গোপন নথিতে গুমর ফাঁস
ইউক্রেনে লড়ছে পশ্চিমাদের বিশেষ বাহিনীও
অবশেষে সত্য প্রমাণিত হলো রাশিয়ার দাবি, গুমর ফাঁস হলো পশ্চিমাদের। রাশিয়া বহুদিন থেকেই বলে আসছে, ইউক্রেনে তারা শুধু কিয়েভ বাহিনীর বিরুদ্ধে নয়, ন্যাটোর বিরুদ্ধেও লড়ছে। তাদের সেই দাবি এবার সত্য প্রমাণ করলো সম্প্রতি ফাঁস হওয়া পেন্টাগনের গোপন নথিপত্র। নথিগুলো বলছে, যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যসহ বেশ কয়েকটি ন্যাটো সদস্যের বিশেষ সামরিক বাহিনী ইউক্রেনে যুদ্ধের ময়দানে কাজ করছে। খবর বিবিসির।
ফাঁস হওয়া ফাইলগুলোর কয়েকটি ‘টপ সিক্রেট’ হিসেবে চিহ্নিত, যার মধ্যে ইউক্রেন যুদ্ধের বিশদ বর্ণনা পাওয়া যায়। এমনকি, আগামী বসন্তে ইউক্রেন যে পাল্টা আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছে, তারও সংবেদনশীল তথ্য রয়েছে এতে। যুক্তরাষ্ট্র সরকার বলছে, নথিগুলো কীভাবে ফাঁস হলো তা তদন্ত করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন>> যুক্তরাষ্ট্রে নথি ফাঁস: যুদ্ধের পরিকল্পনা বদলাতে বাধ্য হলো ইউক্রেন
গত ২৩ মার্চের নথি অনুসারে, ইউক্রেনে পশ্চিমা বিশেষ বাহিনীর সবচেয়ে বড় ৫০ সদস্যের দল রয়েছে যুক্তরাজ্যের। তারপরে ন্যাটো সহযোগী রাষ্ট্র লাটভিয়ার ১৭ জন, ফ্রান্সের ১৫ জন, যুক্তরাষ্ট্রের ১৪ জন এবং নেদারল্যান্ডসের সদস্য রয়েছে একজন।
তবে পশ্চিমা মিত্রদের এই সামরিক বাহিনী ইউক্রেনের কোথায় কী কাজ করছে, তার উল্লেখ নেই ওই নথিতে।
ফাঁস হওয়া নথিতে পশ্চিমা মিত্রদের দেওয়া সরঞ্জাম ও প্রশিক্ষণের বিস্তারিত রয়েছে। ছবি সংগৃহীত
পশ্চিমা এই বাহিনীর সদস্য সংখ্যা কম হতে পারে, তবে তা নিঃসন্দেহে ওঠানামা করছে। তাছাড়া স্বভাবগতভাবে বিশেষ বাহিনী যুদ্ধের ময়দানে অত্যন্ত কার্যকর। ফলে ইউক্রেনে তাদের উপস্থিতি মস্কোর চোখে ধরা পড়া যথেষ্ট যুক্তিযুক্ত।
ইউক্রেনে বিশেষ বাহিনী পাঠানোর কথা ফাঁস হওয়ার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে মঙ্গলবার (১১ এপ্রিল) এক টুইটে তারা বলেছে, ‘কথিত গোপন তথ্য ফাঁস প্রমাণ করেছে, এতে গুরুতর মাত্রায় ভুল রয়েছে। পাঠকদের ভুল তথ্য ছড়ানো ও কথিত অভিযোগগুলো গ্রহণ করার বিষয়ে সতর্ক হওয়া উচিত।’
আরও পড়ুন>> ইউক্রেনে ট্যাংক পাঠিয়ে কি ঠিক করলো ন্যাটো সদস্যরা?
তবে পেন্টাগন কর্মকর্তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোতে বলা হয়েছে, নথিগুলো আসল। ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা শুরুর পর থেকে এটি হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বড় তথ্য ফাঁসের ঘটনা।
কী রয়েছে গোপন নথিতে?
