ইতিহাসের সবচেয়ে উষ্ণ গ্রীষ্ম পার করলো বিশ্ব
তীব্র গরমে পুড়ছে ঢাকাসহ গোটা বাংলাদেশ। একই অবস্থা এশিয়ার অন্য দেশগুলোতেও। দুদিন আগেই নিজেদের ইতিহাসে সবচেয়ে উষ্ণ গ্রীষ্মকাল পার করার কথা জানিয়েছে হংকং। এবার জানা গেলো, শুধু চীনের এ শহরটি নয় কিংবা এশিয়াও নয়- এ বছর ইতিহাসের উষ্ণতম গ্রীষ্মকাল পার করেছে পুরো বিশ্ব। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এবারের গ্রীষ্মের উত্তাপ অতীতের সব রেকর্ড ভেঙেছে, তা-ও বেশ বড় ব্যবধানে।
১৯৪০ সাল থেকে বৈশ্বিক তাপমাত্রার হিসাব রাখছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোপারনিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিস। সংস্থাটি জানিয়েছে, ২০২৩ সালের জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত সময়কাল ছিল পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে উষ্ণতম।
আরও পড়ুন>> গলে যাচ্ছে হিমালয়ের বরফ, ঝুঁকিতে বাংলাদেশসহ এশিয়ার ২০০ কোটি মানুষ
কোপারনিকাসের তথ্যমতে, এবারের গ্রীষ্মে বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৬ দশমিক ৭৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস (৬২ দশমিক ১০ ডিগ্রি ফারেনহাইট)। এটি ১৯৯০ থেকে ২০২০ সালের মধ্যকার গড়ের তুলনায় ০.৬৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং ২০১৯ সালের রেকর্ডগড়া তাপমাত্রার চেয়ে ০.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি।
বিজ্ঞানীরা এই পরিস্থিতিকে অনেক আগে থেকেই ‘অনিবার্য’ বলে ধরে নিয়েছিলেন। তবে এ সংক্রান্ত বৈজ্ঞানিক তথ্য মিললো এবারই প্রথম।
আরও পড়ুন>> সবচেয়ে বেশি গরমের মুখে দক্ষিণ এশিয়ার শিশুরা: জাতিসংঘ
এবারের গ্রীষ্মে উত্তর গোলার্ধে যুক্তরাষ্ট্রের একাংশ, ইউরোপ, জাপানসহ বিভিন্ন দেশে প্রাণ ওষ্ঠাগত করে তুলেছিল ভয়ংকর গরম। এসব অঞ্চলে রেকর্ডভাঙা দাবদাহের পাশাপাশি অভূতপূর্ব হারে সমুদ্রের তাপমাত্রা বাড়তে দেখা গেছে।
পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে উষ্ণতম জুন মাস ছিল এ বছর, একই রেকর্ড গড়ে জুলাইও। উভয় মাসই আগের উষ্ণতম মাসের রেকর্ড ভেঙেছে বিশাল ব্যবধানে। সেই ধারা অব্যাহত রেখে ইতিহাসের সবচেয়ে উষ্ণতম আগস্ট মাসও দেখা দিয়েছে এ বছর।
আরও পড়ুন>> ২০৫০ সালের মধ্যে অসম্ভব হয়ে উঠতে পারে ঘরের বাইরে কাজ করা
কোপারনিকাসের তথ্য বলছে, ২০২৩ সালের জুলাই বাদে বাকি সব মাসের চেয়ে উষ্ণতম ছিল আগস্ট। এই মাসে বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা ছিল ১৬ দশমিক ৮২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা ২০১৬ সালের রেকর্ড গড়া তাপমাত্রার চেয়ে ০.৩১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি।
জুলাই এবং আগস্ট উভয় মাসের তাপমাত্রাই ছিল প্রাক-শিল্প যুগের তুলনায় ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি উষ্ণ। বিজ্ঞানীরা এই মাত্রার উষ্ণতার বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরেই সতর্ক করে আসছিলেন। তাদের মতে, উষ্ণতার এই সীমা অতিক্রম করলে পৃথিবীতে জলবায়ু পরিবর্তনের ধ্বংসাত্মক প্রভাব দেখা দিতে পারে।
আরও পড়ুন>> বৃষ্টির অভাব/ ভারতের চাল-ডাল রপ্তানিতে আরও কড়াকড়ির শঙ্কা
দক্ষিণ গোলার্ধে এ বছর শীতকাল ছিল আগের তুলনায় উষ্ণ। এসময়ে অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আমেরিকার কিছু দেশ এবং অ্যান্টার্কটিকায় স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি গড় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।
শুধু ভূপৃষ্ঠে নয়, বিশ্বের সামুদ্রিক গড় তাপমাত্রাও বেড়েছে ব্যাপকভাবে। ফলে শক্তিশালী হয়েছে আটলান্টিকের হারিকেন এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের টাইফুনগুলো।
আরও পড়ুন>> চীনের পর জাপানেও উষ্ণতার রেকর্ড, চোখ রাঙাচ্ছে এল নিনো
কোপার্নিকাস জানিয়েছে, জুলাইয়ের শেষ থেকে আগস্টের শেষ পর্যন্ত প্রতিদিনই সামুদ্রিক তাপমাত্রা ২০১৬ সালে গড়া আগের রেকর্ডকে ছাড়িয়ে গেছে।
এ অবস্থায় ২০২৩ সাল পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে উষ্ণতম হবে কি না তা এখনো পরিষ্কার নয়। তবে এটি যে রেকর্ডের কাছাকাছি পৌঁছাচ্ছে, তা নিশ্চিত।
আরও পড়ুন>> পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে উষ্ণ দিনের নতুন রেকর্ড
বছরের চার মাস বাকি থাকতেই পৃথিবীর ইতিহাসে দ্বিতীয় উষ্ণতম বছরের স্বীকৃতি পেয়েছে ২০২৩ সাল। ২০১৬ সালের রেকর্ড থেকে মাত্র ০.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস নিচে রয়েছে এটি।
বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছেন, এল নিনোর প্রভাবে আগামী বছর হতে পারে এর চেয়েও উষ্ণ।
সূত্র: সিএনএন
কেএএ/