সুদানে সেনা-মিলিশিয়া লড়াই অব্যাহত, নিহত ৯৭

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৪:১১ পিএম, ১৭ এপ্রিল ২০২৩
ছবি: সংগৃহীত

সুদানে সেনাবাহিনী এবং একটি আধা-সামরিক বাহিনীর মধ্যে ক্ষমতার লড়াই দেশটিকে অস্থিতিশীল করে তুলেছে। রাজধানী খার্তুমে প্রেসিডেন্টের প্রাসাদ, রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ও সেনা সদর দপ্তরের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দুই বাহিনীর মধ্যে লড়াই চলছে। এতে এখন পর্যন্ত প্রায় ১০০ জন নিহত এবং এক হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।

সেনাবাহিনী এবং তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ) উভয়েই দাবি করছে, বিমানবন্দরসহ রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা তাদের দখলে। সারারাত এসব জায়গায় লড়াই চলেছে।

খার্তুমের সংলগ্ন শহর ওমডারমান এবং কাছাকাছি আরেক শহর বাহরিতে রোববার ভোরে তুমুল গোলাগুলির শব্দ শোনা গেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, লোহিত সাগরের বন্দরনগরী পোর্ট সুদানেও গোলাগুলি চলছে।

আরও পড়ুন>> সুদানে ক্ষমতার জন্য তীব্র সংঘাত

সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তাদের যুদ্ধবিমানগুলো আরএসএফের ঘাঁটি লক্ষ্য করে আক্রমণ চালাচ্ছে। ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে বেসামরিক লোকদের ঘরে থাকতে বলেছে সেনাবাহিনী।

jagonews24নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটছেন খার্তুমের বাসিন্দারা। ছবি সংগৃহীত

খার্তুমের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, তারা তীব্র আতঙ্কে রয়েছেন। একজন জানিয়েছেন, তার পাশের বাড়ির ওপর গুলি চলছে।

চিকিৎসকদের একটি সংগঠন জানিয়েছে, সেনাবাহিনী ও আধা সামরিক বাহিনীর মধ্যে এই লড়াইয়ে কেবল খার্তুমেই ২৫ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ১৭ জন বেসামরিক মানুষ। এছাড়া, দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলে আরও ৫৬ জন বেসামরিক লোক নিহত হয়েছে। প্রাণ হারিয়েছেন ১২ জনের মতো সেনা সদস্য।

সংগঠনটি বলছে, সব মিলিয়ে মোট ১ হাজার ১০০ জনের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।

আরও পড়ুন>> যুদ্ধের পরিকল্পনা বদলাতে বাধ্য হলো ইউক্রেন

সুদানের পশ্চিমের কাবকাবিয়ার একটি সামরিক ঘাঁটির কাছে আরএসএফ ও সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে গোলাগুলির সময় নিহত হয়েছেন জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) তিন কর্মী।

২০২১ সালের অক্টোবরে এক সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে সুদানের ক্ষমতা মূলত সামরিক জেনারেলদের হাতে। এর নেতৃত্বে রয়েছেন জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান। তার প্রতি অনুগত সামরিক ইউনিটগুলোর সঙ্গে লড়াই চলছে আরএসএফের, যার নেতৃত্বে রয়েছেন সুদানের উপ-নেতা মোহাম্মদ হামদান দাগালো, যিনি হেমেডটি নামেও পরিচিত।

jagonews24খার্তুমের রাস্তায় সেনাবাহিনী। ছবি সংগৃহীত

দাগালো বলেছেন, তার সৈন্যরা সব সেনা ঘাঁটি দখল না করা পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাবে।

আরও পড়ুন>> তাইওয়ানকে ‘অবরুদ্ধ’ করার মহড়া চালালো চীন

বিপরীতে, সুদানের সশস্ত্র বাহিনীগুলোও আধা-সামরিক বাহিনী আরএসএফ-কে ধ্বংস না করা পর্যন্ত কোনো ধরনের আপোস-আলোচনার প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছে।

