আল-জাজিরার বিশ্লেষণ

ফিলিস্তিনবিরোধী গুজব বেশি ছড়ানো হচ্ছে ভারত থেকে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৫:২৯ পিএম, ১৬ অক্টোবর ২০২৩
ছবি সংগৃহীত

কথায় বলে, যুদ্ধে প্রথম ভুক্তভোগী হয় সত্য। ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধও এর ব্যতিক্রম নয়। গত ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস ইসরায়েলে হামলা চালানোর পর থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভুল তথ্যের বন্যা বয়ে যায়। এর বেশিরভাগই ছিল ফিলিস্তিনবিরোধী ও ইসলামবিদ্বেষী পোস্ট। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার অনুসন্ধান বলছে, এসব গুজবের একটি বড় অংশ ছড়ানো হয়েছিল ভারতভিত্তিক ডানপন্থি অ্যাকাউন্টগুলো থেকে।

এসব ভুয়া গল্পের মধ্যে ছিল হামাস এক ইহুদি শিশুকে অপহরণ করছে, আরেক শিশুকে ট্রাকের পেছনে নিয়ে শিরশ্ছেদ করছে, ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা একদল তরুণীকে যৌনদাসী করে রেখেছেন- এমন আরও অনেক কিছু। নীল টিকচিহ্নধারী অ্যাকাউন্টগুলো থেকে ভাইরাল করা হয় এসব মিথ্যা তথ্য।

ইসলামবিদ্বেষী ‘ডিজইনফ্লুয়েন্সার’দের উত্থান
ভারতের অন্যতম খ্যাতিসম্পন্ন ফ্যাক্ট চেকিং সার্ভিস বুম সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে (সাবেক টুইটার) এ ধরনের বিভ্রান্তিকর প্রচারণার বেশ কয়েকটি নজির খুঁজে পেয়েছে।

যেসব তথাকথিত ইনফ্লুয়েন্সার নিয়মিত ভুল তথ্য শেয়ার করেন, তাদের ‘ডিজইনফ্লুয়েন্সার’ নাম দিয়েছে বুম। সংস্থাটির মতে, এসব ডিজইনফ্লুয়েন্সার মূলত ফিলিস্তিনকে নেতিবাচকভাবে টার্গেট করে অথবা ইসরায়েলের সমর্থনে প্রচারণা চালায়। এরা ফিলিস্তিনিদের নৃশংস হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করে।

আরও পড়ুন>> ‘নিরীহ’ ইসরায়েলিদের পাশে দাঁড়ালো ভারত

উদাহরণস্বরূপ- ‘ফিলিস্তিনি’ যোদ্ধারা কয়েক ডজন মেয়েকে যৌনদাসী করে আটকে রেখেছে, এমন দাবি করা একটি ভিডিও ছড়ানো হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। অথচ সত্যটা হলো, এটি জেরুজালেমে একটি স্কুল ট্রিপের ভিডিও। একটু খেয়াল করলেই দেখা যাবে, ভিডিওতে থাকা মেয়েরা হাসিমুখে গল্প করছে এবং ফোন ব্যবহার করছে।

এরপরও, ভিডিওটি কয়েক হাজারবার রিটুইট করা হয়েছে, দেখা হয়েছে ৬০ লাখেরও বেশিবার। বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ভিডিওটি শেয়ার করা অ্যাকাউন্টগুলোর বেশিরভাগই ভারতীয়।

এমনকি, ভিডিওটি অ্যাংরি স্যাফ্রনের টেলিগ্রাম চ্যানেলেও শেয়ার করা হয়েছিল। এটি একটি আপাত ওপেন-সোর্স ইন্টেলিজেন্স বা ওএসআইএনটি চ্যানেল, যা ভারত থেকে পরিচালিত হয়।

আরও পড়ুন>> ভারতের মানুষ ইসরায়েলের পক্ষে, নেতানিয়াহুকে জানালেন মোদী

আরেকটি ভাইরাল ভিডিওতে দাবি করা হয়, হামাস যোদ্ধারা এক ইহুদি শিশুকে অপহরণ করছে। এর শুধু একটি পোস্টই ১০ লক্ষাধিকবার দেখা হয়েছে। মিথ্যা ভিডিওটি সবচেয়ে বেশিবার শেয়ার হওয়া ১০টি টুইটের মধ্যে সাতটিই ভারতকেন্দ্রিক অথবা অ্যাকাউন্টের বায়োতে ভারতীয় পতাকা ছিল।

