ভারতের সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন শহর
বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ইন্দোর কেন অনুসরণীয়?
ভারতের মধ্যপ্রদেশের ছোট শহর ইন্দোর। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায় নজর কেড়েছে সবার। দেশটিতে পরিচ্ছন্ন শহরের তালিকায় গত কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিকভাকে শীর্ষে থাকছে ইন্দোর। আর এটা সম্ভব হয়েছে তাদের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সফলতার কারণেই। এখন এই শহরের নিয়ম-কানুন অনুসরণ করতে চায় ভারতের আরও অনেক শহর।
পুনে ভারতের অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর। সেখানের কর্তৃপক্ষ পুনেকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন শহরের তালিকায় শীর্ষে উঠিয়ে আনতে চায়। কিন্তু তাদের পদক্ষেপে সন্দেহ রয়েছে নাগরিকদের। কারণ সেখানের ময়লার ভাগাড়গুলো এখনো রয়ে গেছে, নিয়মিত পরিষ্কার করা হচ্ছে না ড্রেনও।
আরও পড়ুন>যেসব কারণে ভারতের সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন শহর ইন্দোর
পুনে শহরের নাগরিকরা অনেকটাই আশাহত। কারণ ময়লা সংগ্রকারীরা সময় মতো আসে না। অনেক সময় বর্জ্য দুই তিন দিনও বাড়িতে রাখতে হয়। আবার রাস্তার পাশেও ময়লা ফেলা হয়। একজনের দেখাদেখি অন্যরাও রাস্তায় ময়লা ফেলে।
অনেক বাসিন্দারাই বলেছেন, পুনে পৌর কর্তৃপক্ষ পরিচ্ছন্নতার কথা বললেও বাস্তবে তার প্রতিফল নেই।
এমন পরিস্থিতিতে সম্প্রতি পুনের কর্মকর্তারা ইন্দোর সফর করেছেন। সেখানের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে কাজ করছেন তারা এবং কীভাবে এই পদ্ধতি পুনেতে বাস্তবায়ন করা যায় তার পরিকল্পনা করছেন। এরই মধ্যে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে ইন্দোরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পুনেতেও বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
ইন্দোরকে অনুসরণ করার অন্যতম কারণ হলো গৃহস্থালি ও বাণিজ্যিক পর্যায়ে ছয়-বিনের বর্জ্য পৃথকীকরণ ব্যবস্থা অনুসরণ করছে শহরটি, যার মধ্যে রয়েছে শুকনো বর্জ্য, ভেজা বর্জ্য, প্লাস্টিক বর্জ্য, ই-বর্জ্য, গার্হস্থ্য স্যানিটারি বর্জ্য ও ঘরোয়া বিপজ্জনক বর্জ্য।
আরও পড়ুন>কীভাবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় চমক দেখাচ্ছে ইন্দোর?
জানা গেছে, গড়ে প্রতিদিন শহরে ৫৩০ টন ভেজা বর্জ্য, ৪৬০ টন শুকনো বর্জ্য, ১৪ টন প্লাস্টিক বর্জ্য, ২ দশমিক ৫ টন ই-বর্জ্য, ১১ টন স্যানিটারি বর্জ্য এবং ৩ দশমিক ৫ টন বিপজ্জনক বর্জ্য উৎপাদন হয়। এসব বর্জ্য মোকাবিলায় আলাদা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। শহরটি উৎস পর্যায়ে বর্জ্য উৎপাদন বন্ধ করার কৌশল নিয়েও কাজ করছে এবং কয়েকটি ওয়ার্ডকে এরই মধ্যে শূন্য-বর্জ্য ওয়ার্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছে।
শহরটিতে যখন বর্জ্য পৃথকীকরণ শুরু করা হয় তখন ৮০ শতাংশেরও বেশি বাসিন্দা বর্জ্য আলাদা করতেন না। পরে পরিবেশের জন্য এই প্রক্রিয়া কেন গুরুত্বপূর্ণ তা বাসিন্দাদের বুঝাতে হয়েছে। তারপরও যারা এই প্রক্রিয়া মানতেন না তাদের আমরা জরিমানা করা হয়। পৌর করপোরেশনের সংগৃহীত বর্জ্য যানবাহনে পরিবহন করা হয় এবং সংগৃহীত বর্জ্যের ১০০ শতাংশই একই দিনে প্রক্রিয়াজাত করা হয়।
তাছাড়া সব পরিবারকে আলাদাভাবে প্লাস্টিক বর্জ্য সংরক্ষণের জন্য দুটি বড় ব্যাগ দেওয়া হয়েছে। একটি ব্যাগ ভর্তি হয়ে গেলে, বাসিন্দারা শহরের প্লাস্টিক বর্জ্য পুনর্ব্যবহারের জন্য নিযুক্ত সংস্থাকে একটি মেসেজ পাঠায়। এরপর সংস্থার কর্মীরা প্লাস্টিক কিনতে নির্দিষ্ট বাড়িতে যায়। এতে পরিবারগুলোও লাভবান হয়। পরে প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ করে নির্দিষ্ট পন্থায় প্রক্রিয়া করে জ্বালানি উৎপাদন করা হয়। প্লাস্টিকের বর্জ্যকে সিমেন্টের ব্রিকস বানানোরও প্ল্যান্ট রয়েছে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার নিয়ম না মানলে রয়েছে জরিমানার ব্যবস্থাও।
ইন্দোর পৌর করপোরেশনের এমন পদক্ষেপে শহরটির সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে দেশে বিদেশে। অনেকেই জানতে চায় তাদের সফলতার গল্প। পুনের মতো এমন পদ্ধতি বাস্তায়ন করতে চায় নিজেদের শহরে।
এমএসএম