দ্য ইকোনমিস্টের প্রতিবেদন
বিদেশে বেশি বেতনের চাকরি খুঁজছেন জাপানিরা
অডিও শুনুন
জাপানের কানাগাওয়া শহরে জন্ম নেওয়া আশিহারা মারিনার পৃথিবী ঘুরে দেখার ইচ্ছা বহুদিনের। গত এপ্রিলে হঠাৎ একটি সুযোগ পেয়ে যান। সেটি আর হাতছাড়া করেননি। জাপান সরকারের ‘ওয়ার্কিং হলিডে’ কর্মসূচির মাধ্যমে অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি জমান ২৫ বছর বয়সী এ তরুণী। এই কর্মসূচিতে অস্ট্রেলিয়ায় এক বছরের ভিসা পান অনূর্ধ্ব ৩১ বছর বয়সীরা।
অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে প্রথমে একটি খামারে টানা চার মাস কাজ করেছেন আশিহারা। এখন সিডনিতে কাজ করছেন বারিস্তা হিসেবে।
একসময় অ্যাডভেঞ্চারের জন্য যে সফর শুরু হয়েছিল, এখন তার সঙ্গে অর্থনৈতিক মূল্য যোগ হয়েছে। এখনকার চাকরিতে আশিহারার ন্যূনতম বেতন ঘণ্টায় ২১ দশমিক ৩৮ অস্ট্রেলীয় ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় দেড় হাজার টাকার বেশি), যা তার জাপানের বেতনের প্রায় দ্বিগুণ। আগে টোকিওতে অফিসে কাজ করে আশিহারা যে টাকা পেতেন, অস্ট্রেলিয়ায় তার চেয়ে বেশি আয় করছেন পার্ট-টাইম চাকরি করেই।
আরও পড়ুন>> ভাষা জানলে জাপানে কাজের অভাব নেই
আশিহারার মতো অভিবাসী জাপানির সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। ২০২২ সালে অস্ট্রেলিয়ার ওয়ার্কিং হলিডে ভিসার জন্য জাপানিদের আবেদন দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে। বিদেশে পড়াশোনার এজেন্টরা ‘ডেকাসেগি রিউগাকু’ (বিদেশে পড়াশোনার সময় অর্থ উপার্জন) শব্দটি ব্যবহার করে বিজ্ঞাপন দিতে শুরু করেছে।
ক্যারিয়ার পরামর্শক হিরাওয়াতারি জুনিচির কথায়, আপনি জাপানের মতো ঠিক একই কাজ করে অন্য দেশে দ্বিগুণ উপার্জন করতে পারেন। তার মতে, জাপানি তরুণরা শক্তিশালী মুদ্রায় অর্থ উপার্জনে বেশি আগ্রহী হয়ে উঠছে।
জাপানি মুদ্রা ইয়েনের ঐতিহাসিক দুর্বলতা সম্ভবত এই প্রবণতা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। তার সঙ্গে রয়েছে, জাপানি মজুরির দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা। গত তিন দশকে জাপানে মজুরি বেড়েছে খুব সামান্যই। দেশটিতে গড় বার্ষিক মজুরি ৩৯ হাজার ৭০০ মার্কিন ডলার (৪১ লাখ ৬৮ হাজার টাকা প্রায়), যা ওইসিডিভুক্ত দেশগুলোর গড় ৫১ হাজার ৬০০ ডলারের তুলনায় অনেক কম।
আরও পড়ুন>> ব্যাগের ওজন বেশি, পিঠে ব্যথার অভিযোগ জাপানি শিশুদের
জাপানের জ্যেষ্ঠতাভিত্তিক কর্মসংস্থান ব্যবস্থায় সদ্য স্নাতক পাস চাকরিপ্রত্যাশীরা মাসে বড়জোর ২ লাখ ২০ হাজার ইয়েন (১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা প্রায়) উপার্জনের আশা করতে পারেন।
কম বেতনের চাকরিতে হতাশ তরুণ জাপানিরা। প্রতীকী ছবি
কম বেতনের পাশাপাশি জাপানের অনমনীয়, সময়োপযোগী করপোরেট সংস্কৃতির ওপরও তরুণদের অসন্তোষ বাড়ছে। অলাভজনক সংস্থা নিপ্পন ফাউন্ডেশনের এক জরিপে দেখা গেছে, দেশটির মাত্র ১৪ শতাংশ তরুণ বিশ্বাস করেন, তাদের দেশের ভবিষ্যৎ ‘উন্নততর’ হবে।
আরও পড়ুন>> কর্মীদের বেতন বাড়াবে জাপানের অধিকাংশ কোম্পানি
জাপানের জনসংখ্যা এমনিতেই কমছে, রয়েছে তীব্র কর্মী সংকটও। এ অবস্থায় মেধা হারানো দেশটির জন্য গুরুতর সমস্যা হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করছেণ বিশেষজ্ঞরা।
কারও কারও আশঙ্কা, অভিবাসী কর্মীদের আকৃষ্ট করার প্রতিযোগিতায় দক্ষিণ কোরিয়া-তাইওয়ানের মতো প্রতিবেশীদের তুলনায় পিছিয়ে পড়তে পারে জাপান। টোকিওর হিতোৎসুবাশি ইউনিভার্সিটির ইমেরিটাস অধ্যাপক নোগুচি ইউকিও হতাশার সুরে বলেন, কাজের জায়গা হিসেবে আকর্ষণ হারাচ্ছে জাপান।
অবশ্য বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটি এখনো বহু দিক দিয়েই আকর্ষণীয়। সাম্প্রতিক মূল্যস্ফীতি প্রবণতায় অন্য উন্নত দেশগুলোর তুলনায় জাপানের অবস্থা যথেষ্ট সহনীয় ছিল। দেশটিতে আবাসন খরচ, খাবারের দাম বেশ সাশ্রয়ী। রয়েছে নিরাপত্তা এবং পরিচ্ছন্নতার নিশ্চয়তাও।
ওচিয়াই ইউরি নামে ২৪ বছর বয়সী এক তরুণী বলেন, জাপানে সব কিছু সুশৃঙ্খল এবং সুন্দরভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়। ট্রেন সময়মতো আসে, গ্রাহক সেবাও দারুণ।
কিন্তু এক বছর আগে অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি জমানো ইউরি কি তাহলে টোকিওর পুরোনো চাকরিতে ফিরতে চান? উত্তর, ‘না’! এই মুহূর্তে অল্প বেতনের চাকরিতে ফেরার কোনো ইচ্ছাই তার নেই।
কেএএ/