ধর্ষণের সংজ্ঞায় বড় বদল আনলো জাপান
ধর্ষণকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়ন ও যৌন সম্পর্কে সম্মতির সর্বনিম্ন বয়স আগের থেকে বাড়িয়ে যৌন অপরাধ সংক্রান্ত আইনে বড় ধরনের সংস্কার এনেছে জাপান। দেশটিতে আগে যৌন সম্পর্কে সম্মতির আইনি বয়স ছিল ১৩, এখন সেটা বেড়ে ১৬ করা হয়েছে।
তাছাড়া দেশটিতে এখন থেকে ‘সম্মতিহীন যৌন মিলনই’ ধর্ষণ বলে গণ্য হবে। এর আগে জাপানে কেবল ‘জোরপূর্বক যৌন মিলনকেই’ ধর্ষণ হিসেবে গণ্য করা হতো।
শুক্রবার (১৬ জুন) জাপানি পার্লামেন্ট ডায়েটের উচ্চকক্ষে নতুন আইনগুলো সর্বসম্মতিক্রমে পাস হয়। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি বলছে, এ সংস্কারের ফলে জাপানের আইন এখন অন্যান্য দেশের আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হলো।
পুরোনো আইনের সমালোচকরা বলছেন, আগে জাপানে কাউকে যৌন মিলনে বাধ্য করা হলে, ভুক্তভোগী তেমন কোনো সুরক্ষা পেতো না। এ ধরনের হামলা বা আক্রমণের বিষয়ে অভিযোগ করতেও অনুৎসাহিত করা হতো। এমনকি, এসব বিষয়ে আদালতের রায়েও অসামঞ্জস্যতা দেখা যেতো। সবমিলিয়েই আইনগুলো পাল্টাতে ব্যাপক দাবি উঠেছিল।
নতুন আইনে বেশ সুস্পষ্টভাবে এমন আটটি পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যেখানে ভিক্টিমের পক্ষে ‘যৌন মিলনে অসম্মতি জানানো বা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া ও তা প্রকাশ করা’ বেশ কঠিন।
এরকম পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে, মদ বা মাদকের প্রভাবে ভিক্টিম নেশাগ্রস্ত, সহিংসতা বা হুমকির মুখে, অথবা ‘ভীত-সন্ত্রস্ত ও বিস্মিত।’ অন্য একটি পরিস্থিতির কথাও এতে বলা হয়েছে, যেখানে ‘ক্ষমতার অপব্যবহার’ করা হচ্ছে ও ‘অসম্মতি জানালে তার পরিণতি কী হবে’ তা নিয়ে ভিক্টিম চিন্তিত।
জাপানে ১৯০৭ সালে যৌন সম্মতির আইন পাশ করার পর এই প্রথম সেই আইনে কোন পরিবর্তন আনা হলো। তার আগ পর্যন্ত, অর্থনৈতিকভাবে উন্নত দেশগুলোর মধ্যে একমাত্র জাপানেই যৌন মিলনে সম্মতি দেওয়ার বয়স সবচেয়ে কম ছিল।
তবে জাপানে ১৩ থেকে ১৫ বছর বয়সী কারও সঙ্গে যদি কেউ যৌন মিলন করে, তাকে কেবল তখনই সাজা পেতে হবে - যদি তার বয়স ভিক্টিমের চেয়ে পাঁচ বছর বা তার বেশি হয়।
ধর্ষণের ঘটনা নিয়ে অভিযোগ জানানোর সময়সীমাও ১০ দিন থেকে বাড়িয়ে ১৫ দিন করা হয়েছে, যাতে ভুক্তভোগী ব্যক্তি অভিযোগের বিষয়টি গোপন না রাখেন। তাছাড়া আইন সংস্কারের ফলে দেশটিতে এখন গোপনে যৌন কার্যকলাপের ছবি বা বিনা অনুমতিতে স্কার্টের নিচের ছবি তোলার মতো কর্মকাণ্ডও নিষিদ্ধ হয়েছে।
জাপানে ২০১৯ সালে বেশ কয়েকটি ধর্ষণ মামলার আসামিরা রেহাই পেয়ে যাওয়ায় দেশজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়। আইনের সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীরা ন্যায়বিচার চেয়ে ও যৌন অপরাধের শিকার ব্যক্তিদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে বিক্ষোভে অংশ নেন। এর জেরে আইনে সংস্কার আনার প্রতিশ্রুতি দেয় তৎকালীন সরকার।
সূত্র: বিবিসি
এসএএইচ