ফাঁস হওয়া ২০টি নথি পরীক্ষা করে বিবিসি জানিয়েছে, ইউক্রেনীয় বাহিনীকে যেসব সরঞ্জাম ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে, সেগুলোর বিশদ বর্ণনা এবং দু’পক্ষের হতাহতের সংখ্যার তথ্য রয়েছে এতে। সেই সঙ্গে, আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে নতুন আক্রমণ পরিচালনার জন্য ইউক্রেনের বেশ কিছু ব্রিগেডকে একত্রিত করার বর্ণনাও তুলে ধরা হয়েছে।
কখন এসব ব্রিগেড আক্রমণের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত হবে এবং সেগুলোর জন্য পশ্চিমা মিত্রদের দেওয়া ট্যাংক, সাঁজোয়া যান ও কামানের বিস্তারিত বর্ণনা দেওয়া হয়েছে ফাঁস হওয়া নথিতে।
আরও পড়ুন>> ইউক্রেনকে ১৫৬০ কোটি ডলার দিচ্ছে আইএমএফ
একটি মানচিত্রে একটি এলাকাকে ‘কাদা-বরফে আচ্ছাদিত এলাকা’ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে, যার মাধ্যমে বসন্ত এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে পূর্ব ইউক্রেনের স্থল পরিস্থিতি বর্ণনা করা হয়েছে।
নথি ফাঁস হওয়ায় যুদ্ধ পরিকল্পনা বদলাচ্ছে ইউক্রেন। ছবি সংগৃহীত
এই শীতেই ইউক্রেনের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তাদের সর্বোচ্চ ক্ষমতা পর্যন্ত হামলা মোকাবিলা করেছে। সেখানে কিয়েভের ক্রমশ কমতে থাকা প্রতিরক্ষা ক্ষমতার একটি গভীর বিশ্লেষণও রয়েছে।
ফাঁস হওয়া এসব নথিপত্রে রাষ্ট্র হিসেবে শুধু ইউক্রেনের অবস্থাই তুলে ধরা হয়নি, সেখানে ওয়াশিংটনের আরও কিছু মিত্রের বিষয়েও তথ্য রয়েছে। ইউক্রেন ইস্যুতে ইসরায়েল থেকে দক্ষিণ কোরিয়া পর্যন্ত বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের আলোচনার বিষয়টি এসব নথিতে উঠে এসেছে।
এর মধ্যে কিছু কাগজপত্র ‘চরম গোপনীয়’ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। আবার কিছু নথিপত্রের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, এগুলো যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ গোয়েন্দা সহযোগীদের সঙ্গে ভাগাভাগি করা যাবে।
নথিগুলো ফাঁস করলো কারা?
কীভাবে এসব নথিপত্র ডিসকর্ড নামে একটি মেসেজিং অ্যাপ থেকে ফোরচ্যান হয়ে টেলিগ্রামে গেছে, সেটি তুলে ধরেছেন ইনভেস্টিগেটিভ ওপেন সোর্স ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ বেলিংক্যাটের এরিক টোলার।
নথি বলছে, জেলেনস্কির ওপর নজরদারি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ছবি সংগৃহীত
তিনি বলেছেন, ঠিক কোথা থেকে এসব তথ্য এসেছে, তা এখনো জানা যায়নি। তবে গেমারদের কাছে জনপ্রিয় একটি সাইটে গত মার্চ মাসে এসব নথিপত্র প্রথমবার প্রকাশ করা হয়।
আরও পড়ুন>> ‘২৪ ঘণ্টার মধ্যে’ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে পারি: ট্রাম্প
কম্পিউটার গেম মাইনক্রাফটের একদল খেলোয়াড়ে মেসেজিং প্ল্যাটফর্ম ডিসকর্ডে ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে কথা বলছিল। এই সময় একজন বলেন, ‘এই দেখো, এখানে কিছু ফাঁস হওয়া নথিপত্র রয়েছে।’ এরপর তিনি ১০টি নথি পোস্ট করেন।
এভাবে নথিপত্র ফাঁস বিরল হলেও একেবারে নতুন কিছু নয়। ২০১৯ সালে যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচনের আগে যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্য বাণিজ্য চুক্তির নথিপত্র এভাবে রেডিট, ফোরচ্যান এবং অন্যান্য সাইটে প্রকাশ করা হয়েছিল। সেই সময় রেডিট জানিয়েছিল, এসব নথিপত্র রাশিয়া থেকে এসেছে।
গত বছর আরেকটি ঘটনায় অনলাইন গেম ওয়ার থান্ডারের খেলোয়াড়রা বেশ কিছু স্পর্শকাতর সামরিক নথিপত্র প্রকাশ করেছিল। তবে সবশেষ নথি ফাঁসের ঘটনাটি অনেক বেশি স্পর্শকাতর ও অনেক বেশি ক্ষতিকর বলে মনে করা হচ্ছে।
কেএএ/