চীন কি আসলেই রাশিয়াকে অস্ত্র দেবে?
গত কয়েকদিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলো অভিযোগ জানিয়ে আসছে, রাশিয়াকে প্রাণঘাতী সব অস্ত্র সরবরাহ করছে চীন। অন্যদিকে, পশ্চিমা বিশ্বের এ অভিযোগ শক্তভাবে অস্বীকার করেছে বেইজিং।
এসব উত্তেজনার মধ্যেই যুদ্ধ পরিস্থিতি শান্ত করার প্রস্তাব দিয়েছে চীন। তাই বর্তমান পরিস্থিতিতে মূল প্রশ্ন হয়ে উঠেছে, রাশিয়াকে সমর্থনের পাশাপাশি শান্তি স্থাপনে চীন কি তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পারবে?
চলতি সপ্তাহেই যুক্তরাষ্ট্র দাবি করে, রাশিয়াকে ভারী অস্ত্র সরবরাহ করার পরিকল্পনা করছে চীন। এমনকি, ওয়াশিংটনের ধারণা, বেইজিং এরই মধ্যে মস্কোকে কিছু অস্ত্র দিয়েছে। সেসব অস্ত্র বেসামরিক ও সামরিক দুই উদ্দেশ্যেই ব্যবহার করা যায়। যেমন: ড্রোন ও সেমি-কন্ডাকটর।
আরও পড়ুন>> রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ/ রুশ সেনা প্রত্যাহারে জাতিসংঘে ভোট, বিরত বাংলাদেশ-ভারত-চীন
জবাবে চীন ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলে, আমাদের পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক শীর্ষ কর্মকর্তা ওয়াং ই ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) শীর্ষ কর্মকর্তা জোসেপ বোরেলকে স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন, চীন রাশিয়াকে অস্ত্র সরবরাহ করবে না। এরপরও যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দেশগুলো বেইজিংয়ের বিরুদ্ধে এ ধরনের ভিত্তিহীন অভিযোগ করছে?
ইইউয়ের শীর্ষ কর্মকর্তা জোসেপ বোরেলমি বলেন, ওয়াং আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, আপনারা যখন ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহ করছেন, তখন আমরা রাশিয়াকে অস্ত্র সরবরাহ করছি কি না, তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন কেন? বিশ্লেষকরা বলছেন, এ বাক্যটির মধ্য দিয়ে বোঝা যায়, চীনের দৃঢ় বিশ্বাস এ যুদ্ধে ইন্ধন জোগানোর জন্য পশ্চিমারাই দায়ী।
আরও পড়ুন>> এ বছরই পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করবে রাশিয়া: পুতিন
ইস্ট চায়না নর্মাল ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক অর্থনীতির বিশেষজ্ঞ ঝ্যাং শিন বলেন, যুদ্ধরত কোনো এক পক্ষের কাছে অস্ত্র পাঠানো লড়াই টিকিয়ে রাখার প্রচেষ্টা হিসাবে বিবেচনা করা হয়। এখন পর্যন্ত এটাই চীনের অবস্থান।
তবে বেইজিং শেষ পর্যন্ত মস্কোকে অস্ত্র সরবরাহ করবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। কারণ এর সঙ্গে চীনের স্বার্থ জড়িত রয়েছে। চীন যদি আসলেই এ ধরনের কোনো পদক্ষেপ নেয়, তাহলে সংঘাত আরও বাড়তে পারে। সেসময় নিষেধাজ্ঞা ও পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি ঘটতে পারে চীনের।
আরও পড়ুন>> ইউক্রেন যুদ্ধে বদলে গেছে বিশ্ব রাজনীতির হিসাব-নিকাশ
ইউরোপে বাণিজ্য ঘাটতি চীনের জন্য ব্যাপক ক্ষতিকর কারণ হবে। কারণ ইইউ ও যুক্তরাষ্ট্র এখনো চীনের অন্যতম শীর্ষ বাণিজ্য অংশীদার। আর চীনের সঙ্গে পশ্চিমাদের বাণিজ্য ব্যাহত হলে, তার ফলাফল পুরো বিশ্বের জন্য আরও বেশি খারাপ হতে পারে।
এতে বিশ্বব্যাপী উত্তেজনাও উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যাবে ও সম্ভবত মিত্রদেশগুলো আরও দ্রুত মার্কিন বলয়ের দিকে অগ্রসর হবে। ফলস্বরূপ যুক্তরাষ্ট্রকে চ্যালেঞ্জ জানাতে গিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোকে কাছে টানার চীনা কৌশলটি নস্যাৎ হয়ে যাবে।
আরও পড়ুন>> ইউক্রেন-রাশিয়ার শান্তি আলোচনার আহ্বান চীনের
পর্যবেক্ষকদের মতে, যেটা ঘটার সম্ভাবনা বেশি তা হলো, রাশিয়ার প্রতি চীন পরোক্ষ সমর্থন অব্যাহত রাখবে কিংবা বাড়িয়ে দেবে। আবার অনেকের মতে, অতি ঘণিষ্ঠ মিত্রের জন্য চীন যেকোনো কিছু করতে প্রস্তুত।
সূত্র: বিবিসি
এসএএইচ