তাইওয়ানের স্বাধীনতা সমর্থন করি না: ব্লিঙ্কেন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৭:১৩ পিএম, ১৯ জুন ২০২৩
শি জিনপিং ও অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। ছবি: সংগৃহীত

চীন সফরে গিয়ে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও দেশটির শীর্ষ কূটনীতিক ওয়াং ই’র সঙ্গে সোমবার (১৯ জুন) বৈঠক করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। বৈঠক শেষে তিনি জানিয়েছেন, তাইওয়ান প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রের ‘এক চীন নীতি’তে কোনো পরিবর্তন হয়নি এবং তারা তাইওয়ানের স্বাধীনতাকে সমর্থন করেন না।

বৈঠকের পর এক সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জিনপিং এবং ওয়াং ই উভয়ের সঙ্গেই তার কথোপকথন ‘জোরালো’ ছিল এবং তাতে ‘ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন’ থেকে শুরু করে যুক্তরাষ্ট্রের ফেন্টানাইল সংকট পর্যন্ত বিভিন্ন ইস্যু অন্তর্ভুক্ত ছিল।

আরও পড়ুন>> ত্রিভুজ প্রেমের ফাঁদে আটকা তাইওয়ান

ব্লিঙ্কেন বলেন, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং একে স্থিতিশীল রাখার দায়িত্ব দু’দেশেরই। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র চীনকে অর্থনৈতিকভাবে বোতলবন্দি করতে চায় না। তার মতে, এমন কিছু করা মার্কিন স্বার্থের অনুকূল নয়, বরং চীনের অর্থনৈতিক সাফল্য যুক্তরাষ্ট্রের জন্যেও লাভজনক।

‘কিন্তু আমাদের জাতীয় স্বার্থরক্ষার জন্যে বিশেষ কিছু প্রযুক্তিকে অবশ্যই আগলে রাখতে হবে’, বলেন মার্কিন কূটনীতিক।

তিনি জানান, উত্তর কোরিয়ায় যা ঘটছে তা নিয়েও চীনা প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তার কথা হয়েছে। ব্লিঙ্কেন বলেন, জিনজিয়াং, তিব্বত ও হংকংয়ে চীনের মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে ওয়াশিংটন উদ্বিগ্ন।

আরও পড়ুন>> এশিয়ার ইউক্রেন হবে তাইওয়ান?

চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্ককে স্থিতিশীল রাখা প্রয়োজন উল্লেখ করে ব্লিঙ্কেন বলেন, চীন-যুক্তরাষ্ট্র প্রতিযোগিতা সংঘাতে পরিণত হোক, এটি কাম্য নয়।

jagonews24মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিঙ্কেন ও চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং’র বৈঠক

‘অগ্রগতি হয়েছে’
এর আগে শি জিনপিংয়ের পক্ষ থেকে দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়, বৈঠকে চীনা পক্ষ তাদের অবস্থান পরিষ্কার করেছে এবং সুনির্দিষ্ট কিছু ইস্যুতে অগ্রগতি ও মতৈক্য অর্জিত হয়েছে। চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দেওয়া বিবৃতিতেও একই কথা বলা হয়।

জিনপিং বলেন, চীনা পক্ষের সঙ্গে অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের খোলামেলা ও বিস্তুারিত আলোচনা হয়েছে। তিনি আশা করেন, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ সফরের মধ্যে দিয়ে ‘চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ককে স্থিতিশীল করার ক্ষেত্রে’ অবদান রাখতে পারবেন।

আরও পড়ুন>> তাইওয়ান নিয়ে চীনের পরিকল্পনা ছোট করে দেখা উচিত নয়: সিআইএ পরিচালক

ব্লিঙ্কেনের সফরকালেই জানানো হয়েছে, চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিন গ্যাং আগামীতে যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাবেন এবং দু’দেশের মধ্যে প্লেন চলাচল ও সাংস্কৃতিক যোগাযোগ আরও বাড়ানো হবে।

jagonews24

অবনতিশীল চীন-মার্কিন সম্পর্ক
ব্লিঙ্কেনের এই সফরটি গত ফেব্রুয়ারি মাসে হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের আকাশে সন্দেহজনক চীনা গুপ্তচর বেলুন গুলি করে ভূপাতিত করার পর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরটি স্থগিত করা হয়। এটি ছাড়াও বাণিজ্যবিষয়ক সংঘাত, মানবাধিকার ও তাইওয়ান ইস্যুকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা- এমন বেশ কিছু কারণে সম্প্রতি চীন-মার্কিন সম্পর্কের ক্রমাগত অবনতি হচ্ছিল।

আরও পড়ুন>> যুক্তরাষ্ট্রে তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট

চীনের শীর্ষ কূটনীতিক ওয়াং ই আজও বলেছেন, চীন-মার্কিন সম্পর্ক খারাপ হওয়ার ‘মূল কারণ’ তার দেশ সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের ‘ভুল ধারণা’।

এ প্রেক্ষাপটে ব্লিঙ্কেনের এই বেইজিং সফরকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হচ্ছে এবং এর দিকে সারা বিশ্বের দৃষ্টি নিবদ্ধ রয়েছে।

ব্লিঙ্কেনও স্বীকার করেছেন, দু’দেশের মধ্যে সম্পর্কে অস্থিতিশীলতা দেখা দিয়েছিল। তবে এ সফরের ফলে দু’দেশের যোগাযোগ জোরদার হবে বলে আশা করছেন তিনি।

আরও পড়ুন>> তাইওয়ান নিয়ে তালগোল পাকিয়েছেন ম্যাক্রোঁ

jagonews24এক ঘণ্টা বেশি স্থায়ী ছিল অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন এবং ওয়াং ই’র বৈঠক

‘তাইওয়ান নিয়ে সমঝোতার সুযোগ নেই’
এদিন চীনের শীর্ষ কূটনীতিক ওয়াং ই’র সঙ্গে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠক নির্ধারিত সময়ের চেয়েও এক ঘণ্টা বেশি স্থায়ী হয়।

ব্লিঙ্কেন বলেন, তাইওয়ান প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রের এক চীন নীতিতে কোনো পরিবর্তন হয়নি এবং যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানের স্বাধীনতাকে সমর্থন করে না।

আরও পড়ুন>> তাইওয়ানের আকাশে একসঙ্গে চীনের ১৮টি পারমাণবিক যুদ্ধবিমান

তবে তাইওয়ান প্রণালীতে চীনের ‘উসকানিমূলক কর্মকাণ্ডের’ বিরুদ্ধে সতর্কবাণী উচ্চারণ করে তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠকেও বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়, ওয়াং ই মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেছেন, তাইওয়ান নিয়ে সমঝোতার কোনো সুযোগ নেই।

আরও পড়ুন>> তাইওয়ানকে ‘অবরুদ্ধ’ করার মহড়া চালালো চীন

তিনি আরও দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র যেন চীনের ওপর থেকে একতরফা নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। সেই সঙ্গে, চীনের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়ন দমনের চেষ্টা বন্ধ করে এবং দেশটির অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করে।

সূত্র: বিবিসি বাংলা
কেএএ/

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।