গাজাবাসীকে ধ্বংসস্তূপে রেখে ঈদ আনন্দে মেতেছে বিশ্ব
বিশ্বজুড়ে উদযাপিত হচ্ছে মুসলিমদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর। সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়াসহ বেশিরভাগ মুসলিমপ্রধান দেশেই ধুমধামে ঈদ উদযাপন করছেন মুসলিমরা। শুধু আনন্দ নেই ফিলিস্তিনিদের মনে। ঈদের দিনেও পেটে ক্ষুধা নিয়ে, প্রতি মুহূর্তে প্রাণ হারানোর শঙ্কা নিয়ে দিন কাটাতে হচ্ছে তাদের।
গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায় ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস ও এর সহযোগীরা। সেই হামলায় প্রাণ হারান প্রায় ১ হাজার ১০০ মানুষ, জিম্মি করা হয় আরও ২৫০ জনকে।
আরও পড়ুন>>
এরপর থেকেই অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় তাণ্ডব চালাচ্ছে দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী। তাদের নির্বিচার হামলায় এ পর্যন্ত ৩৩ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। আহতের সংখ্যা লাখ ছাড়িয়েছে। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে গোটা উপত্যকা এলাকা।
হামলা থামেনি পবিত্র রমজান মাসেও। এমনকি, রোজার শেষ দিনেও গাজার নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত চার শিশু প্রাণ হারিয়েছে। চাঁদরাতে বিমান হামলা চালিয়ে আরও কয়েক ডজন ফিলিস্তিনি স্থাপনা ধ্বংস করেছে ইসরায়েল।
দীর্ঘদিন ধরে দখলদারত্বে ভুগে ঈদের আনন্দ অনেক আগেই ম্লান হয়েছে গাজাবাসীর জন্য। কিন্তু এবারের পরিস্থিতি যেন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে ভয়াবহ। ইসরায়েল ত্রাণ সহায়তা আটকে দেওয়ায় ঈদের সময় রীতিমতো দুর্ভিক্ষের মুখে রয়েছে গাজা।
রাফাহ শহরে একটি আশ্রয়কেন্দ্রে ঈদের দিন শিশুদের মধ্যে খাবার বিতরণ চলছে। ছবি: এএফপি
ফায়েজ আবদেলহাদি নামে এক ফিলিস্তিনি ভয়েস অব আমেরিকাকে বলেন, পর্যাপ্ত খাবার নেই। আমি দুই মাস একটিও (খাবারের) বাক্স পাইনি। গতকাল আমরা একটি বাক্স পেয়েছি। কিন্তু সেটি আমার বা আমার বাচ্চাদের এবং সঙ্গে থাকা অন্য ১৮ জনের জন্য যথেষ্ট নয়। একজন ব্যক্তি প্রতিদিন একটি বাক্স পেলেও তা যথেষ্ট হবে না।
আরও পড়ুন>>
- গাজায় ৬০ শতাংশের বেশি বাড়ি-ঘর ধ্বংস করেছে ইসরায়েল
- গাজায় ১৯৬ ত্রাণকর্মী নিহত, নিরপেক্ষ তদন্ত চায় জাতিসংঘ
- জাতিসংঘে প্রস্তাব পাসে গাজা যুদ্ধ কি বন্ধ হবে?
গাজায় গত মাস থেকে অপুষ্টি ও অনাহারজনিত জটিলতায় শিশুরা মারা যাচ্ছে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। চিকিৎসার অভাবে অন্যান্য প্রতিরোধযোগ্য মৃত্যু বাড়ছে বলেও উল্লেখ করেছে তারা।
দক্ষিণ গাজার রাফাহ শহরে দোকানদার আহমেদ ইসমাইল আল-জাজিরাকে বলেন, এখানে পবিত্র অনুষ্ঠানগুলো উদযাপন করার মতো কোনো আনন্দ বা ক্ষুধা নেই। এমনকি বাচ্চাদেরও খেলনার প্রতি কোনো আগ্রহ নেই, যেমনটা আগে ছিল। এটি আমাদের জীবনের সবচেয়ে খারাপ সময়।
শহরটিতে জাবর হাসান নামে এক বাস্তুচ্যুত ব্যক্তি বলেন, আমরা সব দিক থেকে ভুগছি। মানুষ কোনোমতে বেঁচে রয়েছে। তারা পরিবারকে খুব কমই খাওয়াতে পারছে। আমরা এখন আর ঈদ উদযাপন বা অন্য কোনো আনন্দের কথা ভাবি না।
কেএএ/