এবারের বড়দিনে যিশুর জন্মস্থানে নেই কোনো উৎসব-আয়োজন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১:৪৬ পিএম, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৩
ছবি সংগৃহীত

এবারের বড়দিনে যিশুর জন্মস্থান বেথেলহেমে নেই কোনো উৎসব-আয়োজন। চারদিকে শুধু নীরবতা বিরাজ করছে। বেথেলহেমের পরিবেশ যেন ভারী হয়ে উঠেছে। সেখানে বড়দিনের উৎসব বাতিল করা হয়েছে। প্রতি বছর যেখানে হাজার হাজার পর্যটক এবং তীর্থযাত্রীকে শহরের প্রাণকেন্দ্র ম্যাঞ্জার স্কয়ারে দেখা যেতো সেখানে এবারের চিত্র একেবারেই ভিন্ন।

পশ্চিম-তীরের বেথেলহেমের বাসিন্দা ম্যাডেলি বলেন, সুখ, আনন্দ, বাচ্চাদের হৈ-চৈ, সান্তা কোনকিছুই এবার শহরে দেখা যাচ্ছে না। নেই বড়দিনের কোনো আমেজও। বড়দিনের বিখ্যাত ক্রিসমাস ট্রি সাধারণত স্কয়ারের একেবারে মাঝখানে থাকে, এবার সেটাও নেই। ক্রিসমাসের সমবেত সঙ্গীত বা দোকানের কেনাকাটার ভিড়ও চোখে পড়েনি।

আরও পড়ুন: গাজায় শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি হামলা, নিহত ৭০

গাজার শিশুদের প্রতি সম্মান জানাতে সেই স্থানে বড় বড় পাথর আর কাঁটাতারের বেড়ার মাঝে শিশু যিশুর ছবি সাজিয়ে রাখা হয়েছে।অস্বাভাবিক ফাঁকা নেটিভিটি চার্চের ফাদার ঈসা থালডিজিয়া বলেন, শহরটিকে এখন মৃত্যুপুরীর মতো মনে হচ্ছে।

তিনি বলেন, আমি ১২ বছর ধরে এই গির্জার যাজক ছিলাম। আমি বেথেলহেমে জন্মগ্রহণ করেছি। এমন পরিবেশ আমি আগে কখনো দেখিনি। এমনকি মহামারি করোনা চলাকালীন সময়েও এমন পরিবেশ ছিলে না।

ফাদার থালডিজিয়া বলেন, বড়দিন উদযাপন করা কঠিন, কারণ গাজায় আমাদের ভাই -বোন আছে। কিন্তু প্রার্থনায় আমরা এক হয়েছি এটা ভালো।

জাওদাত মিখাইল বেথেলহেমে থাকেন, কিন্তু তার পরিবার উত্তর গাজায় আটকা পড়েছে। ইসরায়েলি বোমাবর্ষণে বিধ্বস্ত এলাকা গাজার উত্তরে শেজাইয়া শহরের হলি ফ্যামিলি চার্চে তার বাবা, মা, ভাই এবং অন্যান্য স্বজনরা আশ্রয় নিয়েছেন।

টেলিফোনে আলাপকালে জাওদাতের বাবা হান্না জানান, তাদের পরিবারের সদস্যরা এখনও ঠিক আছে। তিনি বলেন, দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় চেষ্টার পর তিনি খাবার খোঁজার জন্য অবশেষে চার্চ থেকে বেরোতে পেরেছেন। তিনি জানান, চার্চের আশেপাশে সব শুধু ধ্বংসস্তূপ। সব দোকান পুড়ে গেছে। সম্পূর্ণ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে এবং এখানে কোনো পানি নেই।

তিনি বলেন, এখানে খাবার খুবই অল্প আছে, এতে পেট ভরবে না কিন্তু আমাদের জীবিত রাখবে। গতবছর ক্রিসমাস কতটা আনন্দের ছিলো তা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। হান্না বলেন, এদিন আমরা হয়তবা চার্চে আলোকসজ্জা করতাম। ক্যারোলস থাকতো কিন্তু এখন আমাদের একমাত্র প্রার্থনা এখান থেকে জীবিত বের হওয়া।

