পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের জয়জয়কার, সহিংসতার বলি ৪
ভারতের পশ্চিমঙ্গে পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের জয়জয়কার। জেলা পরিষদে সবুজ ঝড়, অধিকাংশ জায়গায় নিরঙ্কুশ সাফল্য পেয়েছে রাজ্যের শাসক দল। বিরোধীশূন্য বিভিন্ন জেলা পরিষদ, পঞ্চায়েত সমিতি এবং গ্রাম পঞ্চায়েত।
জেলা পরিষদে মোট আসন ৯২৮টি। এর মধ্যে তৃণমূল কংগ্রেস পেয়েছে ৭২১টি আসন, বিজেপি ২৮টি, জাতীয় কংগ্রেস ৯টি, সিপিএম ৪টি এবং অন্যান্যরা ৩টি। পঞ্চায়েত সমিতিতে মোট ৯ হাজার ৭৩০টি আসনের মধ্যে তৃণমূল ৫ হাজার ৯৯৮, বিজেপি ৬৮২, জাতীয় কংগ্রেস ২৩৭, সিপিএম ১৬২ এবং অন্যান্যরা ৬১টি আসনে জয়লাভ করেছে।
আরও পড়ুন: বিরোধীদের টেক্কা দিয়ে গ্রামদখলের লড়াইয়ে এগিয়ে তৃণমূল
অপরদিকে গ্রাম পঞ্চায়েতের মোট আসন সংখ্যা ৬৩ হাজার ২২৯টি। এর মধ্যে তৃণমূল কংগ্রেস ৪১ হাজার ৬৬৫টি, বিজেপি ৯ হাজার ৩৬৮টি, জাতীয় কংগ্রেস ২ হাজার ৫৪২টি, সিপিএম ২ হাজার ৯৪৯টি এবং অন্যান্যরা ২ হাজার ২৩৩টি আসনে জয়ী হয়েছে।
তবে পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভোট গণনা শেষে উত্তপ্ত পুরো রাজ্য। মঙ্গলবার রাতে ফল ঘোষণার পর থেকেই বিভিন্ন জেলা থেকে সহিংসতার ঘটনা সামনে আসে। এবার পঞ্চায়েত নির্বাচনের ভোট গণনা শেষে প্রাণ হারিয়েছে চারজন। আহত হয়েছেন এক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার।
দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার ভাঙ্গড়ে ভোটের সহিংসতার বলি হন রাজু মোল্লা নামে ২৭ বছর বয়সী এক তরুণ। মঙ্গলবার (১১ জুলাই) ভোট গণনা শেষে রাতে বোনের বাড়ি যাচ্ছিলেন তিনি। সে সময় কাঠালিয়া হাইস্কুলের ভোট গণনা কেন্দ্রের সামনে বোমা হামলা এবং গোলাগুলির মধ্যে পড়ে পিঠে গুলি লাগে রাজুর। পরে কলকাতার ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা দেন।
আরও পড়ুন: ভোট গণনার শুরুতেই আহত ৪০
মঙ্গলবার গভীর রাতে ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্টের (আইএসএফ) কর্মী রেজাউল গাজীকে (২৪) গুলিবিদ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে কলকাতার চিত্তরঞ্জন হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখানেই তার মৃত্যু হয়।
মঙ্গলবার রাতে হাসান আলি মোল্লা (২৬) নামে অপর এক তরুণকে ভোট গণনা কেন্দ্র থেকে কিছুটা দূরে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ। রাতেই কলকাতার আরজিকর হাসপাতালে ভর্তি করা হলে বুধবার সকালে তার মৃত্যু হয়।
হাসান আলি মোল্লার স্ত্রী বলেন, তৃণমূলের লোকজন আমার স্বামীকে পুলিশের পোশাক পড়ে এসে গুলি করেছে। তিনজন এসেছিল গুলি করতে। আমি ওদের শাস্তি চাই। আমার তিন সন্তানকে অনাথ করে দিল ওরা।
আইএসএফের অভিযোগ, তৃণমূল কংগ্রেস ভোটে হেরে গিয়ে ব্যালট পেপার চুরি করতে এসেছিল। ব্যালট পেপার রক্ষা করতে গিয়ে এই তিনজনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। দোষীদের কঠোর শাস্তির দাবী জানানো হয়। সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হন এক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
অপরদিকে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার রায়দিঘি বিধানসভার কাশিনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের চাঁদপাশা গ্ৰামে ভোট গণনা শেষে বিজেপি-তৃণমূলের সংঘর্ষ বাঁধে। তৃণমূলের এক নেতাকে কুপিয়ে খুনের অভিযোগ ওঠে বিজেপির বিরুদ্ধে। নিহত তৃণমূল কর্মীর নাম বিপ্লব হালদার, বয়স ৩৫ বছর।
আরও পড়ুন: ভোটের উৎসবে রক্তের হোলি, নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২৯
স্থানীয় বুথে বিজেপি প্রার্থী জয়ী হওয়া পর থেকেই তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপির মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে বলে অভিযোগ উঠেছে। এই পঞ্চায়েত নির্বাচনে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পাঞ্জাব পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, পাঞ্জাবের নির্বাচনে এরকম পরিস্থিতি হয় না, সেখানে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হয়।
এদিকে জাতীয় কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী বলেন, পশ্চিমবঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বলতে কিছুই নেই। তাই আমি বারবার বলেছিলাম কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে নির্বাচন করানো হোক।
ডিডি/টিটিএন