দৈনিক ১৬ বার সূর্যাস্ত দেখেন

মহাকাশকেন্দ্রে কীভাবে রোজা রাখবেন আলনেয়াদি?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০২:০৩ পিএম, ২৩ মার্চ ২০২৩
ছবি: সংগৃহীত

শত শত বছর ধরে সূর্যোদয়-সূর্যাস্তের ওপর নির্ভর করে রোজা পালন করে আসছেন ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা। সূর্য ওঠার মুহূর্ত থেকে ডুবে যাওয়া পর্যন্ত সবধরনের পানাহার থেকে বিরত থাকেন তারা। সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে ইফতারের মাধ্যমে সম্পন্ন হয় একটি পূর্ণ রোজা। কিন্তু সূর্যের উদয়-অস্তের এই নিয়ম যদি হঠাৎ বদলে যায়, তাহলে? যদি এমন কোনো জায়গায় গিয়ে পড়েন, যেখানে দৈনিক ১৬ বার সূর্যাস্ত দেখা যায়, সেখানে কীভাবে রোজা রাখবেন মুসলিমরা? ঠিক এই প্রশ্নেরই মুখে পড়েছেন আন্তর্জাতিক মহাকাশকেন্দ্রের মুসলিম নভোচারী সুলতান আলনেয়াদি।

মহাকাশে অবস্থিত গবেষণাকেন্দ্রটি প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ১৭ হাজার মাইল (২৭ হাজার ৬০০ কিলোমিটার) বেগে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করছে। সেখানকার নভোচারীরা প্রতিদিন ১৬ বার করে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখতে পান। অর্থাৎ প্রতি ৯০ মিনিট পরপর সূর্যাস্ত-সূর্যোদয় দেখেন তারা।

আরও পড়ুন>> ইতিহাসে প্রথমবার বর্ণিল সাজে রমজানকে স্বাগত জানাচ্ছে লন্ডন

গত ৩ মার্চ মহাকাশকেন্দ্রের উদ্দেশে যাত্রা শুরুর আগে এই বিষয়টি নিয়েই প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছিলেন সুলতান আলনেয়াদি। পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘুরতে থাকা ভাসমান পরীক্ষাগারটিতে যেতে পারা অল্প কিছু মুসলিমের মধ্যে অন্যতম তিনি। মহাকাশকেন্দ্রে একটানা পাঁচ মাস থাকবেন আলনেয়াদি। এর মাধ্যমে তিনি হবেন মহাশূন্যে দীর্ঘদিন অবস্থান করা সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রথম নভোচারী।

আলনেয়াদি মহাকাশকেন্দ্রে থাকা অবস্থাতেই পৃথিবীতে শুরু হয়েছে রমজান মাস। বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) থেকে রোজা পালন করছেন তার দেশ আমিরাতসহ বিভিন্ন দেশের মুসলিমরা। বাকি দেশগুলোতেও শুক্রবার থেকে রোজা শুরু হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন>> সৌদিতে রমজানের চাঁদ দেখা যায়নি, রোজা শুরু ২৩ মার্চ

কিন্তু পবিত্র এই মাসে পৃথিবীর কোনো দেশে তো নয়ই, মাটির সংস্পর্শেও থাকছেন না আলনেয়াদি। তাহলে তিনি রোজা পালন করবেন কোন নিয়মে?

এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে বিষয়টি ব্যাখ্যা করে আলনেয়াদি বলেন, নভোচারী হিসেবে তিনি একধরনের ‘ভ্রমণকারী’। এটি তাকে সারা পৃথিবীর মুসলিমদের সঙ্গে একই সময়ে রমজান পালনের বাধ্যবাধকতা থেকে মুক্ত করেছে। তার ভাষ্যমতে, আমরা আসলে রোজা ভাঙতে পারি। (মহাকোশে) এটি বাধ্যতামূলক নয়।

jagonews24

তিনি বলেন, অসুস্থবোধ করলে আপনার জন্য রোজাপালন বাধ্যতামূলক নয়। সেই বিচারে, মিশনকে বা ক্রু সদস্যকে ঝুঁকিতে ফেলতে পারে, এমন পরিস্থিতি এড়াতে এবং খাদ্য বা পুষ্টি বা হাইড্রেশনের অভাব বেড়ে যাওয়া আটকাতে আমরা পর্যাপ্ত খাবার খাওয়ার অনুমতি পেয়েছি।

গত ফেব্রুয়ারিতে দুবাইয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সুলতান আলনেয়াদি জানান, তিনি গ্রিনিচ মিন টাইম বা মহাকাশকেন্দ্রে অফিসিয়াল টাইম জোন হিসেবে ব্যবহৃত সমন্বিত ইউনিভার্সাল টাইম অনুযায়ী রোজা রাখতে পারেন।

আরও পড়ুন>> বৃহস্পতিবার থেকেই রোজা রাখছেন পাকিস্তানিরা

তার আগের মাসে তিনি বলেছিলেন, আমাদের যদি সুযোগ থাকে, অবশ্যই রমজান রোজা রাখার একটি ভালো উপলক্ষ এবং এটি আসলেই স্বাস্থ্যকর। তাই আমরা অপেক্ষা করবো এবং দেখবো এটি কীভাবে যায়।

ইতিহাস কী বলে
২০০৭ সালে প্রথম মুসলিম ধর্মাবলম্বী হিসেবে আন্তর্জাতিক মহাকাশকেন্দ্রে থাকার রেকর্ড গড়েন মালয়েশিয়ার শেখ মুসজাফর শুকর। সেসময় মালয়েশিয়ার ইসলামিক ন্যাশনাল ফতোয়া কাউন্সিল মুসজাফর এবং ভবিষ্যতের অন্য মুসলিম মহাকাশচারীদের জন্য বিশেষ নির্দেশিকা জারি করে।

মুসজাফরের মিশনের মধ্যেই রমজান শুরু হয়ে যাওয়ায় ফতোয়া কাউন্সিল ঘোষণা দিয়েছিল, পৃথিবীতে ফিরে না আসা পর্যন্ত তার রোজা স্থগিত করা যেতে পারে বা তিনি যে জায়গা থেকে মহাকাশের উদ্দেশে যাত্রা করেছিলেন, সেই জায়গার সময় অনুসারে রোজা রাখতে পারেন।

আরও পড়ুন>> সবচেয়ে বেশি ও কম সময় রোজা রাখতে হবে যেখানে

এছাড়া, প্রতিকূল পরিবেশের কারণে নামাজের সময় রুকু বা সিজদার বাধ্যবাধকতা থেকেও মুসজাফর মুক্ত বলে জানানো হয়।

নামাজের সময় মুসলিমদের অবশ্যই মক্কার দিকে মুখ রাখার নিয়ম রয়েছে। তবে নভোচারীরা সুবিধাজনক দিকে কিবলা করে নামাজ আদায় করতে পারবেন বলে ঘোষণা দেয় মালয়েশিয়ার ইসলামিক ন্যাশনাল ফতোয়া কাউন্সিল।

সূত্র: সিএনএন
কেএএ/

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।