কোন অপরাধে তিন বছরের সাজা ইমরান খানের?
আদালতের রায়ে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পরপরই শনিবার (৫ আগস্ট) লাহোরের জামান পার্কের বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) চেয়ারম্যান ইমরান খানকে। তার বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে একাধিক মামলা চলছে। তবে এদিন তোশাখানা মামলায় অপরাধী প্রমাণিত হওয়ায় তিন বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে ৭০ বছর বয়সী নেতা।
ইমরান খানকে গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে তার দল পিটিআই। এক টুইটে তারাটি জানিয়েছে, পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে সম্ভবত আদিয়ালা কারাগারে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
আরও পড়ুন>> হুইলচেয়ার ছুড়ে ফেলে ধাক্কাতে ধাক্কাতে গাড়িতে তোলা হয় ইমরানকে
এদিন শুনানির শুরুতেই ইমরান খানের জামিন আবেদন খারিজ করে দেন আদালত। সেই সঙ্গে তোশাখানা মামলায় পিটিআই চেয়ারম্যানকে অভিযুক্ত করে তিন বছরের কারদণ্ড দেন অতিরিক্ত ও দায়রা জজ বিচারক হুমায়ুন দিলাওয়ার।
এর আগে, গত বছরের অক্টোবরে একই মামলায় দোষী সাব্যস্ত করে ইমরান খানকে পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচনের অযোগ্য ঘোষণা করেছিল দেশটির নির্বাচন কমিশন (ইসিপি)।
আরও পড়ুন>> আদালতের চক্করে ইমরান খান
যে অপরাধে সাজা
পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় তোশাখানা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৭৪ সালে। এটি পরিচালনা করে দেশটির মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। অন্যান্য দেশের সরকার ও রাজ্যের প্রধান, সংসদ সদস্য, আমলা, কর্মকর্তাসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিদের দেওয়া মূল্যবান উপহার তোশাখানায় সংরক্ষণ করা হয়।
নিয়ম অনুসারে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের পাওয়া উপহার বা এ জাতীয় অন্যান্য উপকরণগুলোর বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে রিপোর্ট করা বাধ্যতামূলক।
অভিযোগ উঠেছে, পিটিআই সরকারে থাকাকালে ইমরান খানের পাওয়া উপহারের যথাযথ বিবরণ প্রকাশ করেনি। এমনকি এ বিষয়ে পাকিস্তান তথ্য কমিশনের (পিআইসি) নির্দেশও উপেক্ষা করেছিল তারা।
আরও পড়ুন>> গ্যালাপের জরিপ: পাকিস্তানের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা ইমরান খান
সরকারি তোশাখানায় উপহার ও সেগুলোর কথিত বিক্রয় থেকে আয় সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য না দেওয়ায় ইমরান খানের বিরুদ্ধে গত আগস্টে একটি মামলা করে জোট সরকার। ক্ষমতাসীন পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক মুভমেন্টের আইনপ্রণেতারা জাতীয় পরিষদের স্পিকার রাজা পারভেজ আশরাফের কাছে এ অভিযোগ জমা দেন। এরপর তিনি পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সেটি পাঠান প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে।
পরে, গত ৮ সেপ্টেম্বর ইসিপি’তে জমা দেওয়া লিখিত জবাবে ইমরান খান প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে তার পাওয়া কমপক্ষে চারটি উপহার বিক্রি করার কথা স্বীকার করেন।
আরও পড়ুন>> ইমরান খানকে সংসদ সদস্য পদের অযোগ্য ঘোষণা
পাকিস্তানের সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী জানান, তিনি রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ২ কোটি ১৫ লাখ রুপি দেওয়ার পরে যে উপহারগুলো সংগ্রহ করেছিলেন, সেগুলো বিক্রি করে প্রায় ৫ কোটি ৮০ লাখ রুপি পেয়েছেন। এসব উপহারের মধ্যে একটি গ্রাফ হাতঘড়ি, এক জোড়া কাফ লিংক, একটি দামি কলম, একটি আংটি এবং চারটি রোলেক্স ঘড়ি ছিল।
শনিবার বিচারক দিলাওয়ার তার রায়ে বলেছেন, পিটিআই চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে সম্পদের ভুল তথ্য দেওয়ার অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। তিনি দুর্নীতি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। নির্বাচনী আইনের ১৭৪ ধারার অধীনে পিটিআই প্রধানকে তিন বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে এক লাখ রুপি জরিমানাও করা হয়েছে।
সূত্র: জিও নিউজ, ডন
কেএএ/