ওএসডি হলেন ইমরান খানকে কারাদণ্ড দেওয়া বিচারক
তোশাখানা দুর্নীতি মামলায় পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে তিন বছরের কারাদণ্ড দেওয়া বিচারক হুমায়ুন দিলাওয়ারকে অফিসার অন স্পেশাল ডিউটি (ওএসডি) হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন ইসলামাবাদ হাইকোর্ট (আইএইচসি)। শুক্রবার (২৫ আগস্ট) নতুন পদ সৃষ্টি করে তাকে ওএসডি হিসেবে নিয়োগ দেন আইএইচসি’র প্রধান বিচারপতি আমির ফারুক।
বিচারক হুমায়ুন দিলাওয়ার জানান, ইমরান খানের বিরুদ্ধে রায় দেওয়ার পর থেকেই তাকে ও তার পরিবারকে বিভিন্ন মাধ্যমে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে নিজের ও পরিবারের নিরাপত্তার জন্য এ বিচারক তাকে অন্য যে কোনো জায়গায় বদলি করার আবেদন করেন। বিশেষ করে জুডিশিয়াল কমপ্লেক্স জি-১১ ভবনে অবস্থিত বিশেষ আদালত বা ইসলামাবাদ হাইকোর্টে বদলির আবেদন করেন তিনি।
আরও পড়ুন: ইমরান খানের কারাদণ্ডের রায়ে গুরুতর ত্রুটি ছিল
এদিকে, তোশাখানা দুর্নীতি মামলায় ইমরান খানের সাজা স্থগিতের ওপর গতকাল শুনানি করেছেন ইসলামাবাদ হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি ফারুক ও বিচারপতি তারিক মেহমুদ জাহাঙ্গিরির সমন্বয়ে গঠিত দুই সদস্যের বেঞ্চ। শুনানির শুরুতে আইএইচসির প্রধান বিচারপতি বলেন, সাজা স্থগিতের আবেদন এখন সূক্ষ্ম পর্যায়ে রয়েছে। দায়রা জজ আদালত যা করেছেন, তা আমরাও করতে পারি। কিন্তু আমরা তেমনটি করবো না।
রায়ের বিষয়ে দায়রা জজ আদালত ভুল করেছেন উল্লেখ করে বিচারপতি ফারুক বলেন, আমরা সোমবার (২৮ আগস্ট) পর্যন্ত মামলার শুনানি স্থগিত করছি। কেউ না এলেও আমরা আমাদের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করব।
আরও পড়ুন: কারাগারে ইমরান খানকে বিষপ্রয়োগ করা হতে পারে: বুশরা বিবি
এর আগে বুধবার (২৩ আগস্ট) পৃথক আরেক শুনানিতে পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি (সিজেপি) উমর আতা বন্দিয়াল বলেছিলেন, তোশাখানা দুর্নীতি মামলায় ইমরান খানের বিরেুদ্ধে দেওয়া রায়ে গুরুতর ত্রুটি রয়েছে। জেলা ও দায়রা জজ আদালত তাড়াহুড়ো করে এক দিনেই রায় ঘোষণা করেছিলেন।
গত ৫ আগস্ট তোশাখানা দুর্নীতি মামলায় ইমরান খানকে দোষী সাব্যস্ত করে তিন বছর কারাদণ্ডের রায় দেন অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ (এডিএসজে) হুমায়ুন দিলাওয়ার। রায় ঘোষণার পরপরই ইমরান খানকে গ্রেফতার করা হয়। একই সঙ্গে পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) এ নেতাকে পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করে দেশটির নির্বাচন কমিশন (ইসিপি)।
আরও পড়ুন: প্রয়োজনে ১০০০ বছর জেলে থাকতে রাজি ইমরান খান
গত শতকের সত্তরের দশকে পাকিস্তানের সরকারি একটি বিভাগ হিসেবে তোশাখানা প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই বিভাগটি প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, আইনপ্রণেতা, সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধান ও অন্যান্য বিশিষ্ট জনদের দেওয়া উপহার জমা রাখে।
তোশাখানার নিয়ম অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট, মন্ত্রী, আইনপ্রণেতা বা সরকারের পদস্থ কর্মকর্তাদের পাওয়া সব উপহার অবশ্যই এই বিভাগে জমা দিতে হবে। যারা এসব উপহার পান তারা পরে এগুলো নামমাত্র মূল্যে কিনে নিতে পারেন।
তোশাখানা থেকে কোনো উপহার কিনে নেওয়ার পর সেটি অন্য কারো কাছে বিক্রি করাকে অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হয় পাকিস্তানের আইনে। ইমরান খানের বিরুদ্ধে তোশাখানা বিতর্কের শুরু হয় ২০২১ সালে। ওই সময় দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ও তার স্ত্রী বুশরা বিবি রাষ্ট্রীয় তোশাখানা থেকে বিদেশিদের দেওয়া বিভিন্ন উপহার নামমাত্র মূল্যে কিনে নেন। পরে তারা সেসব উপহার উচ্চ দামে বিক্রি করে দেন।
আরও পড়ুন: এবার ইমরান খানের বিরুদ্ধে গোপন নথি ফাঁসের অভিযোগ
মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, ইমরান তোশাখানা থেকে যে উপহারগুলো কিনে নিয়েছিলেন তার বিবরণ ইচ্ছাকৃতভাবে গোপন করেছেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন এ কাজ করেন ও উপহার বিক্রি থেকে তিনি মোটা অঙ্কের টাকা আয় করেছেন।
সূত্র: ডন, জিও নিউজ
এসএএইচ