জার্মানিতে বাসস্থান সংকটে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৭:২৭ পিএম, ২৩ অক্টোবর ২০২৩
জার্মানির কোলন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের একাংশ/ ছবি সংগৃহীত

জার্মানির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শীতকালীন সেমিস্টার শুরু হয়েছে। কিন্তু বাসস্থান সংকটের কারণে হাজার হাজার শিক্ষার্থী থাকার জায়গা পাচ্ছেন না৷ আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের মধ্যে এ সংকট আরও বেশি।

এ বছরের শুরুতে এডুয়ার্ড পেস্টেল রিসার্চ ইনস্টিটিউটের এক গবেষণা জানায়, জার্মানিতে সাত লাখেরও বেশি অ্যাপার্টমেন্টের অভাব আছে, বিশেষ করে সাশ্রয়ী অ্যাপার্টমেন্টের৷ এছাড়া দেশটিতে বাসাভাড়া নাটকীয়ভাবে বাড়ছে, বিশেষ করে বড় বিশ্ববিদ্যালয় আছে এমন শহরগুলোতে।

আরও পড়ুন: অভিবাসন প্রত্যাশীদের দুঃসংবাদ দিলো জার্মানি

জার্মানির ছাত্র সংগঠন ডিএসডাব্লিউয়ের প্রধান মাটিয়াস আনবুল এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, বড় শহরগুলোতে শিক্ষার্থীদের জন্য সাশ্রয়ী বাসস্থানের অভাব শোচনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে। দেশটিতে শিক্ষার্থীদের জন্য ডিএসডাব্লিউয়ের প্রায় ১,৭০০ ছাত্রাবাস আছে৷ এগুলোতে এক লাখ ৯৬ হাজার জনের থাকার সুবিধা রয়েছে। থাকার সুযোগ পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন ৩২ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী।

jagonews24

জার্মান বার্তা সংস্থা ডয়েচে ভেলে বলছে, এ সমস্যা সমাধানে এগিয়ে এসেছে গ্যোটিঙ্গেন শহরের একটি ছাত্র সংগঠন। তারা একটি হোটেল ভাড়া করেছে, যেখানে শিক্ষার্থীরা অপেক্ষাকৃত কম ভাড়া দিয়ে থাকতে পারছেন৷ তবে শিক্ষার্থীরা সেখানে মাত্র কয়েক সপ্তাহ থাকতে পারেন।

অন্যদিকে মিউনিখের একটি ক্যাম্পিং সংগঠন শিক্ষার্থীদের কম টাকায় ক্যাম্প করার সুযোগ দিচ্ছে। মিউনিখে শিক্ষার্থীদের মাসে গড়ে ৭২০ ইউরো (প্রায় ৮৪ হাজার টাকা) বাসা ভাড়া দিতে হয়। কমমূল্যে ক্যাম্প করার সুযোগ দিচ্ছে৷

গত এক দশকে দ্বিগুণ হয়েছে ঘর ভাড়া

বার্লিনের ‘ফ্রি ইউনিভার্সিটি’র নতুন শিক্ষার্থী মার্লিন জানান, তিনি এখনও থাকার জায়গা পাননি৷ তাই বার্লিনের কাছাকাছি তার মা-বাবার বাড়িতে কিছুদিন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে থাকা তার খালার বাড়িতে কিছুদিন করে থাকছেন৷ তিনি বলেন, আমি মাসে ৫০০ ইউরো (সাড়ে ৫৮ হাজার টাকা) ভাড়া দিতে পারবো। কিন্তু বেশিরভাগ সময় দেখা যায়, বাড়িওয়ালারা এ টাকায় বাসা ভাড়া দিতে চায় না।

আরও পড়ুন: জার্মানিতে অভিবাসন নীতি নিয়ে বাড়ছে অসন্তোষ

২১ বছর বয়সি আরেক শিক্ষার্থী এলি বলেন, আমি এখন সাবলেট থাকছি৷ কিন্তু এ বছরের মধ্যেই আমাকে অন্য জায়গা খুঁজতে হবে৷ বিষয়টি সহজ হবে না, কারণ বার্লিনে একটি শেয়ারড অ্যাপার্টমেন্টের ঘর ভাড়া এখন প্রায় ৬৫০ ইউরো (প্রায় ৭৬ হাজার টাকা)৷ গত এক দশকে এই ভাড়া প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে৷ গতবছরও এই ভাড়া প্রায় ১০০ ইউরো কম ছিল, বলে মোসেস মেন্ডেলসজোন ইনস্টিটিউট ও ফ্ল্যাটশেয়ার প্ল্যাটফর্ম wg-gesucht.de এর গবেষণায় দেখা গেছে৷

jagonews24

জার্মানির কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী ঋণ ও সহায়তা স্কিমের (বিএএফও্যজি) আওতায় বর্তমানে বাসস্থান বাবদ ৩৬০ ইউরো দেওয়া হচ্ছে৷

