বাংলাদেশে সোনার দাম দুবাই-পাকিস্তানের চেয়ে বেশি!
আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে মিল রেখে পাকিস্তানে আবারও কমলো সোনার দাম। সেখানে এখন ১০ গ্রাম প্রায় শতভাগ খাঁটি (২৪ ক্যারেট) সোনার দাম ১ লাখ ৭৫ হাজার ৬৮ রুপি, বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ৬৬ হাজার ৫২১ টাকা প্রায়। আর বাংলাদেশে বর্তমানে ২২ ক্যারেট সোনার দামই ভরিপ্রতি ৯৭ হাজার ৬২৮ টাকা। সেই হিসাবে এক ভরি সমান ১১ দশমিক ৬৬ গ্রাম ধরলে দেশে ১০ গ্রাম সোনার দাম দাঁড়ায় ৮৩ হাজার ৭২৮ টাকার মতো। অর্থাৎ, বাংলাদেশে সোনার দাম এখন পাকিস্তানের চেয়েও বেশি।
অল-পাকিস্তান সারাফা জেমস অ্যান্ড জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (এপিএসজিজেএ) তথ্যের ভিত্তিতে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম জিও নিউজ জানিয়েছে, মঙ্গলবার (২১ মার্চ) পাকিস্তানে ২৪ ক্যারেট সোনার দাম তোলাপ্রতি ৩ হাজার ১০০ রুপি কমে ২ লাখ ৪ হাজার ২০০ রুপিতে দাঁড়িয়েছে। আর একই সোনার দাম প্রতি ১০ গ্রামে ২ হাজার ৬৫৮ রুপি কমে হয়েছে ১ লাখ ৭৫ হাজার ৬৮ রুপি।
আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দরপতন এবং পাকিস্তানে রুপির মূল্যমান বাড়ায় অভ্যন্তরীণ বাজারে সোনার দাম কমেছে বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যমটি।
আরও পড়ুন>> ইতিহাস গড়ে সোনার দাম লাখ টাকা ছুঁই ছুঁই
এপিএসজিজেএ আরও জানিয়েছে, দুবাইয়ের তুলনায় পাকিস্তানে সোনার দাম তোলাপ্রতি ১৩ হাজার রুপি কম। অর্থাৎ, বৈশ্বিক বাজারের তুলনায় পাকিস্তানের সোনার বাজার এখন বেশ সস্তা।
খবরে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক বাজারে টানা দ্বিতীয়দিনের মতো কমেছে সোনার দাম। গত সোমবার আন্তর্জাতিক বাজারে একপর্যায়ে সোনার দাম উঠেছিল প্রতি আউন্স ২ হাজার ৯ দশমিক ৫৯ ডলারে, যা ২০২২ সালের মার্চ মাসের পর থেকে সর্বোচ্চ। তবে খুব শিগগির কমতে শুরু করে এর দাম।
আগের সেশনের তুলনায় মঙ্গলবার প্রতি আউন্স সোনার দাম ১৪ ডলার কমে ১ হাজার ৯৬৮ মার্কিন ডলারে (২ লাখ ১০ হাজার ৫৮৪ টাকা প্রায়) স্থির হয়েছে।
১ আউন্স সমান ২৮ দশমিক ৩৫ গ্রাম এবং ১ ডলার সমান ১০৭ টাকা ধরে হিসাব করলে, আন্তর্জাতিক বাজারে বর্তমানে ১০ গ্রাম সোনার দাম ৭৪ হাজার ২৭৯ টাকা প্রায়।
এদিকে, বাংলাদেশে রেকর্ড দাম বাড়ার তিন দিনের মাথায় মঙ্গলবার কিছুটা কমেছে সোনার দাম। অভ্যন্তরীণ বাজারে সবচেয়ে ভালো মানের সোনার দাম ভরিতে ১ হাজার ১৬৬ টাকা কমিয়ে ৯৭ হাজার ৬২৮ টাকা করা হয়েছে। বুধবার (২২ মার্চ) থেকে কার্যকর হবে নতুন দাম।
আরও পড়ুন>> সোনার দাম: ৭৬৯৮ টাকা বেড়ে তিনদিন পর কমলো ১১৬৬ টাকা
বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির (বাজুস) ঘোষণা অনুযায়ী, দেশে এখন ২২ ক্যারেট সোনার দাম প্রতি ভরি (১১.৬৬৪ গ্রাম) ৯৭ হাজার ৬২৮ টাকা। ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনার দাম ১ হাজার ১০৮ টাকা কমে ৯৩ হাজার ১৯৫ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনার দাম ৯৩৪ টাকা কমে ৭৯ হাজার ৮৯৮ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির সোনার দাম ভরিতে ৭৫৮ টাকা কমে ৬৬ হাজার ৫৪৩ টাকা হয়েছে।
এর আগে, গত ১৮ মার্চ দেশের বাজারে এক লাফে সোনার দাম ভরিতে ৭ হাজার ৬৯৮ টাকা বাড়িয়ে ৯৮ হাজার ৭৯৪ টাকা করা হয়। এর আগে বাংলাদেশে কখনোই সোনার দাম এত হয়নি।
মঙ্গলবারের ঘোষণায় দেশের বাজারে সোনার দাম কমলেও অপরিবর্তিত রয়েছে রুপার দাম। ২২ ক্যারেটের এক ভরি রুপা ১ হাজার ৭১৫ টাকা, ২১ ক্যারেটের রুপা ১ হাজার ৬৩৩ টাকা, ১৮ ক্যারেটের রুপা ১ হাজার ৪০০ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির রুপা এক হাজার ৫০ টাকা ভরি বিক্রি হচ্ছে।
আরও পড়ুন>> হঠাৎ ফাঁকা আরাভ জুয়েলার্স, কাজ শুরু করেছে বাংলাদেশ-ভারত-দুবাই
তবে পাকিস্তানে সোনার পাশাপাশি রুপার দামও কমানো হয়েছে। মঙ্গলবার দেশটিতে রুপার দাম তোলাপ্রতি ৫০ রুপি এবং প্রতি ১০ গ্রামে ৪২ দশমিক ৮৬ রুপি কমে যথাক্রমে ২ হাজার ২০০ এবং ১ হাজার ৮৮৬ দশমিক ১৪ রুপিতে বিক্রি হচ্ছে।
সোনার দামে ক্যারেটের ফারাক
ক্যারেট সাধারণত ওজন পরিমাপের একক। তবে সোনার ক্ষেত্রে এর বিশুদ্ধতা পরিমাপ করা হয় ক্যারেটে। ক্যারেট যত বেশি, সোনার বিশুদ্ধতাও তত বেশি। এর ভিত্তিতেই নির্ধারিত হয় সোনার দাম। ২৪, ২২, ১৮ ও ১৪ ক্যারেটের সোনা পাওয়া যায় বাজারে।
২৪ ক্যারেট সোনা:
২৪ ক্যারেট সোনা মানে ৯৯ দশমিক ৯৯ শতাংশ খাঁটি। এতে অন্য কোনো ধাতু মেশানো হয় না। এটিই সোনার বিশুদ্ধতম রূপ। তাই ২২ বা ১৮ ক্যারেট সোনার চেয়ে এর দাম বেশি হয়। ২৪ ক্যারেট সোনা নমনীয়। তাই গয়না তৈরিতে ব্যবহার করা হয় না বললেই চলে। বিনিয়োগের উদ্দেশ্যেই এতে টাকা ঢালা হয়।
২২ ক্যারেট সোনা:
গয়না তৈরিতে ব্যবহৃত হয় ২২ ক্যারেট সোনা। এটি ৯১ দশমিক ৬৭ শতাংশ খাঁটি সোনা হিসেবে পরিচিত। এতে রূপা, দস্তা, নিকেল ও অন্যান্য ধাতু মেশানো হয়। মিশ্র ধাতুর উপস্থিতি এটিকে আরও শক্ত করে তোলে। তাই এই সোনা দিয়েই গয়না তৈরি করা হয়।
১৮ ক্যারেট সোনা:
১৮ ক্যারেট সোনায় ৭৫ শতাংশ সোনা এবং ২৫ শতাংশ অন্যান্য ধাতু; যেমন- তামা, রুপা মেশানো হয়। এ ধরনের সোনা পাথরখচিত গয়না এবং অন্যান্য হীরের গয়না তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এটি ২৪ ক্যারেট ও ২২ ক্যারেট সোনার চেয়ে সস্তা হলেও তুলনামূলক বেশি শক্ত।
১৪ ক্যারেটের সোনা:
১৪ ক্যারেটের সোনা হলো ৫৮ দশমিক ৫ শতাংশ খাঁটি সোনা এবং বাকিটা অন্য ধাতুর মিশ্রণ। ১৮ ক্যারেট সোনার তুলনায় ১৪ ক্যারেট বেশি টেকসই এবং দামেও সস্তা। ১৮ ও ১৪ ক্যারেট সোনার গয়না দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্য ভালো।
কেএএ/