দক্ষিণ মেরুতে রেকর্ড তাপমাত্রা, বিপর্যয়ের আশঙ্কা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৫:৩৮ পিএম, ০৭ এপ্রিল ২০২৪
বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে অ্যান্টার্কটিকার হিমবাহগুলো উদ্বেগজনক হারে গলতে শুরু করেছে /ছবি: সংগৃহীত

পৃথিবীর দক্ষিণ মেরুর তাপমাত্রায় অস্বাভাবিক বৃদ্ধি রেকর্ড করেছেন বিজ্ঞানীরা। তারা জানিয়েছেন, দক্ষিণ মেরুর বরফঢাকা পূর্বাঞ্চলের মালভূমিতে অবস্থিত কনকর্ডিয়া গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, ২০২২ সালের ১৮ মার্চ অঞ্চলটির তাপমাত্রা মৌসুমি গড় তাপমাত্রার চেয়ে ৩৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে যায়, যা একটি বিশ্ব রেকর্ড।

ব্রিটিশ অ্যান্টার্কটিক সার্ভের বৈজ্ঞানিক দলের প্রধান অধ্যাপক মাইকেল মেরেডিথ বলেন, বিষয়টি এককথায় মাথা ঘুরিয়ে দেওয়ার মতো। দক্ষিণ মেরুর তাপমাত্রায় একবারে এত বড় লাফ এর আগে কখনোই দেখা যায়নি। বিশ্বের কোনো আবহাওয়াকেন্দ্রই এ অঞ্চলের তাপমাত্রায় এমন বৃদ্ধি রেকর্ড করেনি।

অধ্যাপক মাইকেল মেরেডিথ আরও বলেন, শূন্য অঙ্কের নিচে থাকা তাপমাত্রায় এত বড় পরিবর্তন সহনীয়। কিন্তু যদি শীতকালে যুক্তরাজ্যের তাপমাত্রা হঠাৎ করেই ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে যায়, তবে বসন্তে দেশটির তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যাবে। বিষয়টি ব্রিটিশদের জন্য হবে ভয়াবহ।

অ্যান্টার্কটিকার জলবায়ু ও আবহাওয়ার নাটকীয় রূপান্তরের উপর জোর দিয়েছিলেন মেরেডিথ। তার মতে, ২০ শতকের শেষের দিকে ও ২১ শতকের শুরু থেকে অ্যান্টার্কটিকার হিমবাহগুলো গলতে শুরু করে। তবে গত দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে এই গতি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়।

এদিকে, অ্যান্টার্কটিকার এমন পরিবর্তনে ব্যাপক বিষ্ময় প্রকাশ করেছেন যুক্তরাজ্যের এক্সেটার বিশ্ববিদ্যালয়ের হিমবাহ বিজ্ঞানী অধ্যাপক মার্টিন সিগার্ট। তিনি বলেন, আমাদের কেউ ভাবেনি যে এ রকম কিছু ঘটতে পারে। দক্ষিণ মেরুর এই তাপমাত্রা সাধারণ সীমার বাইরের বিষয় ও এটি যথেষ্ট উদ্বেগের বিষয়।

মার্টিন সিগার্ট আরও বলেন, বিশ্বের সবচেয়ে হিমশীতল জায়গার তাপমাত্রায় এমন লাফকে বর্ণনা করার ভাষা আমাদের কাছে ছিল না। বিশ্বকে এখন এমন কিছুর সঙ্গে লড়ার জন্য প্রস্ততি নিতে হতে পারে, যা সম্পূর্ণ নজিরবিহীন।

গবেষকরা বলেছেন, তাপমাত্রার এমন বিশাল বৃদ্ধি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। গত দুই বছর ধরেই তারা অ্যান্টার্কটিকার আবহাওয়ায় উদ্বেগজনক অসঙ্গতি লক্ষ্য করছেন। বিশেষ করে, পশ্চিম অ্যান্টার্কটিকে শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে জমে থাকা বরফের চাই ও হিমবাহগুলো ক্রমবর্ধমান হারে গলতে শুরু করেছে। এর ফলে মহাদেশটির চারপাশে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতাও বাড়তে ‍শুরু করেছে।

এই ঘটনাগুলো এমন আশঙ্কার ইঙ্গিত দেয় যে, মানুষের বোকামি জন্য অ্যান্টার্কটিকাও বলতে যেতে শুরু করেছে। বায়ুমণ্ডলে অতিরিক্ত কার্বন ডাই অক্সাইডের প্রভাব এই মহাদেশেও খুব বাজেভাবে পড়েছে।

গত সপ্তাহে জার্নাল অব ক্লাইমেটে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে বিজ্ঞানীদের একটি দল অ্যান্টার্কটিকার এই পরিবর্তনগুলো পুরো মানবসভ্যতার জন্য কোন ধরনের বিপদ ডেকে আনতে পারে, তা তুলে ধরেন।

তাসমানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক উইল হবসের নেতৃত্বে গঠিত গবেষক দলটি বলে, অ্যান্টার্কটিকার হিমবাহগুলোর সাম্প্রতিক পরিবর্তন পরীক্ষা করার পরে তারা উপসংহারে পৌঁছেছে যে মহাদেশটির জলবায়ুতে আকস্মিক ও অতি নেতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। এই পরিবর্তন অ্যান্টার্কটিকের বাস্তুতন্ত্র তো বটেই বিশ্বব্যাপী জলবায়ু ব্যবস্থায় ভয়াবহ প্রভাব ফেলতে পারে।

সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

এসএএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।