিল) কলকাতার তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পার করেছে। আলিপুর আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাস, কলকাতার এই তাপমাত্রা আরও বাড়বে।
আবহাওয়া দপ্তর আরও জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত এই গরম কমার কোনো সম্ভাবনা নেই। সোমবার (২২ এপ্রিল) পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গের বেশকিছু জেলায় তাপপ্রবাহ বইতে পারে। আটটি জেলায় তীব্র তাপপ্রবাহের কমলা সর্তকতা জারি করা হয়েছে। এমনকি, পশুপাখিদের সুস্থ রাখতে ওআরএস পানির (লবন-চিনি মেশানো পানি) ব্যবস্থা রেখেছে আলিপুর চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ।
মেদিনীপুরের মতো পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোর পারদ ছুতে পারে ৪৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গরমের দাপট থাকবে দুই দিনাজপুর, মালদহ, পুরুলিয়া,বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম, মেদিনীপুর, মুর্শিদাবাদ, বীরভূম, নদিয়া ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বেশকিছু অঞ্চলে।
আবহাওয়া দপ্তরের পরিচালক সোমনাথ দত্ত জানিয়েছেন, এই হাড় পোড়ানো দহনজ্বালা আরও দুই থেকে তিন দিন থাকবে। শনিবার ও রোববার (২১ এপ্রিল) এই দুইদিন কলকাতাসহ দক্ষিণবঙ্গের তাপমাত্রা আরও ২ থেকে ৩ ডিগ্রি বাড়তে পারে।
আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, দার্জিলিং, ডুয়ার্স,কোচবিহার কালিম্পং, আলিপুরদুয়ার,জলপাইগুড়িতে আগামী ২৪ ঘন্টায় হালকা অথবা বজ্রপাতসহ বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
কলকাতার বাসিন্দা সোমনাথ বোস বলেন, নির্বাচনে কাজ করতে এসে গরমে একজন সিআরপিএফ জওয়ান মারা গেলেন। জানি না, এই গরম আর কতটা বাড়বে। প্রচণ্ড গরমে বেশি করে পানি পান করলেও অসুস্থ হয়ে পড়ছি।
উত্তর ২৪ পরগনার ভাটপাড়ার বাসিন্দা তন্দ্রা পাল বলেন, গরমে ভীষন কষ্ট হচ্ছে। গতকাল পরিচিত এক লোক আমার সামনেই মাথা ঘুরে পড়ে গেলেন। এমন পরিস্থিতিতে মশলাদার খাবার একদমই খাচ্ছি না। খুব হালকা খাবার খাচ্ছি, সেই সঙ্গে বেশি করে পানি পান করছি।
দিন মজুরে রাজেশ চৌধুরী বলেন, যতই সতর্ক থাকি না কেন, এই প্রখর রৌদে বাইরে কাজ করতে ভীষণ কষ্ট হয়। বাড়িতে ছোট ছোট ছেলে-মেয়ে আছে। এই গরমে রাতে ঠিকমতো ঘুমাতেও পারছে না তারা। সুস্থ থাকার জন্য বেশি করে লবন ও চিনি মেশানো পানি পান করছি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই প্রচন্ড গরমের এই সময়ে সব কাজ সকাল ১০টার মধ্যে সেরে ফেলা উচিত। বিশেষ কোনো কাজ না থাকলে ঘরের থেকে বের না হওয়ায় ভালো। একান্ত জরুরি কোনো কাজে বাইরে বেরোলেও ফুলহাতা জামা, ছাতা, চোখে কালো চশমা পরতে হবে। মাথা-মুখ-নাক সুতির কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে ও অবশ্যই সঙ্গে লবন-চিনি মেশানো পানি সঙ্গে রাখতে হবে।
তারা আরও বলছেন, গরমে একদমই খালি পায়ে হাঁটা যাবে না। বাজারে কেটে বিক্রি করা ফল খাওয়া যাবে না। তবে বাড়িতে তরমুজ, পেঁপে- এই ধরনের ফল বেশি করে খেতে হবে। বারবার চোখে মুখে শীতল পানির ছিটিয়ে নিতে হবে। রাস্তায় বের হলে ঠান্ডা পানিতে রুমাল ভিজিয়ে মুখ, গলাও ঘাড় মুছতে হবে।
ডিডি/এসএএইচ