লিবিয়ায় দুঃসহ অভিজ্ঞতা বাংলাদেশির
‘মুক্তিপণ দিয়েও ছাড়া মেলেনি, জোর করে নৌকায় ওঠায়’
ভূমধ্যসাগর থেকে উদ্ধার করে ২০২ জন অভিবাসনপ্রত্যাশীকে ইতালির রাভেনা বন্দরে নামিয়েছে বেসরকারি সংস্থা ইমার্জেন্সির উদ্ধারকারী জাহাজ। উদ্ধারের পাঁচ দিন পর গত ১০ এপ্রিল তাদের ইতালিতে নামিয়ে দেয় লাইফ সাপোর্ট নামে ওই জাহাজ।
গত ৫ এপ্রিল ভূমধ্যসাগরে লিবিয়ার অনুসন্ধান ও উদ্ধার অঞ্চল থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল এসব অভিবাসনপ্রত্যাশীকে। তাদের মধ্যে ১৫ নারী ও ১৮ জন অপ্রাপ্তবয়স্ক ছিলেন। অপ্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে আটজনই ছিল অভিভাবকহীন। উদ্ধার হওয়া অভিবাসনপ্রত্যাশীরা বাংলাদেশ, মিশর, ইরিত্রিয়া, ঘানা, পাকিস্তান, ফিলিস্তিন এবং সিরিয়ার নাগরিক।
আরও পড়ুন>>
- ভাগ্য বদলাতে গিয়ে লিবিয়ায় জিম্মি চট্টগ্রামের ৪ যুবক
- ‘পা ফ্যানের সঙ্গে বেঁধে মাথা পর্যন্ত পেটাতো, এখন শরীরজুড়ে ব্যথা’
- লিবিয়া থেকে দেশে ফিরলেন আরও ১৪৪ বাংলাদেশি
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ইমার্জেন্সি জানিয়েছে, ভূমধ্যসাগর থেকে উদ্ধারের পর ৩৫ বছর বয়সী এক বাংলাদেশির সঙ্গে কথা বলেছেন লাইফ সাপোর্ট জাহাজের সদস্যরা।
ওই বাংলাদেশি তাদের বলেন, আমার বাবা মারা গেছেন সাত বছর আগে। মা খুব অসুস্থ, তার বয়স ৭০ বছর। মায়ের চিকিৎসা অনেক ব্যয়বহুল। বাংলাদেশে আমার চাকরি দিয়ে সেই খরচ মেটাতে পারিনি।
তাই কাজের খোঁজে লিবিয়া যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ওই তরুণ। ব্যক্তিগত গোপনীয়তার স্বার্থে তার নাম ও ছবি প্রকাশ করা হয়নি।
আরও পড়ুন>>
- ভূমধ্যসাগরে নৌকায় অগ্নিকাণ্ডে নিহত ৯ জনের বেশিরভাগই বাংলাদেশি
- নতুন বছরেও অবৈধ অভিবাসনের হিড়িক, ভূমধ্যসাগর থেকে উদ্ধার ২০০ জন
- ভূমধ্যসাগরে দিনে গড়ে ৮ অভিবাসনপ্রত্যাশীর মৃত্যু হচ্ছে: এমএসএফ
বাংলাদেশি তরুণ বলেন, লিবিয়া পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে কিছু লিবীয় নাগরিক আমাকে অপহরণ করে বন্দিখানায় নিয়ে যায়। সেখান থেকে মুক্ত হতে আমাকে কয়েক হাজার ডলার দিতে হয়েছে। ১৫ দিন পর পর তারা আমাদের এক বন্দিখানা থেকে অন্য বন্দিখানা নিয়ে যায়।
বন্দিশিবিরগুলো খুবই ভয়ংকর ছিল বলে জানান এই অভিবাসনপ্রত্যাশী। তিনি বলেন, দুই বা তিন দিন পর পর আমাদের খাবার খেতে দিতো। প্রতি রাতে আমাদের মারধর করতো, যাতে আমাদের পরিবার তাদের জন্য আরও টাকা পাঠায়। সেখান থেকে আমাকে মুক্ত করার জন্য আমার মাকে বাড়ি বিক্রি করতে হয়েছে।
তরুণ বলেন, আমার পরিবার মুক্তিপণ দেওয়ার পর এক রাতে কিছু লোক আমাকে নিতে এসেছিল। কিন্তু মুক্তি দেওয়ার পরিবর্তে তারা আমাকে নৌকায় বসিয়ে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেওয়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়। জানি না কেন, তারা আমার চোখ বেঁধে একটি গাড়িতে তুলে নিয়েছিল।
তিনি বলেন, আমরা কোথায় যাচ্ছি জানতাম না। যখন তারা আমার চোখে খুলে দিল, তখন আমরা জাওইয়া সমুদ্র সৈকতে ছিলাম। তারা আমাদের একটি নৌকায় বসিয়েছিল। আমরা যে কয়জন মানুষ ছিলাম, তাদের তুলনায় নৌকাটি ছিল ছোটো।
আরও পড়ুন>>
- ইতালির কঠোর পদক্ষেপেও কমছে না অবৈধ অভিবাসন
- অভিবাসনপ্রত্যাশীদের আলবেনিয়ায় পাঠাবে ইতালি
- মরুভূমি-সাগর পেরিয়ে যেভাবে ইতালি পৌঁছালো শিশু ওমর
নৌকার ভেতরের দিকে বসানো হয়েছিল এই বাংলাদেশিকে। সেখানে ছিল পেট্রলের উৎকট গন্ধ। বাধ্য হয়ে সেখানেই গুটিসুটি মেরে বসেছিলেন তিনি। পরে লাইফ সাপোর্ট জাহাজটি অন্য সবার সঙ্গে তাকেও নৌকা থেকে উদ্ধার করে।
বাংলাদেশি এই তরুণ বলেন, ভাগ্যক্রমে, আপনারা আমাদের খুঁজে পেয়েছেন। আমি এখন শুধু একটি চিন্তাই করতে পারি, তা হলো, আমার পরিবারকে ফোন দিয়ে বলা, আমি ঠিক আছি, আমি আর লিবিয়ায় নেই।
৫ এপ্রিল সকালে আন্তর্জাতিক জলসীমা থেকে এই ২০২ জন অভিবাসনপ্রত্যাশীকে উদ্ধার করা হয়। মোট দুটি নৌকায় ছিলেন তারা। একটি নৌকা ছেড়ে এসেছিল লিবিয়ার সাবরাথা থেকে এবং অপরটি জাওইয়া উপকূল থেকে।
সূত্র: ইনফোমাইগ্রেন্টস
কেএএ/