মিয়ানমারে তুমুল সংঘর্ষ, ভারতে পালাচ্ছে হাজারো বাসিন্দা
মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর সঙ্গে দেশটির জাতিগত সংখ্যালঘু বিদ্রোহীদের তুমুল সংঘর্ষ চলছে। সোমবার (১৩ নভেম্বর) মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর একাধিক চৌকিতে হামলা চালিয়েছে বিদ্রোহীরা। এমন পরিস্থিতিতে নিরাপত্তার আশায় প্রতিবেশী দেশ ভারতে আশ্রয় নিয়েছে মিয়ানমারের কয়েক হাজার মানুষ।
মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী জেলা চম্পাইয়ের প্রশাসক জেমস লালরিঞ্চানা বলেছেন, প্রায় ৫ হাজার মানুষ ভারতের মিজোরামে প্রবেশ করেছেন সংঘাত থেকে নিরাপদ আশ্রয়ের আশায়। এদিকে, সংঘাতের বিষয়ে মিয়ানমারের সামরিক সরকারের মুখপাত্রের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি।
রাখাইন রাজ্যের সায়ত্ত্বশাসনের দাবিতে সশস্ত্র সংগ্রামে লিপ্ত আরাকান আর্মির মুখপাত্র খাইন থু খা জানিয়েছেন, তাদের যোদ্ধারা রাথেদাউং ও মিনবিয়া এলাকায় দুটি ফাঁড়ির দখল নিয়েছে। অন্যান্য জায়গায় নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে আমাদের লড়াই চলছে।
আরও পড়ুন: বিদ্রোহীদের সঙ্গে লড়াইকালে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত
রাথেদাউংয়ের এক বাসিন্দা বলেন, নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহীদের সংঘর্ষ আরও দুটি জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে। সোমবার ভোরে গুলির শব্দ শোনা গেছে। পরে কয়েক ঘণ্টা গোলাবর্ষণ করা হয়। সামরিক বাহিনী ওই এলাকায় প্রবেশপথ বন্ধ করে দেয় ও প্রশাসনিক ভবনগুলোতে তাদের শক্তি বাড়ায়।
ভারতের সীমান্তবর্তী চিন রাজ্যেও সংঘাত শুরু হয়েছে। এখানে বিদ্রোহীরা দুটি সামরিক চৌকিতে হামলা চালিয়েছে বলে জানিয়েছেন একজন ভারতীয় কর্মকর্তা ও হামলার বিষয়ে অবগত দুটি সূত্র।
বলা হচ্ছে, জাতিগত বিদ্রোহীদের এসব হামলায় বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে মিয়ানমার জান্তা। অক্টোবরের শেষ দিকে জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো এই সমন্বিত হামলা শুরু করে। এরই মধ্যে তারা কয়েকটি শহর ও সামরিক ফাঁড়ি দখল করেছে।
আরও পড়ুন: সীমান্তে শান্তি বজায় রাখতে মিয়ানমারের ওপর চীনের চাপ
গত সপ্তাহে জান্তা মনোনীত প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন, বিদ্রোহীদের ঠেকাতে কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ার কারণে মিয়ানমার ভেঙে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। সেনাবাহিনীর দাবি, তারা সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে।
২০২১ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের আগ পর্যন্ত মিয়ানমারের চিন রাজ্য মোটামুটি শান্ত ছিল। কিন্তু অভ্যুত্থানের পর সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে হাজারো মানুষ অস্ত্র হাতে তুলে নেয়।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিদ্রোহীদের নতুন হামলা জান্তা সরকারের সেনাবাহিনীর জন্য আরেকটি বড় ধাক্কা। এমনিতেই দেশটির সেনাবাহিনী বিভিন্ন দায়িত্বে জড়িত, যা তাদের শক্তি ও সামর্থ্যের তুলনায় বেশি।
২৭ অক্টোবর শান রাজ্যে সমন্বিত জান্তাবিরোধী হামলা শুরু হয়। এরপরই মূলত চীন সীমান্তবর্তী এ রাজ্যের একাধিক শহর ও শতাধিক সামরিক ফাঁড়ির দখল নেয় সশস্ত্র বিদ্রোহীরা।
আরও পড়ুন: ‘আমার সাবেক প্রেমিকের চেয়েও মিয়ানমার সেনাবাহিনী খারাপ’
মিয়ানমারের মধ্যাঞ্চলীয় সাগাইং অঞ্চলেও হামলার ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া শনিবার কায়াহ রাজ্যে একটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার দাবি করেছে বিদ্রোহীরা। যদিও সেনাবাহিনী বলছে, কারিগরি ত্রুটির কারণে সেটি বিধ্বস্ত হয়েছে।
ক্রাইসিস গ্রুপ থিংক ট্যাংকের মিয়ানমার-বিষয়ক জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা রিচার্ড হর্সে বলেছেন, রাখাইনে লড়াইয়ের অভিজ্ঞতা রয়েছে সেনাবাহিনীর। কিন্তু শত্রুবাহিনী একাধিক এলাকায় হামলা চালালে জটিলতায় পড়তে পারে সেনাবাহিনী।
সূত্র: রয়টার্স
এসএএইচ