জি২০ সম্মেলনের নামফলকে ‘ইন্ডিয়া’র বদলে ‘ভারত’
ইন্ডিয়া নাকি ভারত? গত ৫ সেপ্টেম্বর থেকেই দেশটির এই দুই নাম নিয়ে রীতিমত বিতর্ক শুরু হয়। এ নিয়ে বেশ তোলপাড় চলছে রাজনৈতিক মহলেও। ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার ‘ইন্ডিয়া’ নাম বাদ দিতে চায় এমন গুঞ্জন আগে থেকেই শোনা যাচ্ছে। সম্প্রতি ভারতের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর দুটি নথি সামনে আসতেই এই জল্পনা আরও তীব্র হয়েছে।
শনিবার (৯ সেপ্টেম্বর) জি২০ সম্মেলনের মঞ্চেও নতুন করে এই আলোচনা আরও উসকে দেওয়া হলো। সম্মেলনে মোদীর সামনে যে নামফলক রাখা হয়েছে সেখানে ইংরেজিতে ইন্ডিয়া না লিখে লেখা হয়েছে ভারত। এই ঘটনায় স্বাভাবিক ভাবেই সবার মনে প্রশ্ন উঠেছে যে, মোদী সরকার কী আসলেই দেশের নাম পরিবর্তন করতে যাচ্ছে? তবে এখনই এ বিষয়ে তেমন কিছুই জানা যায়নি।
আরও পড়ুন: ইন্ডিয়া নাকি ভারত, আলোচনা তুঙ্গে
গত মঙ্গলবার রাতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ইন্দোনেশিয়া সফরসূচির ছাপানো সরকারি কার্ডে তাকে ‘প্রাইম মিনিস্টার অব ইন্ডিয়া’র পরিবর্তে ‘প্রাইম মিনিস্টার অব ভারত’ লেখা হয়।
দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম শক্তিধর দেশ ভারত। দেশটির ইংরেজি নাম ইন্ডিয়া। দেশের সংবিধানে ইন্ডিয়া ও ভারত দুটি নামেরই উল্লেখ আছে। সম্প্রতি জি-২০ সম্মেলনে নেতাদের নৈশভোজের আমন্ত্রণপত্রের একটি ছবি ভারতে ব্যাপকভাবে ভাইরাল হয়। এতে লেখা হয়েছে প্রেসিডেন্ট অব ভারত।
কংগ্রেসের দাবি, ওই আমন্ত্রণপত্রে চিরাচরিতভাবে প্রেসিডেন্ট অব ইন্ডিয়ার পরিবর্তে লেখা হয়েছে প্রেসিডেন্ট অব ভারত। এই প্রেক্ষিতে প্রশ্ন ওঠে, আসন্ন বিশেষ অধিবেশনে কী এই সংক্রান্ত প্রস্তাব পেশ করতে চলেছে নরেন্দ্র মোদীর সরকার?
ভারতের রাষ্ট্রপতি কাউকে কোনো চিঠি লিখলে তাতে চিরাচরিতভাবে লেখা থাকে ‘প্রেসিডেন্ট অব ইন্ডিয়া’ কথাটি। কিন্তু জি২০ নেতাদের আমন্ত্রণ জানানোর চিঠিতে লেখা হয়েছে ‘প্রেসিডেন্ট অব ভারত’।
এরপরেই প্রশ্ন উঠেছে, হঠাৎ এমন বদলের কারণ কি? এই বিষয় নিয়েই বিজেপিকে তুমুল আক্রমণ করেছেন কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক জয়রাম রমেশ। এক্স-এ (সাবেক টুইটার) রমেশ বলেন, তা হলে যেটা শুনেছিলাম, সেটাই সত্যি! আগামী ৯ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপতি ভবনে জি-২০ নেতাদের নৈশভোজের আমন্ত্রণপত্রে লেখা হয়েছে ‘প্রেসিডেন্ট অব ভারত’, অথচ চিরাচরিতভাবে ‘প্রেসিডেন্ট অব ইন্ডিয়া’ লেখার কথা।
কংগ্রেসের এই আক্রমণের সঙ্গে সঙ্গেই আরও একটি জল্পনা শুরু হয়েছে। তা হলো, সংসদের আসন্ন বিশেষ অধিবেশনে কী দেশটির নাম ইন্ডিয়া থেকে সব ভাষাতেই ভারত করার প্রস্তাব আনতে চলেছে মোদী সরকার? বিশেষ অধিবেশন কী কারণে তা এখনও স্পষ্ট নয় কারও কাছেই।
