মিয়ানমারের বৈদেশিক আয়ের মূল উৎসে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা
মিয়ানমারের জান্তানিয়ন্ত্রিত তেল-গ্যাস কোম্পানি মিয়ানমার অয়েল অ্যান্ড গ্যাস এন্টারপ্রাইজের (এমওজিই) ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এর মাধ্যমে দেশটির সামরিক শাসকের বৈদেশিক রাজস্বের প্রধান উৎসে প্রথম সরাসরি আঘাত করলো মার্কিন সরকার।
মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ মন্ত্রণালয় এই নিষেধাজ্ঞার কথা জানায়। আগামী ১৫ ডিসেম্বর থেকে এটি কার্যকর হবে বলে। এর আগে ওয়াশিংটন এমওজিই’র মালিকানা নিয়ে প্রশ্ন তুললেও এবারই প্রথম প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে প্রথম কোনো সরাসরি পদক্ষেপ নিলো।
আরও পড়ুন: জান্তা সরকারকে অস্ত্র তৈরিতে সহায়তা করছে ১৩ দেশের কোম্পানি
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়, মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় তেল ও গ্যাস এন্টারপ্রাইজের বেশ কিছু আর্থিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে মার্কিন অর্থ মন্ত্রণালয়। এসবের মধ্যে রয়েছে, ঋণ, অ্যাকাউন্ট, বিমা, বিনিয়োগ ইত্যাদি।
মিয়ানমারের জান্তা সরকারের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের সবচেয়ে বড় উৎস হলো তেল ও গ্যাস। জান্তা সরকারের পরিসংখ্যান অনুসারে, শুধু এই খাত থেকে ২০২২ সালের ৩১ মার্চ থেকে ছয় মাসে ১৭২ কোটি ডলার আয় করেছে তারা। দেশটির তেল ও গ্যাস শিল্পের নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান এটি।
জানা গেছে, এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকরের পরে এমওজিইকে বিশেষভাবে মনোনীত প্রতিষ্ঠানের তালিকা থেকে বাদ দেবে যুক্তরাষ্ট্র। এর ফলে প্রতিষ্ঠানটি মার্কিন ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকেও বাদ পড়বে। তাছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এর বাণিজ্য সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হবে ও যুক্তরাষ্ট্রে এর সম্পত্তিও বাজেয়াপ্ত করা হবে।
আরও পড়ুন: মিয়ানমারের ওপর ইইউ’র নতুন নিষেধাজ্ঞা
যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন জাস্টিস ফর মিয়ানমারের মুখপাত্র ইয়াদানার মাউং। তিনি বলেন, এমওজিই’র বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের এ পদক্ষেপ তেল-গ্যাস খাত থেকে জান্তা যে বিপুল পরিমাণ তহবিল সংগ্রহ করতো, তা বন্ধ করে দেবে। যুক্তরাষ্ট্রের উচিত প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা।
মিয়ানমার জান্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপে নেতৃত্ব দেওয়া সিনেটর জেফ বার্কলি বলেছেন, মিয়ানমার তেল ও গ্যাস এন্টারপ্রাইজের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা একটি সঠিক পদক্ষেপ। মিয়ানমারের সামরিক জান্তার অস্ত্র কেনার ক্ষমতাকে আরও সীমাবদ্ধ করে দিতে আমাদের অবশ্যই এমওজিই থেকে রাজস্ব আহরণ সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিতে হবে।
এদিকে, যুক্তরাজ্য ও কানাডার সঙ্গে সমন্বিত পদক্ষেপে ওয়াশিংটন তিনটি সংস্থা ও পাঁচ ব্যক্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, যারা মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুক্ত ছিল বলে জানিয়েছে মার্কিন অর্থ মন্ত্রণালয়। তবে ওয়াশিংটনে মিয়ানমারের দূতাবাস তাৎক্ষণিকভাবে এসব পদক্ষেপের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
আরও পড়ুন: স্থায়ী মানবাধিকার সংকট তৈরি করেছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী: জাতিসংঘ
অ্যাসিসটেন্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজর্নাসের মতে, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে অভ্যুত্থানের পর থেকে জান্তা ও সামরিক সমর্থকগোষ্ঠীগুলোর হামলায় ৪ হাজার ১৬২ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। সেই সঙ্গে গ্রেফতার করা হয়েছে ২৫ হাজার ৩৬৩ জনকে।
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান
এসএএইচ