রবীন্দ্রনাথের ‘বাংলার মাটি বাংলার জল’ গানের কথায় কেন বদল চান মমতা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৮:১৬ পিএম, ৩০ আগস্ট ২০২৩
ছবি সংগৃহীত

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘বাংলার মাটি বাংলার জল’ গানটির কয়েকটি শব্দ বদল করে সেটিকে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সঙ্গীত হিসেবে ব্যবহার করা যায় কি না, তার প্রস্তাব দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী। পশ্চিমবঙ্গের জন্য পহেলা বৈশাখ দিনটিকে ‘বাংলা দিবস’ এবং রাজ্য সঙ্গীত হিসেবে ‘বাংলার মাটি বাংলার জল’ গানটি গ্রহণ করার জন্য গত মঙ্গলবার (২৯ আগস্ট) সর্বদলীয় এক বৈঠকে এই প্রস্তাব দেন তৃণমূল সুপ্রিমো।

বৈঠকে পহেলা বৈশাখকে বাংলা দিবস হিসেবে গ্রহণ করা হলেও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গানের শব্দ পরিবর্তন নিয়ে মতপার্থক্য দেখা দেয়। মুখ্যমন্ত্রী এ নিয়ে সবার মতামত জানতে চেয়েছেন। তারপরেই প্রস্তাবটি আনুষ্ঠানিকভাবে রাজ্য বিধানসভায় তোলা হবে।

তবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা গানের শব্দ বদল করতে চাওয়া নিয়েই শুরু হয়েছে বিতর্ক।

ভারতের সবচেয়ে গরিব মুখ্যমন্ত্রী মমতা

‘বাঙালির’ পরিবর্তে ‘বাংলার’ চান মমতা
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গের প্রতিবাদ জানিয়ে হিন্দু-মুসলিমদের নিয়ে যে রাখি বন্ধন উৎসব করেছিলেন, সেই উপলক্ষ্যেই তিনি লিখেছিলেন ‘বাংলার মাটি বাংলার জল বাংলার বায়ু, বাংলার ফল – পুণ্য হউক, পুণ্য হউক, পুণ্য হউক হে ভগবান’ গানটি।

এই গানে ‘বাঙালির পণ বাঙালির আশা’ এবং ‘বাঙালির প্রাণ, বাঙালির মন’ যে লাইনগুলোতে রয়েছে, সেখানে বাঙালি শব্দটির পরিবর্তে বাংলা বসিয়ে ‘বাংলার পণ বাংলার আশা’ ইত্যাদি করা যায় কি না, তা ভেবে দেখার কথা বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী।

বৈঠকে মমতা বলেন, রাখি বন্ধনের জন্য রবীন্দ্রনাথ যখন গানটি লিখেছিলেন, তখন তিনি সব সমাজকে নিয়ে কথা বলেছিলেন, যারা বাংলায় কথা বলেন। কিন্তু এখন বাংলায় (পশ্চিমবঙ্গে) বিভিন্ন জাতি, সম্প্রদায়, ধর্মের মানুষ বাস করেন। তিনি বেঁচে থাকলে বলতেন ‘বাংলার’।

তাই বাঙালির প্রাণ, বাঙালির মন-এর জায়গায় বাংলার প্রাণ বাংলার মন বাংলার ঘরে যত ভাইবোন – এটি ব্যবহার করতে পারি কি না, মতামত চাইবো, বলেন মুখ্যমন্ত্রী।

কিন্তু এটি নিয়ে মতান্তর হওয়ার ফলে বৈঠকে দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের ‘ধন ধান্যে পুষ্পে ভরা আমাদের এই বসুন্ধরা’ গানটিকে রাজ্য সঙ্গীত হিসেবে বিবেচনা করার প্রস্তাবও দিয়েছেন মমতা ব্যানার্জী।

সাহিত্য সাধনা ছাড়াও কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছবি আঁকতে পছন্দ করতেন। তুলি হাতে রবীন্দ্রনাথ  ছবি আঁকায় নিমগ্ন রয়েছেন।

‘রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে টানাটানি কেন?’
রবীন্দ্রনাথের গানে মুখ্যমন্ত্রীর শব্দ বদলের প্রস্তাব সামনে আসতেই এ নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক। রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী এবং বিশেষজ্ঞদের অনেকেই মনে করছেন, রবীন্দ্রনাথের গানের শব্দ বদল করা উচিত নয়, সেটি অন্যায়।

কেউ একধাপ এগিয়ে বলেছেন, শুধু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নন, যেকোনো স্রষ্টার সৃষ্টিকেই পরিবর্তন করা অনুচিত। এটি ভাবাও অন্যায়।

ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেসের ভেতরেও কেউ কেউ বলছেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গান নিয়ে কাটাছেঁড়া না করাই উচিত।

শিল্পীদের বেশ কয়েকজন এই রাজনৈতিক বিতর্কে জড়াতে চাননি, তাই মন্তব্য করা থেকে বিরত থেকেছেন।

তবে রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী শুভপ্রসাদ নন্দী মজুমদার বলেন, শুধু রবীন্দ্রনাথ কেন, যেকোনো স্রষ্টার সৃষ্টিকে কেউ পাল্টাতে পারেন না। সেটি তার নিজের রচনা। প্রয়োজনে নতুন একটি রচনা করা যেতে পারে। সেই নতুন রচনায় হয়তো অনুপ্রেরণা থাকতে পারে, যেমন রবীন্দ্রনাথের গানের অনুপ্রেরণা দেখতে পাই সলিল চৌধুরীর গানে, আবার লালনের কোনো গানের অনুপ্রেরণা হয়তো কবীর সুমনের গানে পাবো।

‘কিন্তু অন্যের সৃষ্টির ওপরে কলম চালানোর অধিকার কারও নেই। সেটি রাজনীতিবিদ হোন বা সরকারি কর্তাব্যক্তি।’

তিনি আরও বলেন, আমাদের মুখ্যমন্ত্রী তো নিজে গান লেখেন, সুর করেন, গানও করেন। তিনি নিজেই একটা গান লিখতে পারেন। রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে টানাটানি কেন? এটি সম্পূর্ণ অনভিপ্রেত, অন্যায়।

বাংলা দিবস
রাজ্য সঙ্গীত নিয়ে আলোচনার সঙ্গেই পশ্চিমবঙ্গের জন্য একটি বিশেষ দিনকে ‘বাংলা দিবস’ হিসেবে পালন করার উদ্যোগ নিয়েছে রাজ্য সরকার। বিধানসভা একটি কমিটি তৈরি করেছিল এ দুটি বিষয়ে পরামর্শ দেওয়ার জন্য। তাদের পরামর্শ অনুযায়ী পহেলা বৈশাখ তারিখে বাংলা দিবস পালনের প্রস্তাব এসেছে।

হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো এবং কেন্দ্রীয় সরকার অবশ্য এ বছর থেকে জোরেশোরে ২০ জুন দিনটিকে পশ্চিমবঙ্গ দিবস হিসেবে পালন করছে। ওই তারখেই ১৯৪৭ সালে অবিভক্ত বাংলার আইনসভায় বাংলা ভাগ নিয়ে ভোটাভুটি হয়েছিল।

সূত্র: বিবিসি বাংলা
কেএএ/

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।