বিবিসির দিল্লি-মুম্বাই কার্যালয়ে অভিযান
ভারতের দিল্লি ও মুম্বাইয়ে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির কার্যালয়ে অভিযান চালিয়েছে দেশটির কর কর্মকর্তারা। মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) স্থানীয় সময় বেলা সাড়ে ১১টা থেকে বিবিসির ওই দুই কার্যালয়ে একযোগে অভিযান শুরু হয়।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে নিয়ে তথ্যচিত্র প্রকাশের কয়েক সপ্তাহ পর এ অভিযান চালানো হলো। বার্তা সংস্থা এএফপি ও ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া এ তথ্য নিশ্চিত করে।
আরও পড়ুন>> দ্য মোদী কোয়েশ্চেন/ বিবিসির তথ্যচিত্র নিয়ে কতটা চাপে ভারতের প্রধানমন্ত্রী
অভিযানের সময় বিবিসি কর্মীদের কাছ থেকে মোবাইল ফোনসহ ব্যক্তিগত জিনিসপত্র জব্দ করেন কর কর্মকর্তারা। এ ঘটনায় দিল্লির সাংবাদিক মহলে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে বলে জানা যায়।
এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়, পুলিশ দিল্লির বিবিসি ভবন ঘেরাও করে রেখেছে। তাছাড়া ভবনটিতে যাতে কেউ প্রবেশ করতে বা সেখান থেকে কেউ যাতে বের না হতে পারেন, সেজন্য বাইরেও পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভারতীয় এক কর কর্মকর্তা জানান, তারা বিবিসির ব্যবসায়িক কার্যকমের কাগজপত্র খুঁজেছেন। মূলত করফাঁকির অভিযোগে বিবিসি কার্যালয়ে অভিযান চালানো হয়েছে। তবে বিবিসির এক কর্মকর্তা এএফপিকে বলেন, কর কর্মকর্তারা তাদের সব টেলিফোন ও মোবাইল ফোন বাজেয়াপ্ত করেছেন।
আরও পড়ুন>> মোদীকে নিয়ে বিবিসির তথ্যচিত্র/ প্রচার নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে আপিল আমলে নিলেন ভারতের সুপ্রিম কোর্ট
এদিকে তল্লাশির এ ঘটনায় চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ভারতের প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দল কংগ্রেস। দলটির অফিশিয়াল টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে এক টুইটে বলা হয়, প্রথমে বিবিসির ডকুমেন্টারি নিষিদ্ধ করা হলো। এখন বিবিসি কার্যালয়ে অভিযান চালালো আয়কর বিভাগ। এটি মূলত একটি অঘোষিত জরুরি অবস্থা।
কংগ্রেসের প্রভাবশালী নেতা জয়রাম রমেশ এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, ‘বিনাশকালে বুদ্ধি নাশ’। কেন্দ্রীয় বিজেপি সরকারের দিকে আঙুল তুলেছেন তিনি। তার দাবি, আদানিসহ বিভিন্ন ইস্যুতে কার্যত কেন্দ্রীয় বিজেপি সরকার তাদের স্বরূপ প্রকাশ করে ফেলেছে। সেটা নিয়ে বেশকিছু গণমাধ্যম খবর প্রকাশ করার কারণে কেন্দ্রীয় সরকারের রোষানলে পড়েছে তারা।
আরও পড়ুন>> মোদীবিরোধী বিবিসির তথ্যচিত্র বন্ধে টুইটার-ইউটিউবকে নির্দেশ
চলতি বছরের ১৭ জানুয়ারি বিবিসি- ২ নামের চ্যানেল ‘ইন্ডিয়া: দ্য মোদী কোশ্চেন’শীর্ষক তথ্যচিত্রটি সম্প্রচার করা হয়। সেখানে ২০০২ সালে গুজরাটে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা চলাকালে মোদীর ভূমিকা তুলে ধরা হয়। সম্প্রচারের পরপরই তথ্যচিত্রটি ভারতজুড়ে ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দেয়।
ভারত সরকার তথ্য প্রযুক্তি আইনের অধীনে জরুরি ক্ষমতা ব্যবহার করে এরই মধ্যে তথ্যচিত্রটির লিংক শেয়ার করা ভিডিও ও টুইট ব্লক করেছে। যদিও এখনো ওই তথ্যচিত্রটি ভারতে নিষিদ্ধ করা হয়নি, তবে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তা ব্লক করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে টাইমস অব ইন্ডিয়া।
আরও পড়ুন>> মোদীবিরোধী তথ্যচিত্র দেখাতে চাওয়ায় দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘর্ষ
২০০২ সালের গুজরাট দাঙ্গায় অন্তত ১ হাজার জন প্রাণ হারান, যাদের অধিকাংশই ছিলেন মুসলিম। প্রায় এক ঘণ্টার ওই তথ্যচিত্রের সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় হলো, গুজরাট দাঙ্গা নিয়ে যুক্তরাজ্যের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রীর একটি গোপন প্রতিবেদন। ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত, অর্থাৎ দাঙ্গার সময় ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেব দায়িত্ব পালনকারী জ্যাক স্ট্র প্রতিবেদনটি তৈরি করার নির্দেশ দিয়েছিলেন।
তথ্যচিত্রে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে জ্যাক স্ট্র নিজেই এ কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আমরা একটি দল গঠন করেছিলাম, যেটি গুজরাটে গিয়ে স্বাধীনভাবে দাঙ্গার পেছনের কারণগগুলো তদন্ত করে। পরে দলটি বিস্তারিত প্রতিবেদন জমা দিয়েছিল।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া
এসএএইচ