দ্য ইকোনমিস্টের প্রতিবেদন

চীননির্ভরতা থেকে ভারত বের হয়ে আসতে পারবে কি?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৪:৪৩ পিএম, ১৭ আগস্ট ২০২৩

চীন ও ভারতের মধ্যে সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না। ২০২০ সালে সীমান্তে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর থেকেই দেশ দুটির মধ্যে সম্পর্কের বেশ অবনতি হয়েছে। ১৯৬৭ সালের পর দেশ দুটির মধ্যে যা সবচেয়ে ভয়াবহ সংঘর্ষ। ২০২১ ও ২০২২ সালেও সীমান্তে ভারত ও চীনের সেনাদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এর প্রভাব পরে দুই দেশের বাণিজ্যে। ভারতের ভোক্তারা চীনের সস্তা পণ্যের ওপর নির্ভরশীল।

তাছাড়া ভারতের কোম্পানিগুলো সস্তা ইনপুটের ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে ভবিষ্যৎ ইন্ডাস্ট্রির ক্ষেত্রে।

চীনের কাছে ক্রাস্টেসিয়ান, তুলা, গ্রানাইট, হীরা ও পেট্রোল বিক্রি করে ভারত। চীন ভারতকে মেমরি চিপ, ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট ও ওষুধের উপাদানও পাঠায়। ফলে দেশ দুটির মধ্যে যে বাণিজ্য তা ভারসাম্য নয়। ২০২২ সালে ভারত ও চীনের মধ্যে ১১৭ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য হয়েছে। যার ৮৭ শতাংশ গেছে চীন থেকে।

আরও পড়ুন>বোরখা পরে ওয়াশরুমে ঢুকে নারীদের ভিডিও ধারণ, যুবক আটক

ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী চীনের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে চান। এর একটি কারণ হলো কৌশলগত, অন্যটি বাণিজ্যিক। অর্থাৎ অভ্যন্তরীণ উৎপাদনে গুরুত্ব দিতে চান মোদী। সম্প্রতি ভারত সরকার অর্থনীতিকে প্রতিবেশী দেশটি থেকে বিচ্ছিন্ন করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এরই অংশ হিসেবে আগস্টের শুরুতে কম্পিউটার ও ল্যাপটপ আমদানির ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করে ভারত। ক্যামেরা ও প্রিন্টারের ক্ষেত্রেও তারা একই পদক্ষেপ নিচ্ছে বলে জানা গেছে।

আনুষ্ঠানিকভাবে চীনের ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য ভারতের বাজার উন্মুক্ত। বিশেষ করে ভারতের আইন অনুযায়ী। তবে কিছু টুল ব্যবহার করে চীনের ব্যবসাকে কঠিন অথবা অসম্ভব করে তুলতে চাইছে ভারত সরকার। বিভিন্ন ইস্যুতে বিধিনিষেধ আরোপের চেষ্টা করছে ভারত। যেমন ২০২০ সালের সংঘর্ষের পর জাতীয় নিরাপত্তার ইস্যু তুলে চীনের শতাধিক অ্যাপ নিষিদ্ধ করে ভারত। একইভাবে ২০২২ ও চলতি বছর শত শত চীনা অ্যাপ নিষিদ্ধ করে দেশটি।

অন্য একটি কৌশলগত পরিচিত পদক্ষেপ হলো শুল্কারোপ। ২০১৮ সালে মোবাইলের ডিভাইস আমদানির ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে ভারত। একই ভাবে ২০২০ সালে খেলনা আমদানির ওপর শুল্ক বাড়িয়ে তিনগুণ করে। যার অধিকাংশই আসতো চীন থেকে। চলতি বছর এ হার আরও বাড়ানো হয়েছে।

আরও পড়ুন>সিঙ্গাপুরে ১০ বিদেশি গ্রেফতার, বিপুল সম্পদ জব্দ

চীনের আধিপত্য কমাতে আরও কিছু নীতিগ্রহণ করেছে ভারত। এরই অংশ হিসেবে উৎপাদন খাতে ৩৩ বিলিয়ন ডলার প্রণোদনা প্রকল্প নিয়েছে দেশটি। এসব খাতে বর্তমানে চীনের একচেটিয়া আধিপত্য রয়েছে।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ভারতের ওষুধ শিল্পের কথা। কারণ দেশটির ওষুধ প্রস্তুতকারীরা এর অধিকাংশ উৎপাদন চীন থেকে সংগ্রহ করে। ফেব্রুয়ারিতে ভারত সরকার কিছু কোম্পানিকে অর্থ দেওয়া শুরু করেছে। কারণ তারা উপাদানগুলো দেশের ভেতরে উৎপাদন করতে রাজি হয়েছে। ইলেকট্রনিক্সের ক্ষেত্রেও একই পদক্ষেপ নিচ্ছে দেশটি। মূলত দেশের ভেতরে উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

এমন পরিস্থিতিতে অনেক চীনা কোম্পানিই ভারত থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছে। ২০২২ সালে দুই বছর চেষ্টার পর গ্রেটওয়াল মোটরস ভারতে কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। যদিও উল্লেখযোগ্য কিছু কোম্পানি বিভিন্নভাবে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছে।

এমএসএম

 

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।