এবার দক্ষিণ চীন সাগরে ব্যারিয়ার বসালো চীন
চলমান উত্তেজনার মধ্যেই দক্ষিণ চীন সাগরে ব্যারিয়ার বসিয়েছে বেইজিং। প্রায় সম্পূর্ণ সাগরের মালিকানা দাবি করে মানচিত্র প্রকাশের প্রায় এক মাসের মাথায় এমন কাজ করলো দেশটি। এ অঞ্চলের আরেক দেশ ফিলিপাইনের দাবি, আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী নিজেদের সার্বভৌম এলাকার মধ্যে না পড়লেও ওই এলাকায় ব্যারিয়ার বসিয়েছে চীন।
দক্ষিণ চীন সাগরের তীরবর্তী দেশ ফিলিপাইন। অন্যান্য দেশের মতো দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে চীনের সঙ্গে উত্তেজনা চলছে দেশটির। ফিলিপাইন কোস্টগার্ডের মুখপাত্র জায়ে তারিয়েলা এক এক্স বার্তায় (পূর্বে টুইটার) বলেছেন, সাগরের স্কারবোরোফ শোয়াল এলাকায় ভাসমান ব্যারিয়ার স্থাপন করার কারণে আমাদের দেশের মৎস্যজীবীরা মাছ ধরতে পারছে না।
তিনি আরও বলেন, আন্তর্জাতিক সমুদ্র আইনে এ এলাকা চীনের সার্বভৌম এলাকার মধ্যে পড়ে না। এমন পরিস্থিতিতে সমুদ্র অধিকার ও উপকূলীয় স্বার্থ রক্ষায় দক্ষিণ চীন সাগরের উপকূলবর্তী অন্য দেশগুলোকে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
বেশ কয়েক বছর ধরে দক্ষিণ চীন সাগরের সীমানা নিয়ে চীনের সঙ্গে টানাপড়েন চলছে ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, জাপান, ব্রুনাই, ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনের। চীনের পাশাপাশি এ দেশগুলোও এ সাগরের মালিকানা দাবি করে। চীনের নতুন মানচিত্র প্রকাশের পর এ সংক্রান্ত উত্তেজনা ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে।
গত ২৮ আগস্ট আনুষ্ঠানিকভাবে নিজেদের ভূখণ্ডের মানচিত্র হালনাগাদ করে চীন। সেখানে ভারতের অরুণাচল প্রদেশ ও আকসাই চিন অঞ্চলকে চীনের অংশ হিসেবে দেখানো হয়েছে। একই সঙ্গে দক্ষিণ চীন সাগরের বিভিন্ন বিতর্কিত দ্বীপসহ প্রায় ৯০ শতাংশ এলাকা নিজেদের বলে দাবি করেছে বেইজিং।
মানচিত্রে দক্ষিণ চীন সাগরের একটি বড় অংশের মালিকানা দাবি করেছে চীন। এই সাগরের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে এই অঞ্চলে ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা বেশ পুরোনো।
মানচিত্রটি প্রকাশের পরপরই ব্যাপক সমালোচনার পাশাপাশি তীব্র প্রতিবাদ জানায় ভারত। সেই সঙ্গে নতুন মানচিত্রটি প্রত্যাখ্যান করে মোদী সরকার। ভারতের সঙ্গে এক কাতারে দাঁড়ায় ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া ও ফিলিপাইন।
দক্ষিণ চীন সাগর বিশ্বের একটি প্রধান সমুদ্র পথ। জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন বিষয়ক সংস্থা আংকটাডের অনুমান, বিশ্বের মোট বাণিজ্যের প্রায় ২১ শতাংশ ২০১৬ সালে এই সমুদ্র পথে হয়েছে। সংস্থাটি আরও বলছে, এ পথে হওয়া বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় ৩ দশমিক ৩৭ ট্রিলিয়ন ডলার।
এছাড়া এখানে প্রচুর মৎস্য সম্পদ রয়েছে, যার ওপর ভিত্তি করে পুরো অঞ্চলের লাখ লাখ মানুষ তাদের জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে। বিবিসির তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের প্রায় অর্ধেক মাছ ধরা জাহাজ ও নৌকা এ সাগরে চলাচল করে।
তাছাড়া এ সাগরের মালিকানা নিয়ে বিরোধের অন্যতম কারণ হলো, প্যারাসেল ও স্প্র্যাটলি দ্বীপপুঞ্জ। দীপপুঞ্জ দুটি প্রায় মানব বসতিহীন হলেও, এগুলোর আশেপাশেই প্রচুর প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে বলে ধারণা করা হয়।
সূত্র: আল জাজিরা, বিবিসি
এসএএইচ