ডিম আগে না মুরগি আগে? উত্তর দিলেন বিজ্ঞানীরা
‘ডিম আগে না মুরগি আগে?’ প্রশ্নটি প্রায় প্রতিটি মানুষের মুখেই শোনা যায়। অনেকে তো আবার বিষয়টি নিয়ে রীতিমতো বিজ্ঞানভিত্তিক তর্ক জুড়ে দেয়। কারও মতে মুরগি আগে এসেছে, আবার কারও মতে ডিম। অবশেষে বহুল আলোচিত এ প্রশ্নের সঠিক উত্তর খুঁজে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
যুক্তরাজ্যের ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের মতে, আধুনিক পাখি ও সরীসৃপের পূর্বসূরিরা সম্ভবত বাচ্চাই প্রসব করতো, ডিম পাড়তো না। অর্থাৎ, ডিম নয়, মুরগিই পৃথিবীতে আগে এসেছে।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য টাইমসের বরাতে এ গবেষণার কথা জানায় ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি। পাখি ও সরীসৃপজাতীয় প্রাণীর পূর্বসূরিদের বাচ্চা প্রসববিষয়ক বিশদ গবেষণাটি নেচার ইকোলজি অ্যান্ড ইভোলিউশনে প্রকাশ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: ৪০০ গাড়ির বহর নিয়ে বিজেপি ছেড়ে কংগ্রেসে, ভিডিও ভাইরাল
চীনের নানজিং বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের সঙ্গে নিয়ে করা এ গবেষণায় ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা ভ্রুণ থাকা অবস্থায় পাখি, সরীসৃপ ও উভচর প্রাণীদের টিকে থাকার পেছনে কঠোর আবরণযুক্ত ডিমের কৃতিত্ব রয়েছে, এ প্রচলিত ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করেন।
তাদের দাবি, খোসাযুক্ত ডিমগুলো শুধু অ্যামনিওটসের অর্থাৎ সরীসৃপ প্রাণীদের বেঁচে থাকার সাফল্যের চাবিকাঠি ছিল। সরীসৃপজাতীয় প্রাণীদের ভ্রূণ ডিমের ভেতরে একটি অ্যামনিওন বা ঝিল্লির ভেতর বড় হতো।
গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, অনেক অনেক বছর আগে মুরগি ডিম পাড়তো না। তারাও মানুষের মতো সন্তান প্রসব করতো। বিবর্তনের ফলেই পাখিরা ডিম পাড়তে শুরু করে।
গবেষকরা বলেছেন, অ্যামনিওটিক ডিম বর্তমান উভচর প্রাণীর অ্যানামনিওটিক ডিম থেকে অনেকটাই আলাদা। অ্যানামনিওটিক ডিমে খোসা ও বহিরাগত ঝিল্লির অভাব রয়েছে। আর অ্যানামনিওটিক ডিমে অ্যামনিয়ন, কোরিওন, অ্যালানটোইসসহ ভ্রূণের ঝিল্লির একটি স্যুট থাকে। সেইসঙ্গে এটির বহিরাগত শেলে অনেক খনিজযুক্ত থাকে। অথবা খনিজের পরিমাণ অনেক কম থাকে।
আরও পড়ুন: হত্যাকাণ্ডের খবর লাইভ সম্প্রচারের সময় পেছনে নারীর ড্যান্স
ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব আর্থ সায়েন্সের নেতৃত্বাধীন এ গবেষণায় বিজ্ঞানীরা ৫১টি জীবাশ্ম প্রজাতি ও ২৯টি জীবন্ত প্রজাতি নিয়ে কাজ করেছেন, যাদের মধ্যে শক্ত বা নরম খোসার ডিম পাড়া প্রাণী যেমন রয়েছে, তেমনি বাচ্চা প্রসব করে এমন প্রাণীও রয়েছে।
গবেষণায় উভচরসহ অ্যামনিওটের সবগুলো শাখার প্রাণীদের মধ্যেই দেহের ভেতর দীর্ঘ সময় ধরে ভ্রুণ ধরে রাখার লক্ষণ দেখা গেছে। শক্ত খোসার ডিমকে সবসময়ই বিবর্তনের অন্যতম সেরা উদ্ভাবন হিসেবে দেখা হলেও বিজ্ঞানীদের নতুন এ গবেষণা বলছে, বর্ধিত সময় ধরে ভ্রুণ ধরে রাখাই এ প্রজাতির প্রাণীদের চূড়ান্ত সুরক্ষা দিয়েছে।
ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মাইকেল বেনটন বলেন, মায়ের দেহের ভেতর কম বা বেশি সময়ের জন্য বিকাশমান ভ্রুণকে রক্ষা করতে শক্ত খোসাযুক্ত ডিমের বদলে ভ্রুণকে বেশি সময় ধরে রাখার পদ্ধতির বিকাশ ঘটিয়েছিল প্রথম দিকের অ্যামনিওটরা, যাতে পরিবেশ উপযোগী হওয়া পর্যন্ত বাচ্চার জন্ম আটকে রাখা যায়।’
আরও পড়ুন: কিডনি থেকে সবচেয়ে বড় পাথর অপসারণের রেকর্ড
গবেষণা প্রকল্পের নেতৃত্বে থাকা নানজিং বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বাওইয়ু জিয়াং বলেন, কখনো কখনো, কাছাকাছি সম্পর্কযুক্ত প্রজাতির মধ্যে উভয় আচরণই দেখা যায়। যাতে বোঝা যাচ্ছে, বাচ্চা প্রসব করা টিকটিকি প্রজাতি ধারণার চেয়েও সহজে ডিম পাড়ায় ফেরত যেতে পারবে।
মাইকেল বেনটন বলেন, আমাদের কাজ ও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আরও অনেকের কাজ, পাঠ্যপুস্তকে থাকা ‘সরীসৃপ ডিমের’ ক্ল্যাসিক মডেলকে ভুল প্রমাণিত করেছে।
সূত্র: এনডিটিভি
এসএএইচ