দাবদাহ: লাখো মৃত্যু রুখতে কতটা প্রস্তুত মধ্যপ্রাচ্য?
বিশ্বজুড়ে তীব্র তাপপ্রবাহের ঘটনা ক্রমেই নিয়মিত হয়ে উঠছে। বৈশ্বিক তাপমাত্রা যেভাবে বাড়ছে তাতে অচিরেই জনজীবনে চরম বিপর্যয় দেখা দিতে পারে। গবেষণা বলছে, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে তাপজনিত মৃত্যুর হার দ্রুত বাড়তে পারে। এতে চলতি শতকে শুধু ইরাকেই মৃত্যু হতে পারে ১ লাখ ৩৮ হাজার মানুষের।
দাবদাহের মধ্যে ইরাকে কখনো কখনো তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসও ছাড়িয়ে যায়। সেই অবস্থায় মানুষ বাঁচে কী করে? কীভাবে অফিসের কাজ, ব্যবসা-বাণিজ্য করে?
আরও পড়ুন>> ৫০ বছরে ২০ লাখ প্রাণ নিয়েছে প্রতিকূল আবহাওয়া: জাতিসংঘ
জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত প্রতিবেদকদের বাগদাদভিত্তিক একটি সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা খোলুদ আল-আমিরি জানান, সেরকম গরমে ইরাকের বেশিরভাগ মানুষ ছুটি কাটান এবং ঘরেই থাকেন।
তিনি বলেন, আমরা সাধারণত (দাবদাহের) তথ্য (রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত টেলিভিশন চ্যানেল) আল ইরাকিয়া থেকে আগেই পেয়ে যাই। কখনো কখনো তা ফেসবুকেও দেওয়া হয়। তারা আমাদের কাজে না যেতে বলে। যাদের স্বাস্থ্য খুব নাজুক তাদের ঘরে থাকতে বলা হয়। শুধু তা-ই নয়, আমরা যেন পাখি বা অন্য প্রাণীদের জন্য গাছের নিচে পানি রেখে আসি- সে কথাও বলে দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন>> বিশ্বের শীর্ষ ১০ উত্তপ্ত শহরের একটিও মধ্যপ্রাচ্যের নয়
মুখে পানি ছিটিয়ে শরীর ঠান্ডা রাখার চেষ্টা বাগদাদের এক বাসিন্দার।
আল-আমিরি বলেন, তবে তীব্র দাবদাহের সময় প্রকৃতির সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে বাঁচার কৌশল ইরাকের মানুষ মূলত নিজে নিজেই শিখে নেয়। সাধারণত ইরাকিরা নিজেরাই এই সমস্যাগুলো সমাধানের চেষ্টা করে। কারণ, সরকার সাহায্য করবে এমন বিশ্বাস তাদের খুব কম।
বিপর্যয়ের শঙ্কায় মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা
গত মে মাসে বিজ্ঞান বিষয়ক জার্নাল ন্যাচার সাসটেইনেবলিটির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, আগামী ৫০ বছরের মধ্যে বৈশ্বিক তাপমাত্রা ১ দশমিক ৫ ডিগ্রির চেয়ে বেশি বেড়ে ভয়াবহ অবস্থায় চলে যেতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, ২০৫০ সালের মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের বেশিরভাগ মানুষ তীব্র দাবদাহের মুখে পড়বে।
আরও পড়ুন>> চীনের পর জাপানেও উষ্ণতার রেকর্ড, চোখ রাঙাচ্ছে এল নিনো
গত এপ্রিলে ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নাল ল্যানসেটে প্রকাশিত আরেকটি গবেষণা প্রতিবেদনে বলছে, আগামী কয়েক দশকে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকায় তাপজনিত মৃত্যু ব্যাপক হারে বাড়বে।
এতে বলা হয়, তীব্র দাবদাহের কারণে এসব অঞ্চলে বর্তমানে এক হাজার মানুষের মধ্যে তাপজনিত রোগে দুজনের মৃত্যু হয়, সেই সংখ্যা চলতি শতাব্দীর শেষ দুই দশকে ১২৩-এ গিয়ে দাঁড়াবে। এভাবে তাপমাত্রা বাড়তে থাকলে ২১০০ সালের মধ্যে শুধু ইরাকেই তাপজনিত অসুস্থতায় মারা যাবে ১ লাখ ৩৮ হাজার মানুষ।
প্রবীণ ও নগরবাসীদের ঝুঁকি বেশি
ল্যানসেটের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০৫০ সাল নাগাদ মধ্যপ্রাচ্যের ৭০ ভাগের মতো মানুষ বড় বড় শহরে বসবাস শুরু করবে এবং ২১০০ সালের মধ্যে এ অঞ্চলে সংখ্যার দিক থেকে নবীনদের ছাড়িয়ে যাবেন প্রবীণরা। তাছাড়া, চলতি শতকে এ অঞ্চলের কোনো কোনো শহরের তাপমাত্রা দুই থেকে নয় ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বাড়তে পারে। এসব কারণে তাপজনিত মৃত্যুও বাড়বে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের আশঙ্কা, দাবদাহে মধ্যপ্রাচ্যের অভিবাসী কর্মীদের মৃত্যুঝুঁকি বাড়বে।
জাতিসংঘের চিফ হিট অফিসার এলেনি মিরিভিলি বলেন, আবহাওয়াজনিত বিপর্যয়গুলোর মধ্যে চরম তাপমাত্রা সবচেয়ে বিপজ্জনক হয়ে উঠলেও সারা বিশ্বেই বিষয়টিকে অবমূল্যায়ন করা হয়। কিন্তু বড় বিপর্যয় এড়াতে হলে সরকারগুলোর উচিত চরম দাবদাহ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি, প্রস্তুতি এবং নিজেদের রক্ষার কৌশল নির্ণয়ের পরিকল্পনা প্রণয়ন করা।
আরও পড়ুন>> পরিবেশ নষ্ট করে পরিবেশ রক্ষার কর্মসূচি!
পরিকল্পনায় কী কী রাখা উচিত সরকারের, এ প্রশ্নের উত্তরটা সবচেয়ে সহজ করে দিয়েছেন আল-আমিরি। তিনি বলেন, (দাবদাহের কথা মাথায় রেখে) আমাদের জরুরি সেবা দেওয়ার জন্য ডেডিকেটেড ক্লিনিক গড়তে হবে। আগাম প্রস্তুতি নেওয়ার সুযোগ নিশ্চিত করার জন্য তথ্য সরবরাহ ব্যবস্থা আরেও উন্নত করতে হবে। এসবের পাশাপাশি প্রচুর গাছ লাগিয়ে সবুজের বিস্তার ঘটাতে হবে।
তবে ল্যানসেটের গবেষকরা মনে করেন, এসব করলেও তাপমাত্রা আশানুরূপ কমবে না। তাদের মতে, মধ্যপ্রাচ্যে দাবদাহজনিত মৃত্যুর ৮০ ভাগই প্রতিরোধ করা সম্ভবত। তবে তার জন্য বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি দুই ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে আটকে রাখতে হবে।
সূত্র: ডয়েচে ভেলে
কেএএ/