বাইডেনকে ভোট না দেওয়ার হুমকি আমেরিকান মুসলিমদের

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৪:২২ পিএম, ০১ নভেম্বর ২০২৩
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন /ছবি: সংগৃহীত

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচার হামলায় নগ্ন সমর্থন দেওয়ায় মুসলিমদের কাছে ক্রমেই জনপ্রিয়তা হারাচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এর মধ্যেই আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জো বাইডেনকে ভোট না দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন আমেরিকান মুসলিমরা।

মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) মিশিগান, ওহাইয়ো ও পেনসিলভানিয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যগুলোর ডেমক্রেটিক নেতাদের নিয়ে গঠিত ন্যাশনাল মুসলিম ডেমোক্রেটিক কাউন্সিল বাইডেনের প্রতি যুদ্ধবিরতি কার্যকরে নিজের প্রভাব কাজে লাগাতে আহ্বান জানায়। পাশাপাশি মুসলিম নেতারা গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকরে পদক্ষেপ না নিলে ২০২৪ সালের নির্বাচনে জো বাইডেনের জন্য মুসলিম ভোটারদের মধ্যে প্রচারণা না চালানোর ও অনুদান বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেন।

তাছাড়া ন্যাশনাল মুসলিম ডেমোক্র্যাটিক কাউন্সিলে মিশিগান, ওহাইয়ো ও পেনসিলভানিয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গরাজ্যের ডেমোক্র্যাটিক পার্টির নেতারা রয়েছেন। এই অঙ্গরাজ্যগুলো প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফল নির্ধারণে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কাউন্সিলটির পক্ষ থেকে বাইডেনের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের সময় মঙ্গলবার বিকাল ৫টার মধ্যে ইসরায়েলের ওপর মার্কিন প্রভাব কাজে লাগিয়ে একটি যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করার জন্য।

আরও পড়ুন: বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্য অর্জনে সংলাপ গুরুত্বপূর্ণ: যুক্তরাষ্ট্র

বিষয়টি নিয়ে ‘২০২৩ সিজফায়ার আলটিমেটাম’ শিরোনামের একটি খোলা চিঠি লিখেছেন আমেরিকান মুসলিম নেতারা। সেখানে তারা জোরালোভাবে বলেছেন, যেসব প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি আক্রমণে সমর্থন দেবেন, তাদের পক্ষে প্রচার, ভোট, সমর্থন, সহায়তা দেওয়া বন্ধ করে দেবেন।

খোলা চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, বাইডেন প্রশাসনের নিঃশর্ত সমর্থন, বিপুল অনুদান ও অস্ত্রশস্ত্র বেসামরিক নাগরিকদের মৃত্যুতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে, যা মুসলিম ভোটারদের বিশ্বাসভঙ্গ করেছে।

মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের ফিলিস্তিনি আমেরিকান আইনপ্রণেতা রাশিদা লাইব সোমবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে ৯০ সেকেন্ডের একটি ভিডিও পোস্ট করেন। সেখানে তিনি বাইডেনকে ফিলিস্তিনিদের পক্ষে সমর্থন দেওয়ার আহ্বান জানান। ওই ভিডিওতে তিনি আরও বলেন, ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের গণহত্যা বন্ধ না করলে ২০২৪ সালে আপনি (জো বাইডেন) আমাদের ভোট পাওয়ার আশা রাখবেন না।

আরও পড়ুন: গণতান্ত্রিক সংকট-মানবাধিকার লঙ্ঘন/ চার দেশের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি বাতিল করছে যুক্তরাষ্ট্র

বুধবার (১ নভেম্বর) মিনেসোটা সফরে যাওয়ার কথা রয়েছে বাইডেনের। ওই রাজ্যের মুসলিম আমেরিকানরাও যুদ্ধবিরতি নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে একই আলটিমেটাম দিয়েছেন। স্যাক্রামেন্টো ভ্যালি কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশনস (সিএআইআর) মিনেসোটার নির্বাহী পরিচালক জায়লানি হুসেইন বলেন, ২০২৪ সালের নির্বাচনে অন্যান্য রাজ্যের মুসলিম ভোটাররাও একই দাবি জানাবেন।

হুসেইন বলেন, আমরা আশা করছি, উইসকিনসিন, ওহাইয়োসহ অন্যান্য রাজ্যও একই দাবি জানাবে। যুদ্ধ থামাতে না বললে ২০২৪ সালে বাইডেনের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না আমাদের। ২০২০ সালের নির্বাচনে ৭০ শতাংশ মুসলিম আমেরিকান বাইডেনকে ভোট দিয়েছিলেন। কিন্তু ইসরায়েলি আগ্রাসনে সর্বাত্মক সমর্থন দিয়ে তিনি আমাদের আশাহত করেছেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০২৪ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে বাইডেনের জন্য মুসলিমদের ভোট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ২০২০ সালে মিশিগানের ১৬টি ইলেকটোরাল ভোট মাত্র ২ দশমিক ৬ শতাংশ ব্যবধানে জিতেছিলেন বাইডেন।

আরও পড়ুন: সহিংসতা এড়িয়ে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে জোর যুক্তরাষ্ট্রসহ ৭ দেশের

এই বিষয়ে বাইডেনের প্রচার শিবিরের তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে গত বৃহস্পতিবার (২৬ অক্টোবর) কয়েকজন মুসলিম নেতার সঙ্গে একটি বৈঠকে বসেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। হোয়াইট হাউজের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে আরব ও মুসলিম কমিউনিটির সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ ও বৈঠক চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

এদিকে, গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, চলমান ইসরায়েলি আগ্রাসনে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৩০৬ জনে। তাদের মধ্যে শিশুর সংখ্যা ৩ হাজার ৪৫৭। আহত হয়েছেন প্রায় ২১ হাজার জন। জাতিসংঘ কর্মকর্তারা বলছেন, গাজার ২৩ লাখের মধ্যে ১৪ লাখ মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছেন। এর আগে ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গাজা উপত্যকায় বোমাবর্ষণ করে ইসরায়েল ৫৩টি গণহত্যা চালিয়েছে।

সূত্র: রয়টার্স

এসএএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।