বিশ্বের ৭৫ শতাংশ বাঘের বাস এখন ভারতে, বেড়েছে নেপাল-ভুটানেও
বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য সাফল্য পেয়েছে ভারত ও ভুটান। বাঘ বেড়েছে নেপালেও। এক দশকে বাঘের সংখ্যা দ্বিগুণ করেছে তারা।
পরিসংখ্যান বলছে, ভারতে বর্তমানে বাঘ রয়েছে মোটমাট ৩ হাজার ৬৮২টি। অর্থাৎ, বিশ্বের প্রায় ৭৫ শতাংশ বাঘের বসবাসই এখন দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম দেশটিতে। ২৯ জুলাই আন্তর্জাতিক বাঘ দিবস উপলক্ষে এই তথ্য প্রকাশ করেছে ভারতের বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। তারা জানিয়েছে, ভারতে প্রতি বছর ছয় শতাংশ হারে বাঘের জনসংখ্যা বাড়ছে।
আরও পড়ুন>> সুন্দরবনে বাঘ গণনায় স্থাপিত আট ক্যামেরা গায়েব
বাঘের সংখ্যা এভাবে বৃদ্ধি পাওয়া ভারতের জন্য একটি বড় সাফল্য হিসেবেই দেখা হচ্ছে। কারণ নির্বিচারে শিকার ও বাসস্থান ধ্বংসের কারণে ১৯৭০-এর দশকে দেশটিতে বাঘের সংখ্যা নেমে গিয়েছিল দুই হাজারেরও নিচে।
ভারতের কেন্দ্রীয় বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী ভূপেন্দ্র যাদব বলেছেন, বাঘ সংরক্ষণে ভারতের অনুকরণীয় প্রচেষ্টা ও বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি শুধু একটি পরিসংখ্যানই নয়, বরং গোটা জাতির সংকল্প ও প্রতিশ্রুতির প্রমাণ।
বাঘের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে হিমালয় সংলগ্ন ছোট্ট দেশ ভুটানেও। ২০১৫ সালের পর থেকে ২৭ শতাংশ বেড়ে দেশটিতে এখন বাঘের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৩১টি।
আরও পড়ুন>> জন্মদিনে চিতাবাঘ মুক্ত করলেন নরেন্দ্র মোদী
ডব্লিউডব্লিউএফ-ভুটানের কান্ট্রি ডিরেক্টর চিমি রিনজিনের মতে, এটি একটি উল্লেখযোগ্য অর্জন এবং অত্যন্ত সুস্থ বাস্তুতন্ত্র থাকার ইঙ্গিত।
তবে বাঘের সংখ্যা সবচেয়ে দ্রুত হারে বেড়েছে দক্ষিণ এশিয়ার আরেক দেশ নেপালে। দেশটিতে ২০০৯ সালে বাঘের সংখ্যা ছিল ১২১টি। কিন্তু ২০২২ সালেই তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৫৫টিতে।
এ অঞ্চলে বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধিকে স্বাগত জানিয়েছে গোটা বিশ্ব। কারণ ১০০ বছর আগেও এশিয়ায় বাঘের সংখ্যা ছিল এক লাখের মতো। কিন্তু এ শতাব্দীর শুরুতে সেই সংখ্যা ৯৫ শতাংশ কমে যায়। এর জন্য বৈধ ও অবৈধ শিকার, সেই সঙ্গে আবাসস্থল হারানোকে দায়ী করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
আরও পড়ুন>> বাংলাদেশে বাঘের সংখ্যা বাড়লেও লক্ষ্য থেকে অনেক দূরে
ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচারের হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে এশিয়ায় বাঘের সংখ্যা ৩৭২৬ থেকে ৫৫৭৮ এর মধ্যে হবে।
বাঘকে বিলুপ্তির হাত থেকে বাঁচাতে ২০১০ সালে বাংলাদেশসহ ১৩টি দেশ ২০২২ সালের মধ্যে বাঘের সংখ্যা দ্বিগুণ করার লক্ষ্য নেয়। কিন্তু এ পর্যন্ত একমাত্র নেপালই সেই লক্ষ্য পূরণ করতে পেরেছে।
কিন্তু স্থানীয় মানুষকে তার জন্য অনেক মূল্য দিতে হচ্ছে। কারণ, যেসব এলাকায় বাঘ সংরক্ষণের চেষ্টা চলছে, সেসব জায়গায় হিংস্র প্রাণীটির হাতে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা ও মৃত্যু বেড়ে গেছে।
সরকারি হিসাবমতে, ভারতে ২০১৯ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে ১০০ জনেরও বেশি বাঘের আক্রমণে প্রাণ হারিয়েছেন।
আরও পড়ুন>> খালি হাতে লড়াই করে বাঘের মুখ থেকে সন্তান ছিনিয়ে আনলেন মা
একই ভয় নেপাল-ভুটানের ক্ষেত্রেও। ভুটানের জাতীয় বাঘ সমীক্ষা রিপোর্ট এবং ডব্লিউডব্লিউএফ বলেছে, বাঘের বিকাশ অব্যাহত রাখতে হলে মানুষ-বাঘ দ্বন্দ্বের সমাধান করতে হবে। সংঘাত বাড়লে বাঘের প্রতি সহনশীলতা কমে যায় এবং স্থানীয় মানুষ ও বাঘ উভয়ের জন্যই তা হুমকি হয়ে দাঁড়ায়।
সূত্র: বিবিসি
কেএএ/