দ্য ইকোনমিস্টের বিশ্লেষণ

পূর্ব ইউরোপকে শক্তিশালী করেছে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১:১৬ পিএম, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
ছবি: সংগৃহীত

রাশিয়া ও ইউক্রেন ছাড়া পূর্ব ইউরোপের দেশসমূহ হচ্ছে মলদোভা, বেলারুশ, জর্জিয়া, আর্মেনিয়া, আজারবাইজান ও তুরস্ক। জার্মান চ্যান্সেলরের হোয়াইট হাউজ সফরকে একসময় ইউরো-আমেরিকান কূটনৈতিক সম্পর্কের চূড়া বিবেচনা করা হতো। জার্মানির ওলাফ শলৎজ ৩ মার্চ জো বাইডেনের সঙ্গে আলোচনার জন্য ওয়াশিংটন, ডিসি-তে যাবেন, তখন এটি সেই পাক্ষিক ইউরোপের সঙ্গে আমেরিকান প্রেসিডেন্টের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা বলে গণ্য নাও হতে পারে। গত সপ্তাহে মধ্য ইউরোপের দেশ পোল্যান্ড সফরের সময় বাইডেন ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এর পূর্ব প্রান্তের নেতাদের সঙ্গে দেখা করেন। ইউক্রেন যুদ্ধে তাদের সহায়তার জন্য প্রশংসাও করেন। এতে প্রতীয়মান হয় যে ইউরোপ যুদ্ধের ফলে পুনর্গঠিত হয়েছে ।

আরও পড়ুন> ইউক্রেনকে অস্ত্র দেওয়ায় জার্মানিতে বিক্ষোভ

ইউরোপীয় ইউনিয়নের পূর্ব প্রান্তের দেশগুলো মনে করে এখন সময় এসেছে। দেশগুলোর নেতাদের বক্তব্যে, পূর্ব দিকে একটি টেকটোনিক স্থানান্তর ঘটছে। ‘পুরোনো ইউরোপ’ থেকে ক্ষমতা দ্রুত বিলুপ্ত হচ্ছে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের আগ্রাসনের প্রথম সারিতে থাকা দেশগুলোর ভুল ধারণা ছিল। যুদ্ধ নতুন ধারণা ও নতুন নেতৃত্বের সুযোগ করে দিয়েছে। পোলিশ উপ পররাষ্ট্রমন্ত্রী পাওয়েল জাবলনস্কি বলেছেন, এটি সমগ্র ইউরোপের জন্য একটি অস্তিত্ব রক্ষার সময়। ইউক্রেন এখন প্রার্থী হয়ে এই ক্লাবের অংশ হতে পারে। কেউ কেউ স্বপ্ন দেখেন পোল্যান্ডের রাজধানী ওয়ারশ ও ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের মধ্যে একটি নতুন অক্ষ শক্তি তৈরি হতে পারে যেমন প্যারিস ও বার্লিনের মধ্যে আছে।

jagonews24

দ্রুত নয় তবে ইউরোপীয় দেশগুলোর মেজাজ যে পরিবর্তিত হয়েছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। পোল্যান্ডের মতো দেশগুলো যেমন ন্যাটোর পূর্বাঞ্চলীয় ৯টি দেশের জোট ‘বুখারেস্ট নাইন বা বি-নাইন’ এর ওপর গুরুতর প্রভাব ফেলছে। এসব দেশ হলো বুলগেরিয়া, চেক প্রজাতন্ত্র, এস্তোনিয়া, হাঙ্গেরি, লিথুয়ানিয়া, লাটভিয়া, পোল্যান্ড, রোমানিয়া ও স্লোভাকিয়া। ২০০৪ সালে এসব দেশ ন্যাটোর সদস্য হয়। এই অঞ্চলটি এর আগে একটি বৃহত্তর ইউরোপীয় নেতৃত্বের ভূমিকার সুযোগ নষ্ট করেছে।

 আরও পড়ুন> দ্বিতীয় বছরে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, ইতি টানছে না কেউই

পশ্চিম ইউরোপীয়রাও স্বীকার করে এটি মধ্য ইউরোপের দেশগুলোর সময়। গ্যাসের জন্য রাশিয়ার ওপর নির্ভর করার ঝুঁকি জার্মানিতে অতি-উদ্বেগজনক বিবেচিত হতো। এখন তারা দূরদর্শী সম্পন্ন। মধ্য ইউরোপীয় দেশগুলো যেভাবে লাখ লাখ ইউক্রেনীয়কে সহায়তা করেছে তার জন্য ব্যাপক প্রশংসা পাচ্ছে।

jagonews24

ইউক্রেনকে সাহায্য করার জন্য এই অঞ্চলের অস্ত্রাগার নিষ্কাশন করা হয়েছে। পোল্যান্ড থেকে লেপার্ড ট্যাংকের প্রথম চালান ছাড়া হয়েছে এবং প্রচুর নতুন সামরিক কিট অর্ডার করা হয়েছে। সবই মধ্য ইউরোপকে নৈতিক নেতৃত্বের সুযোগ করে দিয়েছে ইইউর টেবিলে কথা বলার জন্য। একজন পশ্চিম ইউরোপীয় কূটনীতিক বলেন, ‘আমরা সবসময় তাদের কথা শুনতাম। এখন সম্ভবত আমরা একটু বেশি শুনি।’

