সৌদি-ইরানকে এক করলো চীন, পশ্চিমাদের মাথাব্যথা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১:৫২ পিএম, ১২ মার্চ ২০২৩
ছবি: সংগৃহীত

প্রায় সাত বছর বন্ধ থাকার পর আবারও কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনে সম্মত হয়েছে সৌদি আরব ও ইরান। চীনের মধ্যস্থতায় কয়েকদিনের আলোচনার পর অবশেষে দূতাবাস ফের চালু করতে রাজি হয়েছে দুই দেশ। মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিমপ্রধান ও তেলসমৃদ্ধ দুই দেশের এই পুনর্মিলন বিশ্ব ব্যবস্থায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে তা বলা বাহুল্য।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন বলছে, সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের ঘোষণাটি আশ্চর্যজনক হলেও প্রত্যাশিত ছিল। কারণ দুটি দেশ প্রায় দু’বছর ধরে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালিয়ে আসছিল।

২০১৬ সালের পারমাণবিক চুক্তি পুনরুজ্জীবিত করা নিয়ে ইরান ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে আলোচনার স্থবিরতা দেখা দেয়। তবে সেসময় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনায় বসে সৌদি আরব ও ইরান। তারপর থেকেই আঞ্চলিক জোটে পরিবর্তন আসতে শুরু করে।

আরও পড়ুন>> 

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সৌদি আরবের সম্পর্ক ‘উত্তেজনাপূর্ণ’ হয়েছে। অন্যদিকে, বিশ্ব রাজনীতি ও মধ্যপ্রাচ্য চীনের অবস্থান আগের থেকে অনেক বেশি শক্তিশালী হয়েছে। ওয়াশিংটনকে টপকে বেইজিং মধ্যপ্রাচ্যে অভানীয় প্রভাব বিস্তার করার ক্ষমতা দেখিয়েছে।

অদূর অতীতে গেলে দেখা যায়, বেইজিং বছরের পর বছর ধরে মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাতময় দেশগুলোতে কূটনৈতিক সম্পর্কে অগ্রগতি অর্জনের চেষ্টা করেছে। এর পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের হ্রাসমান আঞ্চলিক প্রভাবকে দূরে সরানোর সাহস দেখিয়েছে ও অনেকের দাবি, চীন তাদের এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে বেশ সফলতা পেয়েছে।

ওয়াশিংটন ভিত্তিক কুইন্সি ইনস্টিটিউটের নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট শুক্রবার এক টুইটে লেখেন, যুক্তরাষ্ট্রের অনেকেই মধ্যপ্রাচ্যে চীনের ‘মধ্যস্থতাকারী’র ভূমিকাকে হুমকি বলে মনে করছেন। কিন্তু রিয়াদ ও তেহরানের মধ্যে সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হলে, যুক্তরাষ্ট্রও উপকৃত হবে।

আরও পড়ুন>> 

পার্সি আরও বলেন, এ উন্নয়নের ফলে যুক্তরাষ্ট্র তার মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক নীতিতে পরিবর্তন আনতে পারবে। মার্কিন নীতি-নির্ধারকদের এ বিষয়ে উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত। যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যের আঞ্চলিক দ্বন্দ্বে এতটাই গভীরভাবে জড়িয়ে পড়েছে যে, কোন পরিস্থিতিতে কোন সিদ্ধান্ত নিতে হবে তা নির্ধারণেই ভুল করে বসছেন দেশটির কূটনীতিকরা। আর এ কারণেই শান্তি প্রতিষ্ঠাকারী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের অতীত ভূমিকা পুরোপুরি চীনের হাতে চলে গেছে।

এক অন্ধকার যুগের অবসান

শুক্রবারের ওই চুক্তি মধ্যপ্রাচ্যে রক্তভেজা যুগের অবসান ঘটাতে পারে। ১৯৭৯ সালে ইরানের পশ্চিমাবিরোধী ইসলামি বিপ্লব ও শিয়া ধর্মতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার পর থেকেই রিয়াদ-তেহরানের মধ্যে মতাদর্শগত ও সামরিক দ্বন্দ্ব চলে আসছিল।

২০০৩ সালে ইরাকে মার্কিন আগ্রাসনের পর সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যকার দ্বন্দ্ব বা উত্তেজনা ছায়াযুদ্ধে রূপ নেয়। তখন থেকেই রিয়াদ ও তেহরান মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর পাশাপাশি বিশ্ব রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা চালানো শুরু করে। তবে নানা কারণে এক্ষেত্রে ইরান খুব একটা সফল হতে পারেনি।

আরও পড়ুন>> 

ইরান সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে সৌদি সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো সংঘাত পরবর্তী দেড় দশকে এ অঞ্চলের অধিকাংশ অংশকে কার্যত স্থবির করে দেয়। অন্যদিকে, ইয়েমেনে ইরান সমর্থিত বিদ্রোহীদের দমন করতে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের সামরিক অভিযান শুরু করে, যা বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ মানবিক সংকটগুলোর মধ্যে অন্যতম।

তাছাড়া, দুই দশকের দীর্ঘ এ রাজনৈতিক সংকটে সিরিয়া, ইয়েমেন, লেবানন ও অন্যান্য উপসাগরীয় দেশে বিশাল অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তাজনিত সংকট সৃষ্টি করে।

২০১৬ সালে সৌদি আরব শিয়া সৌদি ধর্মগুরু নিমর আল-নিমরকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। এর জেরে তেহরানের সৌদি দূতাবাসে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। তখন থেকেই দুই দেশ আনুষ্ঠানিকভাবে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে। তবে করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট অর্থনৈতিক সংকটের ফলে সৌদি ও ইরানের কর্মকর্তারা অন্ধকার সে অধ্যায়টি পুনরায় চালু করতে আগ্রহী হন।

আরও পড়ুন>> 

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, দ্বন্দ্ব চরমে পৌঁছানোর কারণেই রিয়াদ ও তেহরান সম্পর্ক পুনরুদ্ধারে বাধ্য হয়েছে। দু’দেশের কর্মকর্তারা বলছেন, তারা এক দশকের পুরোনো নিরাপত্তা সহযোগিতা চুক্তি পুনরায় প্রয়োগ করতে ও প্রযুক্তি, বাণিজ্যের ক্ষেত্রে আরও পুরনো সব চুক্তি পুনরুজ্জীবিত করবে। তবে দেখার বিষয় হলো, এ চুক্তি দুই দেশের ধ্বংসাত্মক মনোভাবকে কীভাবে প্রতিহত করে।

সূত্র: সিএনএন

এসএএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।