শিখ নেতা হত্যার ষড়যন্ত্র
ভারতীয় বংশোদ্ভূত ৫ আইনপ্রণেতাকে যুক্তরাষ্ট্রের ‘গোপন ব্রিফিং’
মার্কিন কংগ্রেসের পাঁচজন ভারতীয় বংশোদ্ভূত আইনপ্রণেতাকে ‘গোপন ব্রিফিং’ করেছে বাইডেন প্রশাসন। এক মার্কিন নাগরিককে নিজ দেশের মাটিতেই হত্যার ষড়যন্ত্রে এক ভারতীয় কর্মকর্তা জড়িত থাকার বিষয় নিয়েই ওই ‘গোপন ব্রিফিং’ হয়েছে বলে জানা গেছে।
ব্রিফিংয়ের পরে এক যৌথ বিবৃতিতে ওই পাঁচ কংগ্রেস সদস্য জানিয়েছেন, যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা উদ্বেগজনক এবং বিষয়টির যদি সমাধান না হয়, তবে যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্কের ‘উল্লেখযোগ্য ক্ষতি’ হতে পারে।
আরও পড়ুন>> কানাডায় শিখ হত্যা/ ভারতকে তদন্তে সহযোগিতা করতে বললো যুক্তরাষ্ট্র
গত মাসে মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেলের দপ্তর নিউইয়র্কের আদালতে যে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছিল, তাতে নিখিল গুপ্তা নামে এক ভারতীয় নাগরিক ও একজন নাম উল্লেখ না করা ভারতীয় কর্মকর্তা এক মার্কিন নাগরিককে হত্যার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন বলে উল্লেখ করা হয়। এরপরেই চেক প্রজাতন্ত্রে গ্রেফতার হয় নিখিল গুপ্তাকে।
কথিত ষড়যন্ত্রে যে মার্কিন নাগরিককে হত্যার ষড়যন্ত্র হয়েছিল বলে দাবি করা হয়েছে, অভিযোগপত্রে তার নাম উল্লেখ করা হয়নি। তবে ভারতীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী ধারণা করা হচ্ছে, ওই ব্যক্তি হলেন শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা গুরপতওয়ান্ত সিং পান্নু। তাকে ভারত বেশ কয়েক বছর আগে সন্ত্রাসী বলে ঘোষণা করেছে।
কী বলছেন মার্কিন কংগ্রেস সদস্যরা?
ভারতীয় গণমাধ্যমে বলা হচ্ছে, পাঁচ ভারতীয় বংশোদ্ভূত কংগ্রেস সদস্য অমি বেরা, প্রমীলা জয়পাল, রো খান্না, রাজা কৃষ্ণমূর্তি এবং শ্রী থানেদার ‘ব্রিফিং’-এর শেষে যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন।
ভারত সরকার যে অভিযোগগুলো নিয়ে তদন্ত কমিটি গড়েছে, সেই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে ওই পাঁচজন কংগ্রেস সদস্য বলেছেন, এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে ভারত পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করুক। ভারত সরকারের কর্মকর্তাসহ যারা দায়ী, তাদের চিহ্নিত করুক, জবাবদিহি নিশ্চিত করুক আর এই আশ্বাস দিক যে, এই ঘটনা আর কখনো হবে না।
আরও পড়ুন>> ভারত-কানাডা দ্বন্দ্বে কার পক্ষ নেবে যুক্তরাষ্ট্র?