নিরাপত্তা ও হুমকির ওপর জোর দেওয়া একটি ভিন্ন ইস্যু। পোল্যান্ড ও অন্যান্য ফ্রন্টলাইনে থাকা দেশগুলোর জন্য রাশিয়ার হুমকি শিগগির হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। এই অঞ্চলের নেতারা দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছেন পুতিনের সাম্রাজ্যবাদী উচ্চাকাঙ্ক্ষা একদিন তাদের দিকে ফিরে আসবে। ওয়ারশের একটি থিংক ট্যাংক ওএসডব্লিউ-এর জাস্টিনা গোতকোস্কা বলেছেন,যতদিন পুতিন ক্ষমতায় থাকবেন, ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতি হলেও, আমরা ধরে নিই যে এটি যুদ্ধে বিরতিই হবে, মিমাংসা নয়।

পশ্চিম ইউরোপ সামগ্রিকভাবে, ভিন্নভাবে বিষয়টি অনুধাবন করে। ইউক্রেনও সেখানে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। দেশটিকে সাহায্য করার জন্য বিলিয়ন বিলিয়ন ব্যয় করা হচ্ছে, সশস্ত্র বাহিনীকে সমৃদ্ধ করা হচ্ছে। যুদ্ধ মহাদেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করেছে। ফিনল্যান্ড ও লিথুয়ানিয়ানদেরও নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে।

jagonews24

কিন্তু ব্রাসেলস, ডাবলিন বা প্যারিস থেকে দেখা যায়, যুদ্ধ সত্ত্বেও জীবন চলে। জ্বালানির ক্ষেত্রে নতুন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ইউরো জোন মাইগ্রেশন বা ব্রেক্সিট যাই হোক না কেন, গত এক দশকে ইউরোপীয় দেশগুলো অনেক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে। এটি আগামী বছরগুলোতেও আরও সমস্যার মুখোমুখি হবে, তাকে কোনো সন্দেহ নেই।

ইইউ নেতারা যখন ব্রাসেলসে মিলিত হন, তখন ফোকাস পয়েন্ট আর শুধু ইউক্রেনের দিকে থাকে না। অবৈধ অভিবাসনের পুনরুত্থানে ইউরোপের যে পদ্ধতিতে প্রতিক্রিয়া জানানো উচিত, তা বলা বা আমেরিকার সবুজ ভর্তুকিতে প্রতিক্রিয়া জানানোর মতোই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ওঠে আসে। এটি মধ্য ইউরোপীয়দের জন্য বিস্ময়কর যে পুতিন তাদের ঘাড়ে নিঃশ্বাস নিতে পারেন। তাদের কাছে, ইউক্রেন ব্যতীত অন্য কিছু নিয়ে আলোচনা করা মানে অবমূল্যায়ন করা।

পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মাতেউস মোরাউইকি ইউরোপের বাকি অংশকে ‘জাগিয়ে দেওয়ার’ জন্য তাকে যে কাজটি করতে হবে তার কথা বলেছেন। পোল্যান্ড যুক্তিসঙ্গতভাবে আশা করতে পারে যুদ্ধে তার ভূমিকা ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী দ্বন্দ্ব নিরসনে সহায়তা করবে।

jagonews24

বুখারেস্ট নাইন এর জনসংখ্যা ৯৫ মিলিয়ন যা মোট ইউরোপীয় অঞ্চলের এক পঞ্চমাংশের কাছাকাছি। তাদের সম্মিলিত জিডিপি বাজারের হারে ইউরোপের মোট জিডিপির মাত্র দশ ভাগ। শুধু পোল্যান্ডকে একটি বড় সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে গণনা করা হয়। তারা ঐক্যবদ্ধও নয়। হাঙ্গেরির স্বৈরাচারী নেতা ভিক্টর অরবান কীভাবে রাশিয়ার পাশে দাঁড়িয়েছেন তাও দেখার বিষয়। ইউক্রেন বা পশ্চিম বলকান পর্যন্ত ইউরোপীয় অঞ্চল সম্প্রসারিত হলে এই সংখ্যা এবং অঞ্চলের গুরুত্বও বৃদ্ধি পাবে।

ইউরোপীয় অঞ্চলের দেশগুলো মহাদেশের সাধারণ সমস্যাগুলো সমাধান করার ক্ষমতা ও ইচ্ছার মাধ্যমে প্রভাব অর্জন করতে পারে। সেই সমস্যাগুলো কী সেটি সম্পর্কে বোঝার জন্য শেয়ার করা প্রয়োজন। পোল্যান্ড ও এর মিত্রদের যোগাযোগ অব্যাহত থাকবে যখন ইউরোপ ও বিশ্বের নজর তার সীমান্তের কাছে যা ঘটছে তার ওপর। তবুও যা দেখা যায় তা ততটা স্পষ্ট নয়।

সূত্র: দ্য ইকোনমিস্ট

এসএনআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।