এই সাতটি টুইট মোটমাট ৩০ লক্ষাধিকবার দেখা হয়েছে। অথচ, ভিডিওটি ছিল গত সেপ্টেম্বর মাসের এবং এর সঙ্গে অপহরণ বা গাজার কোনো সম্পর্কই ছিল না।

ইসলামবিদ্বেষ, ভারত ও সোশ্যাল মিডিয়া
সোশ্যাল মিডিয়া এক্সে ভুয়া ভিডিও শেয়ার করা বহু অ্যাকাউন্টই দীর্ঘসময় ধরে মুসলিমবিরোধী মন্তব্য করে গেছে।

হামাস যোদ্ধারা এক শিশুকে শিরশ্ছেদ করছেন দাবি করে ছড়ানো ভুয়া ভিডিও শেয়ার করা হয়েছিল ‘সিনহা_’ নামে একটি অ্যাকাউন্ট থেকে। ওই পোস্টেই হ্যাশট্যাগ দিয়ে লেখা হয়েছিল ‘ইসলাম ইজ দ্য প্রবলেম’, অর্থাৎ ইসলামই সমস্যা!

আরও পড়ুন>> ইসরায়েলের হয়ে যুদ্ধে যেতে চায় বহু ভারতীয়

ফিলিস্তিনিরা মেয়েদের যৌনদাসী করে রেখেছে দাবি করে বিভ্রান্তিকর ভিডিও শেয়ার করা একটি অ্যাকাউন্টে আগের এক পোস্টে লেখা হয়েছিল: ‘একমাত্র পার্থক্য হলো, মুসলিম মেয়েরা যখন হিন্দু ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়, তখন তারা সুখে থাকে। কিন্তু হিন্দু মেয়েরা যখন ইসলাম গ্রহণ করে, তখন তাদের শেষ ঠিকানা হয় স্যুটকেস অথবা ফ্রিজ।’

অন্যান্য পোস্টে ফিলিস্তিনের প্রতি তাদের বিদ্বেষে আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। একজন অবসরপ্রাপ্ত ভারতীয় সৈনিকের অ্যাকাউন্ট থেকে লেখা হয়েছে, ‘ইসরায়েলকে অবশ্যই পৃথিবী থেকে ফিলিস্তিনকে নিশ্চিহ্ন করতে হবে।’

jagonews24

নেপথ্যে বিজেপির ‘আইটি সেল’?
ভারতে ইসলামবিদ্বেষের অভিযোগ নতুন নয়, বিশেষ করে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) শাসনামলে তা আরও বেশি আলোচনায় এসেছে।

অস্ট্রেলিয়া-ভিত্তিক ইসলামিক কাউন্সিল অব ভিক্টোরিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসলামবিদ্বেষী টুইটগুলোর বেশিরভাগ উৎসই ভারতে।

আরও পড়ুন>> ইসরায়েল-ফিলিস্তিন ইস্যুতে হঠাৎ কেন সুর বদল ভারতের?

ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ শুরুর পর এটি আরও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। এর পেছনে বিজেপির ‘আইটি সেল’-এর আংশিক অবদান রয়েছে বলে উল্লেখ করেছে আল-জাজিরা।

স্বাতী চতুর্বেদী তার বই ‘আই অ্যাম এ ট্রল’-এ বিজেপির সোশ্যাল মিডিয়া বাহিনী সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। সাধবী খোসলা নামে এক সাক্ষাৎকারদাতা তাকে বলেছেন, বিজেপির স্বেচ্ছাসেবকদের একটি নেটওয়ার্ক রয়েছে, যারা সমালোচনামূলক কণ্ঠকে ট্রল করার জন্য সোশ্যাল মিডিয়া সেল এবং দুটি অনুমোদিত সংস্থা থেকে নির্দেশনা নেয়।

খোসলার দাবি, ক্রমাগত ‘নারীবিদ্বেষ, ইসলামবিদ্বেষ ও ঘৃণা’র চাপে ক্লান্ত হয়ে সেই ‘আইটি সেল’ ত্যাগ করেছিলেন তিনি।

কেএএ/

টাইমলাইন  

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।