ফিলিস্তিনকে বড় ছাড় না দিলে সৌদি-ইসরায়েল চুক্তি সম্ভব নয়
ইরায়েলসহ যুক্তরাষ্ট্রের বহু দিনের চাওয়া, সৌদি-ইসরায়েলের সম্পর্ক স্বাভাবিকীরণ চুক্তি। তবে এ নিয়ে অনেক আলোচনা হলেও, খুব শিগগির চুক্তিটি হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে মন্তব্য করেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ইসরায়েলি কর্মকর্তা। আর এ ক্ষেত্রে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ইস্যু অর্থাৎ, ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলের দখলদারিত্ব বন্ধসহ রিয়াদের আরও কিছু শর্তকে প্রধান বাধা হিসেবে দেখা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ চুক্তির আগে ইসরায়েলের ওপর বেশকিছু শর্ত দিতে পারে রিয়াদ। যার মধ্যে থাকতে পারে– ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে দখলদারিত্ব বন্ধ, পশ্চিম তীরকে ইসরায়েলি ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত না করার মতো বিষয়। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা, এসব শর্তে ইসরায়েলের কট্টর ডানপন্থি সরকারের সম্মত না হওয়ার সম্ভাবনা-ই বেশি।
আরও পড়ুন: রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ/ ৩০ দেশ নিয়ে শান্তি আলোচনায় বসবে সৌদি আরব
এদিকে, গত শুক্রবার (২৮ জুলাই) মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় রিয়াদ-তেল আবিবের সম্পর্ক উন্নয়ন ও একটি চুক্তি হতে পারে। তবে এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করেনি সৌদি আরব।
ইসরায়েলভিত্তিক সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েল বলছে, এক মাস আগেও পুরো ভিন্ন কথা বলেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। গত ৯ জুলাই সিএনএনে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জো বাইডেন বলেছিলেন, সম্পর্ক স্বাভাবিককরণ চুক্তি থেকে এখনো অনেক দূরে সৌদি ও ইসরায়েল।
বলা হচ্ছে, এ চুক্তির জন্য শুধু বাইডেন নন, মুখিয়ে রয়েছে ইসরায়েলও। গত শুক্রবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বলেছিলেন, সৌদি যদি চায়, তাহলে এ চুক্তি খুব দ্রুতই হতে পারে। এতে দুই দেশেরই ব্যাপক অর্থনৈতিক সুবিধা হবে, বদলে যাবে গোটা আরব বিশ্ব। সৌদিসহ লাভবান হবে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র। সেই সঙ্গে ইরানকে নিয়ন্ত্রণ করাও অনেক সহজ হয়ে যাবে।
আরও পড়ুন: এরদোয়ানের সফর: তুরস্ক থেকে ড্রোন কিনছে সৌদি
এ চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য এরই মধ্যে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান ও মধ্যপ্রাচ্যের রাষ্ট্রদূত ব্রেট ম্যাকগার্ককে জেদ্দায় পাঠিয়েছেন বাইডেন। সেখানে সৌদি যুবরাজের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।
এর আগে গত জুনে একই ইস্যুতে সৌদি আরব সফর করেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন। সে সময় সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান বলেছিলেন, ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য শান্তির ব্যবস্থা না করে তেল আবিবের সঙ্গে চুক্তি হলে, তা খুব এটা সুফল বয়ে আনবে না।
টম ফ্রিডম্যান নামে মার্কিন প্রেসিডেন্টের ঘনিষ্ঠ সহচর গত বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) নিউইয়র্ক টাইমসের একটি কলামে লিখেছেন, ফিলিস্তিনকে দেওয়া ছাড়ের মধ্যে ইসরায়েলকে একটি সরকারি প্রতিশ্রুতি দিতে বলতে পারে রিয়াদ। এতে উল্লেখ থাকবে, পশ্চিম তীরকে কখনোই নিজ ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করবে না ইসরায়েল। এছাড়া পশ্চিম তীরে বসতি স্থাপনের সীমানা আর বাড়ানো যাবে না।
আরও পড়ুন: সৌদি-রাশিয়ার ঘোষণায় ফের বাড়লো জ্বালানি তেলের দাম
তার মতে সৌদি আরও শর্ত দেবে যে, ইসরায়েল কোনো অবৈধ ফাঁড়ি বৈধ করতে পারবে না ও পশ্চিম তীরের ‘সি’ নামক এলাকাসহ ফিলিস্তিনের জনবহুল কিছু অঞ্চল ছেড়ে দিতে হবে, যা অসলো চুক্তির অধীনে এখন ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে।
এছাড়া, শর্তের মধ্যে সৌদির বেসামরিক পারমাণবিক কর্মসূচি চালুর বিষয়টিও উঠে আসতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল শুরু থেকেই রিয়াদের এ দাবির বিরোধিতা করে আসছে।
এর আগে টাইমস অব ইসরায়েলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ওয়াশিংটনের কাছ থেকে আরও উন্নত অস্ত্র ও সামরিক প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি কিনতে চায় রিয়াদ। এসবের মধ্যে রয়েছে টার্মিনাল হাই অল্টিটিউড এরিয়া ডিফেন্স ও অ্যান্টিব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, যা ইরানের ক্রমবর্ধমান পারমাণবিক অগ্রগতির বিরুদ্ধে ব্যবহার করা যেতে পারে।
আরও পড়ুন: সম্পর্ক জোরদারে প্রিন্স সালমানের সঙ্গে ব্লিঙ্কেনের বৈঠক
২০২০ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চুক্তি সই করেছিল সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, সুদান ও মরক্কো। কিন্তু সৌদি আরব এ দেশগুলোকে অনুসরণ করেনি। তারা আনুষ্ঠানিকভাবে আরব লীগের আদর্শ ও নীতি মেনে চলার অঙ্গীকার করেছে। তাদের দাবি, ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার আগে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
সূত্র: টাইমস অব ইসরায়েল
এসএএইচ