শ্রম বিক্রির হাটজুড়ে হতাশা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৮:১৬ এএম, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

ধৃমল দত্ত, কলকাতা

মাত্র ৩৫০ থেকে ৫০০ রুপিতে পাওয়া যাচ্ছে আস্ত একজন জলজ্যান্ত মানুষ। পছন্দমতো বেছে নেওয়া যাবে নারী কিংবা পুরুষ। আধুনিক যুগে এমন কথা অবাস্তব মনে হলেও পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বারাসাতে চাপাডালি এলাকায় প্রতিদিন বসে অনেকটা এ ধরনেরই একটি হাট। তবে এই হাটে সরাসরি মানুষ নন, বিক্রি হয় মূলত তাদের শ্রম। ক্রেতারা এসে দর কষাকষি করে এসব মানুষকে কাজ করানোর জন্য নিয়ে যান যেকোনো জায়গায়। অর্থের বিনিময়ে নিজের শ্রমকে বিক্রি করতে প্রতিদিনই চাপাডালির মোড়ে হাজির হন শ্রমজীবী মানুষেরা।

হালকা শীত ও কুয়াশার চাদরে মোড়া চারদিক। ঘড়ির কাঁটায় তখন ভোর ৫টা। সূর্যের আলো সেভাবে ফোটেনি। কিন্তু তাতে কী! শীত হোক বা গরম, ঝড় কিংবা বৃষ্টি- শ্রম বিক্রি করতে হাটে প্রতিদিন ভোরে হাজির হন দরিদ্র শ্রমজীবী মানুষেরা। এই হাটে আর কোনো পণ্য নেই, বিকিকিনি চলে কেবল মানুষের শ্রম।

jagonews24

কেউ আসেন উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বনগাঁ থেকে, কেউ আবার সুদূর মুর্শিদাবাদ থেকে। ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই বসে থাকেন শ্রম বিক্রির আশায়। ভাগ্য ভালো থাকলে কোনো ক্রেতা এসে দরদাম করে কিনে নিয়ে যান। অনেক সময় ক্রেতা না পেয়ে খালি হাতেই ফিরে যেতে হয় ঘরে। শুধু পুরুষ নন, নারীরাও ঠিক এভাবে নিজেদের শ্রম বিক্রি করতে ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকেন চাপাডালির হাটে।

সকাল থেকে কাজের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকা ফাতেমা বিবি বলেন, আমরা ১২ মাস কাজ করি। তাই রোজই আসি এই হাটে। আমার একটাই মেয়ে। তার বিয়ে দিয়েছি। এখন আমি একা মানুষ, খেটে খাই। পরিবারে কাজ করার মতো আর কেউ নেই। বাধ্য হয়েই কাজ করতে হয়। না করলে পেট চলবে কী করে। ভীষণ কষ্ট হয়! কিন্তু কী করবো? পেটের জন্য কষ্টটা সহ্য করতে হয়!

jagonews24

হাটে ক্রেতার আশায় দাঁড়িয়ে থাকা জহির মোল্লা বলেন, প্রতিদিন সকালে এখানে আসতে হয়। কোনোদিন বিক্রি হই, কোনোদিন হই না। যেদিন বিক্রি হই, সেদিন যে ক্রেতা কিনতে আসে, তার সঙ্গে চলে যাই।

তিনি অভিযোগের সুরে বলেন, অনেকে ন্যায্য দাম দেয় না। কেউ কেউ কাজ করিয়ে পয়সাই দেয় না। এভাবেই চলছে।

jagonews24

প্রায় ২০ বছর এই পেশার সঙ্গে যুক্ত মধু ঘোষ জানান, রোজ সকালে আমরা (কাজের জন্য) এখান থেকে বিক্রি হয়ে যাই। আজ এই মাত্র এলাম। কাজের বাজার খুব খারাপ। এখনো বিক্রি হতে পারিনি।

তিনিও অভিযোগ করে বলেন, ঠিকভাবে কাজ হয় না। কাজের ন্যায্য পারিশ্রমিক পাওয়া যায় না। এক কাজের কথা বলে নিয়ে গিয়ে অন্য কাজ করায়। খুব কষ্টে রয়েছি আমরা।

কেএএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।