‘আমরা বিশ্বাস করি, যুক্তরাষ্ট্র-ভারত বন্ধুত্ব দুই দেশের মানুষের জীবনেই সদর্থক প্রভাব ফেলেছে। কিন্তু আমাদের আশঙ্কা, অভিযোগপত্রে যেসব ঘটনার বর্ণনা দেওয়া হয়েছে, সেগুলো নিয়ে যদি যথার্থ ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তাহলে এই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের গুরুতর ক্ষতি হবে’, যৌথ বিবৃতিতে বলেছেন ওই কংগ্রেস সদস্যরা।
ধারণা করা হচ্ছে, গোপন ব্রিফিংয়ে বাইডেন প্রশাসন তাদের সামনে এমন কিছু প্রমাণ তুলে ধরেছে, যার সব কিছু হয়তো আদালতে দাখিল করা অভিযোগপত্রে লেখা হয়নি।
নিখিল গুপ্তার পরিবারের মামলা
এদিকে, চেক প্রজাতন্ত্রে গ্রেফতার নিখিল গুপ্তার পরিবারের পক্ষ থেকে ভারতের সুপ্রিম কোর্টে একটি হেবিয়াস কর্পাস পিটিশন দায়ের করা হয়েছে। পিটিশনে দাবি জানানো হয়েছে, সর্বোচ্চ আদালত ভারত সরকারকে বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করার নির্দেশ দিক।
হেবিয়াস কর্পাস পিটিশন হলো কোনো ব্যক্তির খোঁজ না পেলে তাকে সশরীরে আদালতে হাজির করানোর দাবি জানিয়ে আবেদন।
আরও পড়ুন>> যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধুত্বের পরীক্ষা নিচ্ছে ভারত
নিখিলের আইনজীবী দাবি করেছেন, তাকে অবৈধভাবে আটক করা হয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যর্পণের প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে।
আইনজীবী রোহিনী মুসা বলেন, তার বিরুদ্ধে প্রত্যর্পণের আদেশ জারি করা হয়েছে। কিন্তু আমাদের এই আদেশের কপি দেওয়া হয়নি। কিছু রিপোর্ট অনুসারে, তাকে প্রত্যর্পণও করা হবে, তবে আমরা তার কোনো তথ্য পাচ্ছি না।
নিখিলের পরিবারের দাবি, ‘স্বঘোষিত মার্কিন এজেন্টরা’ গ্রেফতারি পরোয়ানা ছাড়াই তাকে গ্রেফতার করেছে এবং এখন পর্যন্ত তাকে ন্যায্য আইনি প্রক্রিয়া থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।
আরও পড়ুন>> যাকে নিয়ে ভারত-কানাডা সম্পর্ক তলানিতে, কে এই হরদীপ সিং?
মামলাটির শুনানির সময় ভারতের শীর্ষ আদালত বিষয়টিকে ‘অত্যন্ত সংবেদনশীল বিষয়’ বলে বর্ণনা করেন এবং নিখিল গুপ্তার জ্যেষ্ঠ আইনজীবীকে চেক প্রজাতন্ত্রের আদালতে আবেদন করতে বলেন।
কেন গ্রেপ্তার নিখিল গুপ্তা?
ভারতীয় নাগরিক নিখিল গুপ্তার বিরুদ্ধে আগে থেকেই মাদক ও অস্ত্র চোরাচালানের অভিযোগ রয়েছে। তবে চেক প্রজাতন্ত্রে তাকে গ্রেফতারের পেছনে অভিযোগ করা হয়েছে, তিনি মার্কিন নাগরিক গুরপতওয়ান্ত সিং পান্নুকে সে দেশের মাটিতেই হত্যার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাটর্নি জেনারেলের দপ্তর এ নিয়ে যে অভিযোগপত্র প্রকাশ করেছে, তাতে লেখা হয়েছে, পরিকল্পনা করা ওই হত্যার জন্য গ্রেফতার ব্যক্তি একজন ভাড়াটে খুনি নিয়োগের চেষ্টা করেছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্র প্রাথমিক অভিযোগপত্র প্রকাশ করার পরেই নিখিল গুপ্তা ধরা পড়েন চেক প্রজাতন্ত্রে।
আরও পড়ুন>> কেন স্বাধীন রাষ্ট্র দাবি করে আসছেন শিখরা?
অভিযোগ, নিখিল নগদ এক লাখ মার্কিন ডলার দিয়ে এক ভাড়াটে খুনিকে হত্যাকাণ্ডের জন্য নিয়োগ করতে যাচ্ছিলেন। কিন্তু সেই ভাড়াটে খুনি আসলে ছিলেন একজন ছদ্মবেশী ফেডারেল এজেন্ট।
গোটা ঘটনায় নাম না করে ভারতীয় এক নিরাপত্তা কর্মকর্তা জড়িত থাকার কথাও অভিযোগপত্রে লেখা হয়েছে।
কী বলছে ভারত?
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচী এক বিবৃতিতে বলেছেন, মার্কিন নাগরিক হত্যার অভিযোগকে গুরুত্বসহকারে নিচ্ছে ভারত।
আরও পড়ুন>> এবার যুক্তরাষ্ট্রে শিখ নেতাকে হত্যার ষড়যন্ত্র, ভারতীয় গ্রেফতার
তিনি বলেন, আমরা আগেই উল্লেখ করেছি, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক নিরাপত্তা সহযোগিতা নিয়ে সংলাপের সময় তারা সংগঠিত অপরাধী, সন্ত্রাসী, অস্ত্র ব্যবসায়ী এবং অন্যান্যদের যোগসাজশ সম্পর্কে কিছু তথ্য দিয়েছিল। ভারত এই ঘটনার তদন্তের জন্য একটি বিশেষ তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
এর আগে, কানাডাও শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা হরদীপ সিং নিজ্জার হত্যাকাণ্ডে ভারত জড়িত থাকার অভিযোগ এনেছিল।
সূত্র: বিবিসি বাংলা
কেএএ/