ইউক্রেন থেকে রাশিয়ার একটি অঞ্চলে হামলা
ইউক্রেনের ভেতর থেকে সশস্ত্র একটি দল রাশিয়ার বেলগোরদ অঞ্চলে ঢুকে সংঘাতে লিপ্ত হয়েছে। এতে সেখানকার বেশ কয়েকজন বাসিন্দা আহত হয়েছে বলে রুশ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। স্থানীয় গভর্নর ভিচেস্লাভ গ্লাদকভ বলেন, গ্রাভোরোনস্কি সীমান্ত এলাকায় যারা হামলা চালিয়েছে সেই ‘নাশকতাকারীদের’ খুঁজতে শুরু করেছে রুশ বাহিনী। খবর বিবিসির।
ভ্লাদিমির পুতিনের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্টকে এই বিষয়ে অবহিত করা হয়েছে। এই ঘটনার দায় স্বীকার করেনি ইউক্রেন। তাদের দাবি, ওই ঘটনার পেছনে রাশিয়ার দুটি আধাসামরিক বাহিনীর সদস্যরাই জড়িত।
গভর্নর ভিচেস্লাভ গ্লাদকভ বলেন, ওই ঘটনায় আটজন আহত হয়েছে। এদের মধ্যে দুই শিশুও রয়েছে। একটি গ্রামে গোলা নিক্ষেপ করার পর দুই বাসিন্দাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এদিকে গ্রেভোরন শহরে অপর এক হামলায় আহত হয়েছে তিনজন।
সেখানে সংঘর্ষের ঘটনায় তিনটি বাড়ি এবং একটি প্রশাসনিক ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেখানকার পরিস্থিতি ‘খুবই উত্তেজনাকর অবস্থায়’ রয়েছে বলে জানান তিনি। গভর্নর জানিয়েছেন, ওই এলাকায় সন্ত্রাসীদের খুঁজতে একটি পাল্টা অভিযান শুরু করা হয়েছে। যারা এই অভিযানে রয়েছেন, তাদের বিশেষ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে যাতে পরিচয় যাচাই এবং যোগাযোগ ব্যবস্থায় নজরদারি করতে পারে।
একটি ড্রোন থেকে তোলা ভিডিওতে বেলগোরদের দক্ষিণ সীমান্তের একটি চেক পয়েন্টের কাছাকাছি বেশ কয়েকটি সাঁজোয়া গাড়ি দেখা যাচ্ছে। সেই এলাকায় হেলিকপ্টার ব্যবহার করা হচ্ছে, এমন ভিডিও পাওয়া গেছে।
এসব ভিডিও সাম্প্রতিক সময়ে ধারণ করা। কিন্তু সেখানে আসলে কি হচ্ছে, সেটা এসব ভিডিও দেখে নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। কিয়েভ জানিয়েছে, সেখানকার এসব ঘটনার পেছনে রাশিয়ার লিবার্টি অব রাশিয়া লেজিওন এবং দ্য রাশিয়ান ভলান্টিয়ার কর্পস জড়িত রয়েছে।
ইউক্রেনভিত্তিক রাশিয়ান মিলিশিয়া বাহিনী লিবার্টি অব রাশিয়া লেজিওন এক টুইটে জানিয়েছে, তারা প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে উৎখাত করতে রাশিয়ার ভেতরে কাজ করছে। তারা সীমান্ত শহর কোজিঙ্কা ‘পুরোপুরি স্বাধীন’ করেছে এবং তাদের অগ্রবর্তী দল গ্রেভোরন শহরের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে।
তবে পুতিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ রাশিয়ার বার্তা সংস্থাগুলোকে বলেছেন, নাশকতাকারী দলগুলোকে নিশ্চিহ্ন করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। তাদের আসল উদ্দেশ্য হলো ইউক্রেনের বাখমুত শহর থেকে মনোযোগ সরিয়ে দেওয়া। অনেকদিন ধরে রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ের পর রাশিয়ার সেনাবাহিনী ওই শহর দখল করেছে।
তিনি বলেন, এ ধরনের নাশকতার উদ্দেশ্য আমরা ভালোভাবেই বুঝতে পারছি। বাখমুত থেকে মনোযোগ সরিয়ে দেওয়া, শহরটি হাতছাড়া হওয়ায় ইউক্রেনের যে রাজনৈতিক ক্ষতি হয়েছে, সেটাকে কমিয়ে তোলা। যদিও কিয়েভ এখনো দাবি করছে, শহরের কিছু অংশ তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর উপদেষ্টা ইউরিক সাক মন্তব্য করেছেন, এসব হামলার পেছনে রাশিয়ার নাগরিকরাই রয়েছে, যারা সেদেশের সন্ত্রাসবাদী শাসকদের ওপর বিরক্ত। তাদের স্বাগত জানালেও তিনি বলছেন, ওই হামলাকারীদের তার দেশ সহায়তা করছে কিনা বা আশ্রয় দিচ্ছে কিনা, সেই বিষয়ে তিনি নিশ্চিত বা নাকচ কোনটাই করতে পারবেন না।
সর্বশেষ এসব ঘটনা এমন সময়ে ঘটলো যখন রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেনের বাহিনী পাল্টা আক্রমণ শুরু করতে যাচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছিল। গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে মস্কো ইউক্রেনের বিরুদ্ধে পুরাদস্তুর যুদ্ধ শুরু করার পর বেলগোরদ এবং আরও কিছু রুশ এলাকা প্রায়ই গোলা বা ড্রোন হামলার মুখে পড়ছে। এজন্য ইউক্রেনের গোলন্দাজ বাহিনীকে দায়ী করছে রুশ বাহিনী। যদিও ইউক্রেন বরাবরই রাশিয়া ভূখণ্ডে কোনো ধরনের নাশকতা বা হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
ইউক্রেন সীমান্ত থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরের বেলগোরদ শহরের ওপর গত এপ্রিলে রাশিয়া ভুল ক্রমে একটি বোমা নিক্ষেপ করেছিল। কয়েকদিন পরে অবিস্ফোরিত একটি বোমা পাওয়া যাওয়ায় সেখানকার তিন হাজার মানুষকে ঘরবাড়ি থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল।
টিটিএন