অনেকের দাবি, ‘এক দেশ এক ভোট’ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিল আনা হতে পারে। অনেকেরই আবার দাবি, নারী সংরক্ষণ বিল পেশ হতে পারে। এই প্রেক্ষিতেই জি-২০ নেতাদের নৈশভোজে আমন্ত্রণের চিঠিতে ভারতের রাষ্ট্রপতির আমন্ত্রণপত্র ঘিরে নতুন জল্পনা দানা বাঁধতে শুরু করেছে। যদিও শুরু থেকেই এ বিষয়ে সরকারের মুখে কুলুপ।
বিজেপিবিরোধী দলগুলো যে জোট তৈরি করেছে তার নাম দেওয়া হয়েছে ‘ইন্ডিয়া’। এতে কংগ্রেস, তৃণমূল, শিবসেনা (উদ্ধব শিবির), এনসিপি, এসপি, জেডিইউ, ডিএমকের মতো একাধিক বিজেপি-বিরোধী দল রয়েছে। প্রথমে পাটনা, তারপর বেঙ্গালুরু হয়ে ইন্ডিয়ার নেতারা সম্প্রতি মুম্বাইয়েও মিলিত হয়ে বিশদে আলোচনা সেরেছেন। তৈরি হয়েছে সমন্বয় কমিটিও।
আগামী লোকসভা ভোটে ইন্ডিয়া মোদীর বিজেপিকে কড়া টক্করের মুখে ফেলতে চলেছে বলে বিশ্বাস বিরোধী নেতাদের। চুপ নেই বিজেপিও। ‘ইন্ডিয়া’ নামটি নিয়ে একাধিকবার সরাসরি কটাক্ষ করেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। তাতে গলা মিলিয়েছেন বিজেপির বড় বড় নেতারা। এবার কী সেই ইন্ডিয়া নাম বদলে দেশের নাম শুধু ভারত করার লক্ষ্যে হাঁটতে শুরু করল মোদী সরকার?
দেশের ইংরেজি নাম পাল্টে ‘ইন্ডিয়া’র জায়গায় ‘ভারত’ করা হবে কি না, এ নিয়ে তুমুল বিতর্ক চলছে। এর মধ্যেই ‘ইন্ডিয়া’ নাম পরিবর্তন নিয়ে মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক। গত শুক্রবার (৮ সেপ্টেম্বর) ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভিকে তিনি বলেন, ভারত নাম পরিবর্তনের সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করার পর জাতিসংঘ তাদের নথিপত্রে ‘ইন্ডিয়া’র পরিবর্তে ‘ভারত’ করে দেবে।
দিল্লির জি-২০ সম্মেলনে অংশ নিতে গিয়ে স্টিফেন ডুজারিক বলেন, এ বিষয়ে মন্তব্য করা জাতিসংঘের কাজ নয়। বিষয়টি মূলত আমলাতান্ত্রিক বিষয়। ভারতের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়ে গেলে জাতিসংঘও নথিপত্রে নাম পরিবর্তন করবে।’
আরও পড়ুন: ভারতের নাম পরিবর্তন নিয়ে যা বললো জাতিসংঘ
তবে বিশ্বে ভারতই প্রথম দেশ নয় যারা নিজেদের নাম পরিবর্তন করতে যাচ্ছে। রাজনৈতিক, সামাজিকসহ বিভিন্ন কারণে নাম পরিবর্তন করেছে এমন দেশের তালিকা বেশ লম্বা। তাদের মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে নাম পরিবর্তন করেছে তুরস্ক।
তুরস্কের কথা উল্লেখ করে জাতিসংঘের এ কর্মকর্তা বলেন, গত বছর তুরস্ক নাম পরিবর্তন করে ‘তুর্কি’ থেকে ‘তুর্কিয়ে’ করেছে। বিশ্বের অনেক দেশে বহুবার এরকম ঘটনা ঘটেছে।
টিটিএন