শীর্ষ রুশ কমান্ডারদের বিরুদ্ধে আইসিসির গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি
ইউক্রেনে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ তুলে রাশিয়ার কয়েকজন শীর্ষ কমান্ডারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)। এ বিষয়ে দুজনের নাম প্রকাশ করা হয়েছে। এরা হলেন, সের্গেই কবিলাশ এবং ভিক্টর সোকলভ। এর একজন সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট জেনারেল এবং অন্যজন নৌবাহিনীর এডমিরাল।
ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে রাশিয়ার কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এ নিয়ে দ্বিতীয় দফায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হলো। এর আগে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং তার শিশু অধিকার বিষয়ক দূত এর বিরুদ্ধে এ ধরনের পরোয়ারা জারি করা হয়েছিল।
রাশিয়া অবশ্য আইসিসিকে স্বীকৃতি দেয় না। ফলে অভিযোগ মোকাবিলায় তাদের আদালতে আসার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। আইসিসি বলছে, সন্দেহভাজন ওই দুই কর্মকর্তার নির্দেশে ইউক্রেনের বিদ্যুৎ অবকাঠামোতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়েছে।
তারা জানিয়েছে, অপরাধটি সংঘটিত হয়েছে ২০২২ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৩ সালের মার্চের মধ্যবর্তী সময়ে।
আদালত বলছে, ওই হামলায় বহু বেসামরিক নাগরিক হতাহত হয়েছে এবং মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হতে হয়েছে।
এই দুই ব্যক্তির প্রত্যেকে বেসামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলার নির্দেশ দেওয়ার মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধের জন্য দায়ী এবং তারা ‘অমানবিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের’ জন্যও অভিযুক্ত বলে জানিয়েছে আদালত।
ঘটনার সময় ৫৮ বছর বয়সী কবিলাশ রাশিয়ার বিমান বাহিনীর দূরপাল্লার বিমান চলাচল বিভাগের কমান্ডার ছিলেন। অন্যদিকে ৬১ বছর বয়সী সোকোলভ ছিলেন রাশিয়ার নৌবাহিনীর এডমিরাল। তিনি ওই সময় কৃষ্ণ সাগরে জাহাজ পরিচালনায় নেতৃত্ব দিয়েছেন বলে আইসিসি জানিয়েছে।
মস্কো আগেই ইউক্রেনে বেসামরিক অবকাঠামোতে হামলার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি নতুন পরোয়ানাকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি সামাজিক মাধ্যমে এক পোস্টে লিখেছেন, ইউক্রেনের বেসামরিক এবং গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোতে যেসব রুশ কমান্ডার হামলার নির্দেশ দিয়েছেন তাদের প্রত্যেকের অবশ্যই জানতে হবে যে তাদের বিচার হবে।
তিনি আরও বলেন, এ ধরনের অপরাধে জড়িত প্রত্যেকের অবশ্যই জানতে হবে যে তাদের অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে। ২০০২ সালে জাতিসংঘের এক চুক্তির আওতায় তৈরি হওয়া আইসিসি মূলত গণহত্যা, মানবতা বিরোধী অপরাধ বা এ ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনা ও অনুসন্ধানের কাজ করে, যদি সংশ্লিষ্ট দেশের জাতীয় কর্তৃপক্ষ তাদের বিচারের আওতায় না আনে বা আনতে না পারে।
বিশ্বের ১২৩টি দেশ ওই চুক্তি অনুস্বাক্ষর করেছে। তবে রাশিয়া, চীন, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র এতে যোগ দেয়নি। গত বছর মার্চে আইসিসি প্রেসিডেন্ট পুতিন ও রাশিয়ার শিশু অধিকার বিষয়ক কমিশনার মারিয়া এলভোবা বেলোভার বিরুদ্ধের গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছিলো। আদালত তখন ইউক্রেন থেকে শিশুদের বেআইনি স্থানান্তরের অভিযোগের ওপর জোর দিয়েছিল।
সে সময় আইসিসি এক বিবৃতিতে বলেছিল, এটা বিশ্বাস করার মতো যথেষ্ট কারণ আছে যে পুতিন এই অপরাধ সরাসরি করেছেন। একই সঙ্গে প্রেসিডেন্ট হিসেবে এটি বন্ধ করার সুযোগ থাকলেও তিনি সেটা করেননি।
মস্কো এসব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে এই পরোয়ানাকে ‘জঘন্য’ বলে অভিহিত করেছিল। তখন ক্রেমলিন বলেছিল, আদালতের যে কোনো সিদ্ধান্তই আসলে ‘অকার্যকর।’ একটি টয়লেট পেপারের ছবি দিয়ে টুইট করে রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ পোস্ট করেছিলেন যে, এটা ব্যাখ্যা করার দরকার নেই যে কাগজটি কি কাজে ব্যবহার করা উচিত।
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের আসলে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে গ্রেফতারের ক্ষমতা নেই। আর আইসিসি বিচারকাজও পরিচালনা করে শুধুমাত্র তার সদস্য দেশগুলোতেই। কিন্তু রাশিয়া আইসিসির সদস্য নয়। তাই দ্য হেগের কাঠগড়ায় অভিযুক্তদের হাজির হওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই ক্ষীণ।
কাউকে গ্রেফতারে আইসিসিকে সরকারের সহযোগিতার ওপরই নির্ভর করতে হয়। আর রাশিয়া নিশ্চিতভাবেই কোনো সহযোগিতা করবে না এক্ষেত্রে। এছাড়া অভিযুক্তের উপস্থিতি ছাড়া কোনো শুনানি হতে পারে না। আইসিসির এমন নিয়মও নেই।
যতদিন তারা নিজের দেশে থাকছেন তাদের গ্রেফতারের কোনো সুযোগ নেই। তাদের আটক করা হতে পারে যদি তারা অন্য দেশে যান।
আরও পড়ুন:
ইউক্রেন যুদ্ধের দুই বছর পার হয়ে গেলেও এখনো কোন পক্ষই পুরোপুরি জয় লাভ করতে পারেনি। সহসা এই যুদ্ধ থামারও কোনো লক্ষণও দেখা যাচ্ছে না। কিয়েভ এ ব্যাপারে একরোখা যে তাদের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সীমানা বজায় থাকতে হবে এবং তারা রুশ সৈন্যদের হটিয়ে দেবে। অন্যদিকে মস্কো তাদের অবস্থানে অনড় যে ইউক্রেন যথাযথ রাষ্ট্র নয় এবং তাদের লক্ষ্য অর্জন না হওয়া পর্যন্ত রাশিয়ার সামরিক অভিযান চলবে।
টিটিএন