বার্লিনের ছাত্র সংগঠনের মুখপাত্র ইয়ানা ইয়ুডিশ ডয়চে ভেলেকে বলেন, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ছাত্রাবাসে আসন পাওয়ার আবেদন দিন দিন বাড়ছে৷ এই সংগঠন প্রায় নয় হাজার শিক্ষার্থীর থাকার ব্যবস্থা করতে পারে৷ অপেক্ষমাণ তালিকায় আছে প্রায় পাঁচ হাজার শিক্ষার্থী৷ থাকার জায়গা পেতে তিন সেমিস্টার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে৷ ইয়ুডিশ আরও বলেন, অনেক শিক্ষার্থী থাকার জন্য শহর থেকে অনেক দূরে চলে যাচ্ছে। তারা যাতায়াতে দীর্ঘ সময় ব্যয় হওয়ার বিষয়টিও মেনে নিচ্ছে৷

বিপদে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা

ফ্রি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সোশ্যাল অ্যাফেয়ার্স অন দ্য জেনারেল স্টুডেন্ট কমিটি’ বা এএসটিএর প্রতিনিধি টোমাস শ্মিট বলছেন, এএসটিএর কাছে শিক্ষার্থীদের নিয়ে আসা সমস্যাগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো বাসস্থানের অভাব৷ কিছু শিক্ষার্থী তাদের মা-বাবার কাছ থেকে পাওয়া আর্থিক নিশ্চয়তা ব্যবহার করে থাকার জায়গা ভাড়া নিতে পারছেন৷ কিন্তু বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য এটি একটি বড় সমস্যা, কেননা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তারা আর্থিক নিশ্চয়তা দিতে পারেন না।

আরও পড়ুন: জার্মানির ছোট শহর-গ্রামাঞ্চলে কর্মী সংকট

এমন পরিস্থিতিতে টোমাস শ্মিট চান, নতুন ছাত্রাবাস নির্মাণ ও পুরনোগুলো সংস্কারের জন্য বার্লিনের সিনেট অর্থ বরাদ্দ দিক৷ এছাড়া, বার্লিনে বাসা ভাড়ার ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট সীমা বেঁধে দেওয়ার পুরনো নিয়মটি আবারও চালু করা হোক।

jagonews24

জার্মানির ছাত্র সংগঠন ডিএসডাব্লিউর ভাইস সেক্রেটারি জেনারেল স্টেফান গ্রব জানিয়েছেন, গত ১২ থেকে ১৫ বছরে জার্মানিতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় দশ লাখ বেড়ে ২৯ লাখে পৌঁছেছে৷ কিন্তু তাদের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো তৈরিতে বিনিয়োগ করা হয়নি বলে মন্তব্য করেন তিনি৷

স্টেফান গ্রব আরও বলেন, আমরা হয়তো একটি দুই শ্রেণির সমাজে পরিণত হতে যাচ্ছি, যেখানে ধনি ব্যক্তিরা চাইলে পড়াশোনা করতে পারবে আর অন্যরা পারবে না৷ এমনটা হলে বিষয়টি বিপর্যয়কর হবে, কারণ তখন কেউ পড়তে পারবেন কিনা সেই সিদ্ধান্ত দেবে টাকা, মেধা ও স্মার্টনেস নয়।

সংকট নিরসনে জার্মান সরকারের উদ্যোগ

জার্মানির কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী ঋণ ও সহায়তা স্কিমের (বিএএফও্যজি) আওতায় বর্তমানে বাসস্থান বাবদ ৩৬০ ইউরো দেওয়া হচ্ছে৷ ছাত্র সংগঠন ডিএসডাব্লিউ চায়, এই বরাদ্দ বাড়ানো হোক৷ তবে তারা এটিও স্বীকার করছেন যে, মাত্র ১০-১১ শতাংশ শিক্ষার্থী এই স্কিমের সুবিধা পাওয়ার উপযুক্ত৷

শিক্ষার্থী, শিক্ষানবীশ ও প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়া পুলিশ কর্মকর্তাদের সাশ্রয়ী ভাড়ায় থাকার ব্যবস্থা করতে জার্মানির জোট সরকার ২০২৩ সালের জন্য ৫০০ মিলিয়ন ইউরো ভর্তুকি ঘোষণা করেছে৷ গৃহায়ন, নগর উন্নয়ন ও ভবন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২০২৪ ও ২০২৫ সালের জন্যও এই পরিমাণ অর্থ ভর্তুকি হিসেবে দেওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে৷

আরও পড়ুন: খসড়া আইন পাস, পাঁচ বছরেই মিলবে জার্মান নাগরিকত্ব

ডিএসডাব্লিউর ভাইস সেক্রেটারি জেনারেল স্টেফান গ্রবের মতে, থাকার জায়গা পেতে শিক্ষার্থীদের বয়স্ক মানুষ, ছোট পরিবার, নিম্ন আয়ের মানুষ, শরণার্থী ও অন্যদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে হচ্ছে৷ ফলে আমরা যে সমস্যাটার কথা বলছি সেটি শুধু উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থার সমস্যা নয়, এটি একটি সামাজিক সমস্যা৷

সূত্র: ডয়েচে ভেলে

এসএএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।