কোরআন অবমাননা: জাতিসংঘের প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধিতা
সুইডেনে কোরআন পোড়ানো ও তা নিয়ে মুসলিম দেশগুলোতে সৃষ্ট ক্ষোভের পরিপ্রেক্ষিতে ধর্মীয় বিদ্বেষ ও গোঁড়ামির বিরোধিতায় একটি প্রস্তাব পাস হয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদে (ইউএনএইচআরসি)। এ প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে বাংলাদেশ। বুধবার (১২ জুলাই) ইউএনএইচআরসির অধিবেশনে প্রস্তাবটি পাস হয়।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনসহ অধিকাংশ দেশ এ প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিলেও, বিপক্ষে ভোট দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলো। তারা বলেছে, এ প্রস্তাব মানবাধিকার ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
মঙ্গলবার (১১ জুলাই) ইউএনএইচআরসি’র বৈঠকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি। তিনি বলেন, ধর্মীয় বিদ্বেষ ও সহিংসতা উসকে দেওয়ার উপায় হিসেবে এ ধরনের ঘটনা কেন ঘটছে, তা খতিয়ে দেখতে হবে। সুইডেন সরকারের সম্মতিতে এ ধরনের ঘটনা ঘটছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
পরে ইরান, সৌদি আরব ও ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা বিলওয়ালের সঙ্গে একমত পোষণ করে বক্তব্য দেন। ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেতনো মারসুদি বলেন, মত প্রকাশের স্বাধীনতার অপব্যবহার বন্ধ করুন। নীরবতার মানে সম্মতি দেওয়া।
জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ভলকার তুর্ক ইউএনএইচআরসিকে বলেছেন, মুসলমানদের পাশাপাশি অন্যান্য ধর্ম বা সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে এ ধরনের উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড ভুল, আপত্তিকর ও দায়িত্বজ্ঞানহীন।
এদিকে, সুইডিশ সরকারও কোরআন পোড়ানোর এ ঘটনায় নিন্দা জানায় ও বিষয়টিকে ‘ইসলামোফোবিক’ বলে আখ্যা দেয়। সুইডিশ সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, আমাদের দেশে জনগণের সমাবেশ, মতপ্রকাশ ও বিক্ষোভের স্বাধীনতা রয়েছে ও তা সাংবিধানিকভাবে রক্ষিত।
মঙ্গলবার ফ্রান্সের জাতিসংঘবিষয়ক রাষ্ট্রদূত জেরোম বোনাফন্ট বলেন, মানবাধিকার মানুষকে রক্ষা করে; ধর্ম, মতবাদ, বিশ্বাস বা কোনো প্রতীককে নয়। তাছাড়া কোন জিনিস পবিত্র আর কোনটি পবিত্র নয়, সেটি ঠিক করাও জাতিসংঘ বা কোনো দেশের কাজ নয়।
ইউএনএইচআরসির প্রস্তাব মানতে কোনো দেশ বাধ্য নয়। তবে সংস্থাটির যেকোনো প্রস্তাবের প্রতি সমর্থন বা অসমর্থন সদস্য রাষ্ট্রগুলোর শক্তিশালী রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি হিসেবে দেখা হয়।
গত মাসের ২৮ জুলাই ঈদুল আজহার দিন স্টকহোমের কেন্দ্রীয় মসজিদের বাইরে সালমান মোমিকো নামের এক ব্যক্তি কোরআনে আগুন ধরিয়ে দেন। এ ঘটনায় মুসলিম বিশ্বে ব্যাপক প্রতিবাদ শুরু হয়। মুসলিম দেশগুলোর জোট অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন (ওআইসি) এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানায়। পরে পাকিস্তানের আহ্বানে মঙ্গলবার (১১ জুলাই) জরুরি বৈঠকে বসে ইউএনএইচআরসি।
প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে যেসব দেশ
বাংলাদেশ, আলজেরিয়া, আর্জেন্টিনা, বলিভিয়া, ক্যামেরুন, চীন, কিউবা, ইরিত্রিয়া, গ্যাবন, গাম্বিয়া, ভারত, আইভরি কোস্ট, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, মালাবি, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ, মরক্কো, পাকিস্তান, কাতার, সেনেগাল, সোমালিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, সুদান, ইউক্রেন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, উজবেকিস্তান ও ভিয়েতনাম।
প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিয়েছে যারা
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, বেলজিয়াম, কোস্টারিকা, চেক প্রজাতন্ত্র, ফিনল্যান্ড, লিথুয়ানিয়া, লুক্সেমবার্গ, মন্টিনিগ্রো, রোমানিয়া।
ভোটদানে বিরত ছিল যেসব দেশ
নেপাল, বেনিন, চিলি, জর্জিয়া, হন্ডুরাস, মেক্সিকো ও প্যারাগুয়ে।
সূত্র: আল জাজিরা
এসএএইচ