চারদিকে আতঙ্ক
খার্তুমের আকাশে এখন কুণ্ডলী পাকিয়ে উঠছে কালো ধোঁয়া। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, লোকজন গোলাগুলি বাঁচতে দৌড়াদৌড়ি করছে।

রয়টার্সের এক সাংবাদিক জানিয়েছেন, রাস্তায় অনেক সাঁজোয়া যান চলাচল করছে। একটি ভিডিওতে দেখা যায়, খার্তুম বিমানবন্দরে একটি বেসামরিক প্লেন আগুনে পুড়ছে। সৌদি এয়ারলাইন সৌদিয়া বলেছে, তাদের একটি এয়ারবাস গোলাগুলির মুখে পড়েছে।

এ অবস্থায় অনেক এয়ারলাইনস খার্তুমের ফ্লাইট বাতিল করেছে। প্রতিবেশী দেশ চাদ বলেছে, তারা সুদানের সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে।

jagonews24খার্তুম বিমানবন্দরে কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলী। ছবি সংগৃহীত

খার্তুম থেকে এক ব্রিটিশ-সুদানি চিকিৎসক বলেন, আমাদের এখানে বিদ্যুৎ নেই। খুব গরম। কিন্তু আমরা জানালা পর্যন্ত খুলতে পারছি না। বাইরে কানে তালা লেগে যাওয়ার মতো বিকট শব্দ।

আরও পড়ুন>> বাইডেন প্রশাসনের অধীনে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হতে পারে: ট্রাম্প

আরেকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, গোলাগুলি এখনো চলছে এবং লোকজন ঘরের মধ্যে আটকে রয়েছে। তিনি বলেন, আমার পাশের বাড়ির ছাদে একটি যুদ্ধবিমান থেকে গুলি করা হচ্ছে এবং আমরা এখন বাঁচার জন্য আশ্রয় খুঁজছি।

যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, চীন, রাশিয়া- সবাই অবিলম্বে এই লড়াই বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে। জাতিসংঘের মহাসচিব এরই মধ্যে জেনারেল বুরহান ও জেনারেল দাগালোর সঙ্গে কথা বলেছেন এবং তাদের সহিংসতা থামাতে বলেছেন।

সহিংসতার সূত্রপাত কীসে
দেশটিতে প্রস্তাবিত বেসামরিক সরকারে কে একীভূত সামরিক বাহিনীর প্রতিনিধিত্ব করবেন, তা নিয়েই বিবাদ তৈরি হয়েছে।

jagonews24জেনালের বুরহান (ডানে) ও আরএসএফ অধিনায়ক দাগালো। ছবি সংগৃহীত

সম্প্রতি সুদানে একটি বেসামরিক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য বিভিন্ন গোষ্ঠী ও সেনাবাহিনীর মধ্যে মতৈক্যে পৌঁছানোর এক চেষ্টা ব্যর্থ হয়। সেখানে আরএসএফের এক লাখ সদস্যকে সেনাবাহিনীতে একীভূত করার প্রশ্নটি ছিল সমস্যার অন্যতম কারণ।

সামরিক বাহিনীর এ দুই অংশের মধ্যে সংঘাতের এক পর্যায়ে বৃহস্পতিবার আরএসএফ উত্তরাঞ্চলীয় মেরওয়ে শহরের একটি সামরিক ঘাঁটির কাছে তাদের সৈন্য মোতায়েন করে।

বিবিসির সংবাদদাতা জানিয়েছেন, ঠিক কী নিয়ে শনিবারের সহিংসতার সূত্রপাত তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে এ দুটি বাহিনীর মধ্যে বেশ কিছুদিন ধরেই উত্তেজনা চলছিল।

এর আগে, সুদানের রাজনৈতিক দলগুলো সেনাবাহিনী ও আরএসএফের সঙ্গে ক্ষমতা ভাগাভাগির এক চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিল। তারা উভয় পক্ষকেই সহিংসতা অবসানের আহ্বান জানিয়েছে।

সূত্র: বিবিসি বাংলা, আল-জাজিরা
কেএএ/

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।