পেরুর আন্দিজ হিমবাহের অর্ধেক বরফ গলে গেছে
গত ছয় দশকে পেরুর হিমবাহ পৃষ্ঠের অর্ধেকেরও বেশি গলে গেছে। দেশটির ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব রিসার্চ অব মাউন্টেন গ্লেসিয়ারস অ্যান্ড ইকোসিস্টেম বা ইনাইগেমের বরাত দিয়ে বুধবার (২২ নভেম্বর) বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) এ তথ্য জানায়।
এপির প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ২০১৬ থেকে ২০২০ সালে অর্থাৎ মাত্র চার বছরের মধ্যে পেরুর ১৭৫টি হিমবাহ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। আর এর একমাত্র কারণ জলবায়ু পরিবর্তন। সংস্থাটি আরও জানায়, এই গলনের ফলে বৈশ্বিক তাপমাত্রায় বড় ধরনের প্রভাব পড়বে।
গবেষণা সংস্থাটি জানায়, ১৯৬২ সালের পর থেকে ৫৮ বছরে দক্ষিণ আমেরিকার পশ্চিম-মধ্য অঞ্চলে অবস্থিত দেশটি হিমবাহের প্রায় ৫৬ দশমিক ২২ শতাংশ হারিয়ে গেছে। গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে গড় বৈশ্বিক তাপমাত্রার বৃদ্ধিকে হিমবাহ চ্যুতির কারণ হিসেবে দায়ী করা হয়।
দেশটিতে এখন ১ হাজার ৫০ বর্গ কিলোমিটার হিমবাহ বাকি আছে, যা ১৯৬২ সালে রেকর্ড করা আয়তনের মাত্র ৪৪ শতাংশ। হিম বিজ্ঞানের বিশেষজ্ঞ মেজিয়া বলছেন, পেরুতে কিছু হিমবাহ পর্বতশ্রেণী ছিল, যেগুলো এখন প্রায় অদৃশ্য হয়ে গেছে। এমনি একটি হিমবাহ ‘চিলা’। আমাজন নদীর উৎপত্তি হয়েছিল এই চিলা হিমবাহ থেকেই।
ইনগেমের প্রধান বিট্রিজ ফুয়েনটেলভা বলেন, হিমবাহের ক্ষতি নিম্নভূমি অঞ্চলে বসবাসকারীদের জন্য ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।
প্রসঙ্গত, ১৯৭০ সালে উত্তর আন্দিজ পর্বতমালার একটি তুষার খণ্ড ভেঙে ৭ দশমিক ৯ মাত্রার একটি ভূমিকম্প হয়েছিল, যার ফলে ইউগান শহরে প্রায় ২০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়।
২০১৯ সালে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল 'নেচার' এ প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে গোটা বিশ্বের হিমবাহগুলো যে হারে গলতে শুরু করেছে, বিশেষ করে, গত ৩০ বছর ধরে, তাতে আগামী শতাব্দীতে পৃথিবীর কোনো প্রান্তেই আর হিমবাহ খুঁজে পাওয়া যাবে না।
ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গোটা বিশ্বেই গত ৫৫ বছরে বড় বড় হিমবাহগুলি অত্যন্ত দ্রুত হারে গলে যাচ্ছে। উপগ্রহগুলোর পাঠানো তথ্যের ভিত্তিতে জানা গেছে, হিমবাহগুলো সবচেয়ে বেশি দ্রুত গলছে আলাস্কায়। তার পরেই রয়েছে গ্রিনল্যান্ড।
গ্রিনল্যান্ডের পুরু ও সুবিশাল বরফের চাঙরগুলোর ধার থেকে যে বিশাল বিশাল হিমবাহ সৃষ্টি হয়েছিল, সেগুলো গত ৫০ বছরে খুব দ্রুত হারে গলে গেছে। এছাড়া কানাডা, রাশিয়ার আর্কটিক এলাকা ও নরওয়েজিয়ান দ্বীপপুঞ্জ স্ভালবার্দের হিমবাহও দ্রুত গলে যাচ্ছে।
সূত্র: এপি
এসএএইচ