রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ
প্রতিশ্রুতির অধিকাংশই পূরণ করেনি জার্মানি
ইউক্রেনে ‘সামরিক অভিযান’ শুরুর মাত্র তিনদিন পরে জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ কিয়েভকে যুগান্তকারী সমর্থন দেওয়ার ঘোষণা দেন। গত বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি পার্লামেন্টে দেওয়া বক্তৃতায় জার্মান চ্যান্সেলর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে ‘জেইটেনওয়েন্ডে’ বা ‘সময়োপযোগী পরিবর্তন’ আনার প্রতিশ্রুতি দেন।
সেসময় শলৎজ যে ধরনের পরিবর্তনের কথা উল্লেখ করেছিলেন সেটা জার্মানদের কাছে ‘ডাই ওয়েন্ডে’ নামে পরিচিত। এটি মূলত ১৯৮০-৯০ সালের শান্তিপূর্ণ বিপ্লবকে নির্দেশ করে, যা সমাজতান্ত্রিক পূর্ব জার্মানিকে পুঁজিবাদী পশ্চিম জার্মানির সঙ্গে পুনরায় একত্রিত করতে সবচেয়ে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
আরও পড়ুন>> যুদ্ধের এক বছরে রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞার হিড়িক
গত বছর চ্যান্সেলর নির্বাচিত হওয়ার পরে জার্মানির প্রতিরক্ষা বাজেট দ্বিগুণ করার মাধ্যমে ১০ হাজার ৭০০ কোটি ডলার করা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। সেই সঙ্গে ন্যাটোভূক্ত দেশগুলোর চুক্তি অনুসারে, জিডিপির ২ শতাংশ সামরিকখাতে ব্যয় ও রাশিয়ার ওপর নির্ভরতা শেষ করার অঙ্গীকারও করেছিলেন তিনি। কিন্তু সেসব প্রতিশ্রুতির কোনোটিই এখনো ঠিকঠাক পূরণ করতে পারেননি শলৎজ।
আবার আকেটি বিষয় হলো, ইউক্রেনে অস্ত্র সরবরাহ ও ইউক্রেনীয় সৈন্যদের প্রশিক্ষণ দিলে রাশিয়ার রোষের মুখে পড়তে পারে জার্মানি। জার্মানি জ্বালানির জন্য রাশিয়ার ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। গত শীতেই রাশিয়া পর্যাপ্ত জ্বালানি না দিলে কী রকম ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে, তা হাড়ে হাড়ে বুঝেছে জার্মানি। তাই, একক পক্ষ হিসেবে রাশিয়াকে ক্ষেপাতে যাবে না শলৎজ।
এখন প্রশ্ন হলো, নিজ দেশের জনগণকে দেওয়া প্রতিশ্রুতিই যখন এখনো পূরণ করতে পারেননি শলৎজ, সেক্ষেত্রে রাশিয়াকে দেওয়া প্রতিশ্রুতিগুলোর কী অবস্থা? সহজ উত্তর হলো, জার্মান চ্যান্সেলর কিছু প্রতিশ্রুতি পূরণ করলেও, অধিকাংশই অপূর্ণ রয়ে গেছে।
যুদ্ধের শুরুতে জার্মানি ইউক্রেনকে উদারভাবে সহায়তা করার ও নিজস্ব সেনাবাহিনীর সক্ষমতা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু ঝিমিয়ে পড়া সেনাবাহিনীকে পুনরুজ্জীবিত করার দৃঢ় সংকল্প বাজেভাবে ব্যর্থ হয়েছে।
আরও পড়ুন>> যুদ্ধের কারণে বানচাল ইউরোপের অর্থনীতি
হেনরিখ ব্রাউস নামের সাবেক জার্মান সেনা কর্মকর্তা ও ন্যাটোর শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, আমার দৃষ্টিতে আমরা শুধু শুধু একটি বছর হারিয়েছি। কারণ এখনো কিছুই করা হয়নি। জার্মানির ভৌগলিক অবস্থান ও জটিল রাজনীতির পরিপ্রেক্ষিতে ইউক্রেনকে সাহায্য করার বিষয়ে সাধারণ জার্মান নাগরিকদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করা মোটেই সহজ কাজ নয়। তবুও বর্তমান সরকার এক্ষেত্রে মোটামুটি অগ্রগতি অর্জন করেছে।
ব্রাউস আরও বলেন, চলতি বছরের জানুয়ারিতে বরিস পিস্টোরিয়াস প্রতিরক্ষা মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। এটা অবশ্যই স্বস্তির বিষয়। পিস্টোরিয়াস এ পদের জন্য সবচেয়ে যোগ্য ও সেনাবাহিনীকে উৎসাহ দিতে সক্ষম। অন্তত আমাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় এখন ‘সময়োপযোগী পরিবর্তন’ শুরু হয়েছে।
আরও পড়ুন>> রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিণত হচ্ছে চীন-যুক্তরাষ্ট্র ছায়াযুদ্ধে
এদিকে, সম্মিলিত আর্থিক ও সামরিক সহায়তা হিসেবে ইউক্রেনকে ১ হাজার ৩৩৩ কোটি ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্রের পরেই দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। এদিকে, চলতি বছরের ২৫ জানুয়ারি ইউক্রেনে নিজেদের তৈরি লেপার্ড- ২ ট্যাংক সরবরাহের অনুমোদন দেন শলৎজ। কিন্তু এখন পর্যন্ত তারা কিয়েভকে অত্যাধুনিক ওই ট্যাংক পাঠাতে পারেনি।
তবে নতুন বরিস পিস্টোরিয়াসের মন্ত্রীর নেতৃত্বে এ বছর প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়ানোর দৃড় পরিকল্পনা করা হয়েছে। সবেমাত্র বাজেটে প্রতিরক্ষার জন্য বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। এরই মধ্যে তিনি প্রতিরক্ষার জন্য অতিরিক্ত ১ হাজার কোটি ডলার ইউরো দাবি করছেন ও জিডিপির ২ শতাংশ ব্যয় নিশ্চিত করার জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
আরও পড়ুন>> ইউক্রেন যুদ্ধে বদলে গেছে বিশ্ব রাজনীতির হিসাব-নিকাশ
নতুন জার্মান প্রতিরক্ষামন্ত্রীর ভাষ্য, অধিকাংশ প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে না পারলেও যুদ্ধে ইউকে্রনকে জয়ী করতে যা যা করতে হবে, তার সব করবো আমরা। অর্থনৈতিক মন্দার কারণে ও জটিল রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে অনেক কিছুতেই বিলম্ব ঘটছে। তবে খুব শিগগির আমরা সবকিছু ঠিক করে ফেলতে পারবো বলে আশা করি।
সূত্র: দ্য ইকোনমিস্ট
এসএএইচ