ব্যাংক দেউলিয়া
গ্রাহকদের বিপদে ফেলে হাওয়াইয়ে পালিয়েছেন সিলিকন ভ্যালির ‘নিরো’
বাংলায় একটা প্রবাদ রয়েছে, ‘রোম যখন পুড়ছিল, নিরো তখন বাঁশি বাজাচ্ছিলেন’। অর্থাৎ রোম নগরী ধ্বংস হয়ে যাওয়ার সময় নির্লিপ্ত ছিলেন এই রোমান সম্রাট। রাজ্য ও রাজ্যবাসীদের বাঁচাতে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে নিজের খুশিতে মাতোয়ারা ছিলেন তিনি। সেই ইতিহাসই কি ফিরিয়ে আনলেন সম্প্রতি দেউলিয়া হয়ে যাওয়া সিলিকন ভ্যালি ব্যাংকের (এসভিবি) সদ্য-সাবেক প্রধান নির্বাহী (সিইও) গ্রেগরি বেকার?
গত ১০ মার্চ ৪০ বছরের পুরোনো ব্যাংকটি বন্ধ করে দিয়ে তাদের সব আমানতের দায় নিজের হাতে তুলে নেয় যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা। বলা হচ্ছে, ২০০৮ সালের অর্থনৈতিক মন্দার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে বৃহত্তম ব্যাংকের পতন এটি। এর ফলে গ্রাহকদের শত শত কোটি ডলার আটকে গেছে। এ ঘটনার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে গোটা বিশ্বের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার ওপর। এসভিবির পতনের জেরে দরপতন হয়েছে বহু আর্থিক প্রতিষ্ঠানের, আতঙ্কে ভুগছেন বিনিয়োগকারীরা।
আরও পড়ুন>> ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক
অথচ যে প্রতিষ্ঠানের জন্য বিশ্বজুড়ে এমন চরম অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে, তার সদ্য-সাবেক সিইও গ্রেগ বেকার এখন আয়েশি সময় কাটাচ্ছেন হাওয়াই দ্বীপে। সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরপরই স্ত্রীকে নিয়ে দ্বীপের বিলাসবহুল বাড়িতে পাড়ি জমান তিনি।
আরও পড়ুন>> দেউলিয়া হওয়ার শঙ্কায় আরও ব্যাংক, সতর্ক যুক্তরাষ্ট্র
সম্প্রতি হাওয়াই দ্বীপে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইলের ক্যামেরায় ধরা পড়েছেন গ্রেগ বেকার ও তার স্ত্রী মেরিলিন বাউটিস্তা।
খবরে বলা হয়েছে, সিলিকন ভ্যালি ব্যাংকের গ্রাহকরা যখন জমা রাখা টাকা কবে ফেরত পাবেন আদৌ পাবেন কি না তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভুগছেন, তখন প্রতিষ্ঠানটির সাবেক বস হাওয়াইয়ে সাগরপাড়ের বাড়িতে বসে সূর্যের আলো গায়ে মাখছেন। যেন সব ঝামেলা তিন হাজার মাইল পেছনে ফেলে এসেছেন তিনি।
ডেইল মেইল জানিয়েছে, বেকার ও তার স্ত্রী মেরিলিন গত সোমবার (১৩ মার্চ) বিকেলে একটি কালো লিমুজিনে চড়ে সান ফ্রান্সিসকো বিমানবন্দরে যান। সেখান থেকে ইউনাইটেড এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে প্রথম শ্রেণির আসনে বসে হাওয়াইয়ে পৌঁছান। সেখানে ৩১ লাখ ডলারের একটি বাংলো বাড়ি রয়েছে তাদের। গত বুধবার এ দম্পতিকে শর্টস ও চপ্পল পরে দ্বীপের লাহাইনার রাস্তায় হাঁটতে দেখা গেছে।
আরও পড়ুন>> যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাংক বিপর্যয়ে দায়ীদের সতর্ক করলেন বাইডেন
৫৫ বছর বয়সী গ্রেগরি বেকার ২০১১ সালে সিলিকন ভ্যালি ব্যাংকের সিইওর দায়িত্ব নেন। গত ১৩ মার্চ বন্ধ হয়ে যাওয়ার আগপর্যন্ত এই পদে ছিলেন তিনি। মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান বাণিজ্যিক ব্যাংকটির পতনের জন্য বেকারকে দায়ী করছেন অনেকে।
আরও পড়ুন> বন্ধ হলো আরও একটি মার্কিন ব্যাংক
ব্যাংকটি বন্ধ হওয়ার কয়েক সপ্তাহ আগে বেকারের ৩৫ লাখ ৭০ হাজার ডলারের শেয়ার ক্যাশ আউট করার সিদ্ধান্তের বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ। সিএনবিসি জানিয়েছে, গত দুই বছরে সিলিকন ভ্যালি ব্যাংকের প্রায় তিন কোটি ডলারের শেয়ার বিক্রি করেছেন সাবেক সিইও।
কেএএ/