এক সপ্তাহ আগে জাওদাতের দাদী নাহিদা খলিল অ্যান্তন গাজার ওই চার্চে আশ্রয় নিয়েছিলেন। তিনি বাথরুমে যাওয়ার সময় দুইবার পেটে গুলিবিদ্ধ হন। তার খালা সামার কামাল অ্যান্তন তাকে সাহায্যের জন্য ছুটে গেলে তিনিও মাথায় গুলিবিদ্ধ হন।

যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই তার পরিবার হলি ফ্যামিলি চার্চে আশ্রয় নিয়েছিলো। অথচ এখন তারা সেখানে তাদের প্রিয়জনদের সমাহিত করছেন। এই মৃত্যুর জন্য ইসরায়েলি স্নাইপারদের তারা দায়ী করেছে। তবে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী আইডিএফ জানিয়েছে, তারা এই অভিযোগের তদন্ত করে দেখবে।

অশ্রুসিক্ত হান্না জানান তার চোখের সামনে পরিবারের দুই সদস্য মারা গেছেন। তিনি বলেন, এটা একটা আঘাত, যা সহ্য করা যায় না।
সকালে বেথেলেহেমে চার্চে যখন ঘণ্টা বাজছিল স্থানীয় কিছু লোক যিশুর চারপাশে ধ্বংসস্তূপের সামনে জড়ো হয়। স্পিকারে তখন আরবি গান বাজছিল, একজন আরেকজনকে সালাম দিচ্ছিল, শিশুদের জন্য শান্তি প্রার্থনা করছিল।

মাঝখানে কয়েকজন লোক একটা বড় ফিলিস্তিনি পতাকা হাতে তা উপরে-নিচে উড়াচ্ছিল। ফিলিস্তিনের ঐতিহ্যবাহী সাদা-কালো চেকের স্কার্ফ পরিহিত জেরুজালেমের লাতিন ক্যাথলিক চার্চের প্রধান পিয়ারবাতিস্তা পিজ্জাবালা বলেন, এটা খুব দুঃখের একটা বড়দিন।

তিনি বলেন, আমরা ভয়াবহ একটা যুদ্ধের মধ্যে আছি। আমাদের ধ্যানধারণা শুধুমাত্র গাজার দিকে, গাজায় থাকা আমাদের জনগণের দিকে। সেখানে ২০ লাখের বেশি মানুষ কষ্ট করছে। পিয়ারবাতিস্তা বলেন, একটা যুদ্ধবিরতি যথেষ্ট নয়। আমাদের এই শত্রুতা বন্ধ করতে হবে। এই পরিস্থিতির পরিবর্তন করতে হবে কারণ সহিংসতা শুধুই সহিংসতা ডেকে আনে।

ম্যাঞ্জার স্কয়ারের কিছু দূরে স্টার স্ট্রিটের দুই সাইডেই স্যুভেনিরের দোকানগুলো আছে কিন্তু নেই চিরচেনা সেই কেনা-বেচা কিংবা দরকষাকষির দৃশ্য চোখে পড়ছে না।

ফিলিস্তিনের বিখ্যাত সেলাই করা স্কার্ফ, কুশন কভার এবং প্রত্নবস্তুগুলো দোকানের বাইরে বিক্রেতাদের স্পর্শ ছাড়াই ঝুলে আছে। এই সময় সাধারণত বাজারের জন্য খুব ভালো মৌসুম কিন্তু এ বছর তেমন কিছুই নেই।

আরও পড়ুন: গাজায় ‘কঠিন’ সামরিক অভিযান চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার ইসরায়েলের

ম্যাঞ্জার স্কয়ারের নিকটবর্তী একটি দোকানের মালিক আবুদ সুবাহ বলেন, গাজায় আমাদের অসংখ্য লোক মারা গেছে। এমন পরিস্থিতিতে আমরা বড়দিন উদযাপন করতে পারি না। নিজের ব্যবসা ও এই শহরকে এমন রূপে দেখা খুব দুঃখের বলে উল্লেখ করেন তিনি। এই ব্যবসায়ী বলেন, এ বছর ক্রিসমাস উদযাপন করা ভুল হবে। আমরা খুশি হতে পারি না কারণ আমরা পৃথিবীর অপর প্রান্তে বাস করি না। আমরা এখনো ফিলিস্তিনেই আছি।

টিটিএন

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।